থাইল্যান্ডের ‘কিং অব চাকা পাত’ আম চাষ হচ্ছে বগুড়ায়

পারভীন লুনা, বগুড়া: বগুড়ায় চাষ হচ্ছে থাইল্যান্ডের ‘কিং অব চাকা পাত’ উন্নত জাতের আম। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মহিপুর বুড়িতলাপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের নার্সারিতে এ আম চাষ হচ্ছে। শিগগিরই বাণিজ্যিক পদ্ধতিতে এ আমের চাষ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশা রফিকুল ইসলামের।

সরেজমিনে রফিকুল ইসলামের বৈশাখী নার্সারিতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট গাছে ঝুলে আছে লালচে রঙের আম। আমের সৌন্দর্য যে কাউকে আকৃষ্ট করবে। নার্সারিতে আসা লোকজনের কৌতূহলের শেষ নেই এ আম সম্পর্কে।

জানা যায়, ২৫ বছর আগে তিনি সখের বসে নার্সারি ব্যবসায় যুক্ত হয়ে পড়েন। বর্তমানে ১৩ একর জায়গায় তিনি নার্সারি গড়ে তোলেন। সবসময় তিনি চান নতুনত্ব কিছু চাষ করতে। নতুন কোনো জাতের সন্ধান পেলেই সংগ্রহ করতে ছুটে যান তিনি। জাত সংগ্রহ করেই ক্ষান্ত হন না তিনি, সরকারি প্রতিষ্ঠান পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বগুড়ার গবেষকদলকে সঙ্গে নিয়ে অংশগ্রহণমূলক গবেষণায় যুক্ত থেকে কাজ করেন সব সময়। তিনি পল্লী উন্নয়ন একাডেমির একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা।

পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বগুড়ার সঙ্গে যেন তার নাড়ির টান। প্রথম প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন সেখান থেকেই। এর অংশ হিসেবে ২০১৭ সালে তিনি ‘কিং অব চাকা পাত’ আমের চারা নিয়ে আসেন ঢাকার সাভারের এক নার্সারি থেকে। প্রথমে চারটি চারা নিয়ে এসে সেই চারটি চারা থেকে সায়ন সংগ্রহ করে গ্রাফটিং করে অনেক চারা তৈরি করেন তিনি। সেই গাছে ক্রমান্বয়ে আমের মুকুল, ফল আসে এবং এর গুণগতমান পরীক্ষা করতে থাকেন।

চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, একটা ২-৩ বছর বয়সী আম গাছ থেকে ৮-১০টি করে আম পান, আমের ওজন হয় ১ কেজির মতো। এমন করে ১০টি গাছ থেকে তিনি ৮৬ কেজির মতো আম পান। আমের রঙ কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও আম পাকার আগে পুরোপুরি লাল বর্ণ ধারণ করে, যা সব মানুষকে অন্য আমের থেকে বেশি আকৃষ্ট করবে বলে তিনি ধারণা করেন।

তিনি জানান, আমের গড় ওজন ৮০০-৯০০ গ্রামের উপরে হয়ে থাকে। তবে আমের ওজন নির্ভর করে গাছের বয়স ও একটি গাছে কতটি আম ধরেছে তার ওপর।

রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ায় এবং অসময়ে এ আম পাওয়া যায় বলে এ আমের দামও ভালো পাওয়া যায়। এ আম পাকতে শুরু করে জুলাই মাসের মাঝের দিকে। এক কেজি আমের মূল্য ২০০-৩০০ টাকার মতো। আর এ আমের চারার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সাইজ ও বয়স অনুযায়ী, চারা বিক্রি করেন তিনি ২০০-২৫০ টাকায়। দেশের বিভিন্ন জেলার নার্সারি ব্যবসায়ীরা তার কাছ থেকে এ চারা নিয়ে যান।

রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, তাকে সার্বিক সহযোগিতা করছেন পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বগুড়া। তিনি পল্লী উন্নয়ন একাডেমি থেকে বিভিন্ন রকম পরামর্শ পেয়ে থাকেন।

এ বিষয়ে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বগুড়ার মহাপরিচালক খলিল আহমদ (অতিরিক্ত সচিব) বলেন, দেশে শিক্ষিত বেকার ছেলেমেয়েরা যাতে স্মার্ট কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠত হতে পারে পাশাপাশি এসব আমের রপ্তানি বাজারে সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কাজ করে যাচ্ছে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বগুড়া।

একাডেমির উপপরিচালক রেবেকা সুলতানা বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বিদেশি ১৫টি বিভিন্ন জাতের আমসহ কিং অব চাকা পাত আম নিয়ে গত দুই বছর ধরে গবেষণা শুরু করেছি। আমাদের গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশে স্মার্ট কৃষি উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য বিদেশি জাতের আম চাষের সম্ভাব্যতা যাচাই, পাশাপাশি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ  প্রদান করা।

তিনি বলেন, আমরা সফলতার আশা দেখতে পাচ্ছি। এ আম বাণিজ্যিক আকারে চাষ হলে এ অঞ্চলের কৃষি উদ্যোক্তার লাভবান হবে। তবে চাষের আগে অবশ্যই চাষ সম্পর্কিত খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নেয়া বা অভিজ্ঞতা অর্জন প্রয়োজন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০