রাজশাহী ডেইরি খামারিদের লোকসান ১০০ কোটি টাকা

মেহেদী হাসান, রাজশাহী
করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে মহামারি রোধে দফায় দফায় রাজশাহীতে দেয়া হয়েছে লকডাউন। লকডাউন পরিস্থিতি বারবার সামাল দিতে ৪ মাসে রাজশাহীর ডেইরি খামারিদের লোকসান হয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা। সেই থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি ডেইরি খামারিরা। টানা আড়াই বছর ধরে ৩০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করেছে দুধের দাম। বর্তমানে সেই মোট ক্ষতির পরিমাণ শতকোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এ অবস্থায় টিকে থাকতে খাদ্যের দাম কমিয়ে দুধের দাম বাড়ানোর দাবি রাজশাহীর খামারিদের।
রাজশাহী ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, করোনাকালে রাজশাহীর ৯টি উপজেলা ছাড়াই শুধুমাত্র মেট্রো এলাকার চার মাসে আড়াইশ’ ডেইরি খামারির ক্ষতি হয়েছে ১২ কোটি টাকার বেশি। মহামারির শুরু থেকেই এসব খামারে উৎপাদিত প্রায় ৩০ হাজার লিটার দুধের বেশিরভাগই স্বল্পমূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তারা। প্রতি লিটার দুধ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হয়েছেন=। সবকিছুর দাম বাড়লেও সে তুলনায় দুধের দাম বাড়েনি। বর্তমানে খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে অল্প দামে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন খামারিরা। পরিমিত খাবার দেয়ার অভাবে বাচ্চা প্রসব ও দুধ উৎপাদন কমে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ওপরে।
খামারি ও ডেইরি অ্যাসোসিয়েশন বলছে, সবচেয়ে বেশি বেড়েছে দানাদার খাদ্যের দাম। সাথে দ্বিগুণ বেড়েছে খড়ের দাম। গমের ভুসি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫০ থেকে ২০০০ টাকা বস্তা, ভুট্টার গুঁড়া ১৭০০ টাকা বস্তা, যব ৫০ টাকা কেজি, ধানের কুড়া ৭৫০ টাকা বস্তা, খৈল ৪৫০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা বস্তা, খেসারির ভুসি ১৬০০ টাকা (৩০ কেজি) বস্তা এবং ঘাস প্রতি আঁটি ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে কাউফিড প্রতি বস্তা ১৫০০ টাকা। অ্যাঙ্কর ডালের ভুসি ১২০০ টাকা বস্তা দরে কিনতে হচ্ছে। ধানের খড় কিনতে হচ্ছে প্রতি আঁপটি ৫/৬ টাকা দরে। এহেন পরিস্থিতিতে দুধের কেজি সর্বনি¤œ ৮০ টাকা করা হোক। এছাড়া ডিলারের কাছে বিশাল অঙ্কের টাকা বাকি জমায় গরু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক খামারি।
রাজশাহী ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি সাথী আক্তার জানান, তার খামারে ২৩টি গরুর মধ্যে বর্তমানে দুধ দিচ্ছে ৮টি। প্রতিদিন ৯০ থেকে ৯৫ লিটার দুধের উৎপাদন খরচ আগের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। দুধ বিক্রি করছেন ৭০ টাকা লিটার হিসেবে। ‘মিষ্টি বাড়ি’ মিষ্টির দোকানে এখনও পাইকারিতে ৫০ টাকা লিটার হিসেবে বিক্রি করতে হচ্ছে।
নগরীর কাটাখালী শ্যামনগর এলাকার খামারি ও রাজশাহী ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রবিউল করিম জানান, লকডাউনের শুরু থেকে তার লোকসান হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা। বাকিতে দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হয়ে পরে পাননি টাকা। বছরে প্রায় ১৮ লাখ টাকা আয় হলেও এবার ১০ লাখ টাকাও আয় করতে পারেননি। রাজশাহী অঞ্চলের জন্য সরকারিভাবে দুধ পাস্তুরাইজেশনের কোনো ব্যবস্থা নেই যে, দাম কমে গেলে সে সময় খামারিরা তাদের উৎপাদিত পণ্য স্টোরেজ করবেন।
নগরীর বনগ্রাম এলাকার মকবুল, বারো রাস্তার মোড় এলাকার ফরিদ, টিকাপাড়া এলাকার মিনসহ অন্তুত ১০ জন খামারি জানান, তারা দুধের দাম সঠিকভাবে পাচ্ছেন না। তাদের দাবি, দুধের দাম ৮০ টাকা হিসেবে বেঁধে দেয়া হোক। সঠিক পরিকল্পনায় কীভাবে ডেইরি শিল্পকে বাঁচানো যায়, তার নকশা আঁকতে বলছেন খামারিরা।
এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, খামারিরা লোকসান গুনছেন- এ বিষয়টি আমরা উপলব্ধি করতে পারছি। তবে আমরা তেমন কিছুই করতে পারব না। খামারিদের দুধ উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলে তারা দাম বাড়াবে। দুধের দাম ৮০ টাকা হিসেবে বেঁধে দেয়ার কোনো উপায় আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, খামারিদের সমস্যা তাদেরই সমাধান করতে হবে। তারা দাম বাড়াতে পারেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) তথ্য অনুযায়ী, করোনাকালে লকডাউনে প্রতিদিন ১২০ লাখ থেকে ১৫০ লাখ লিটার দুধ অবিক্রীত থেকেছিল। ফলে প্রায় ৫৭ কোটি টাকার ক্ষতি হয় প্রতিদিন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০