আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পদ্মা সেতু

ইয়াকুব আলী: পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এপি, এএফপি, আল জাজিরা, বিবিসি বাংলাসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর মূলধারার গণমাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে পদ্মা সেতু নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে। আল জাজিরার খবরে বলা হয়,  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তাল পদ্মা নদীর ওপর একটি যুগান্তকারী সেতু উদ্বোধন করেছেন, যা দেশের অনুন্নত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকে সংযুক্ত করবে। এ যাবৎ বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু যা ‘জাতীয় গৌরবের প্রতীক’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সেতুটি বাংলাদেশের মেগা প্রকল্পগুলোর একটি এবং নিজ তহবিল থেকে বাংলাদেশ সরকার সেতু নির্মাণ ব্যয় বাবদ সব অর্থ জোগান দিয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগের পর ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক ১.২ বিলিয়ন ডলার ঋণচুক্তি থেকে নিজকে প্রত্যাহার করে নেয়। এডিবি ও জাইকাও সরে যায়। হাসিনা, যিনি সেতুটি নির্মাণে নেতৃত্ব দিয়েছেন, ঘোষণা করেছিলেন যে, তার সরকার এ প্রকল্পে নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থায়ন করবে। বহুপক্ষীয় দাতাদের সহায়তা ছাড়া এ ধরনের বিপুলায়তনের অবকাঠামো নির্মাণের কোনো নজির না থাকায় তার এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং দেশের অর্থনীতিবিদদের সংশয়বাদের দিকে ঠেলে দেয়। ‘কেউ মনে করে আমরা তাদের মুখাপেক্ষী থাকব, কিন্তু জাতির পিতা আমাদের আত্মমর্যাদার গুরুত্বের বিষয়টি শিখিয়েছেন।’ আল জাজিরার প্রতিবেদনে পদ্মা সেতুকে ‘ইঞ্জিনিয়ারিং বিস্ময়’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলামকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, পদ্মা নদীর মাওয়া পয়েন্টে প্রতি ২০ সেকেন্ডে যে পানি প্রবাহিত হয়, তা ঢাকা শহরে প্রতিদিন ব্যবহƒত মোট পানির সমান।

নিউইয়র্কভিত্তিক সংবাদ সংস্থা ব্লমবার্গের এক প্রতিবেদেনের শিরোনাম ‘এক দশক আগে বিশ্বব্যাংকের ছেড়ে যাওয়া সেতু উšে§াচন করেছে বাংলাদেশ’। প্রকল্পটিকে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, কাজ শুরু হওয়ার আট বছর পর, হাসিনা শনিবার পদ্মা নদীর ওপর ছয় কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ সেতুটির উদ্বোধন করেন। এটি ৮ কোটি মানুষকে যুক্ত করবে  যারা দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক। আরও বলা হয়, ৫০ বছর আগে সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশ ছিল দারিদ্র্যের সমার্থক। মাথাপিছু জিডিপি ও জেন্ডার ইকুইটির মতো গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে বৃহৎ ও অপেক্ষাকৃত ধনী দেশকে ছাড়িয়ে যাওয়ায় দক্ষিণ এশীয় এই ক্ষুদ্র দেশটির এখন বন্দনা করা হচ্ছে। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটবে বাংলাদেশের। দেশটির জিডিপিতে সেতুটি ১ শতাংশের বেশি পয়েন্ট বৃদ্ধি করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ‘যখন আমি আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করি, তখন বাংলাদেশের অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। আমি তাদের ভুল প্রমাণ করেছি,’ বুধবার রাজধানী ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেন, ‘দাতাদের সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়া বাংলাদেশ কিছু করতে পারে না এমন ধারণা উবে গেছে।’”

বিবিসি বাংলা নিয়মিতভাবে পদ্মা সেতুর ওপর সংবাদ পরিবেশন করেছে। সেতুর বিভিন্ন দিক নিয়েই এসব রিপোর্টে আলোকপাত করা হয়েছে। ভয়েস অব আমেরিকার খবরে বলা হয়, বিশ্বব্যাংক এবং অন্য ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলো প্রকল্পটি থেকে সরে দাঁড়ানোর পরে নিজস্ব  অর্থায়নের সরকার  সেতুটি নির্মাণ করে। কানাডার প্রসিকিউটররা শেষ পর্যন্ত কোম্পানির নির্বাহীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে যখন একটি আদালত তাদের বিরুদ্ধে কিছু ওয়্যারটেপ প্রমাণ অগ্রহণযোগ্য বলে রায় দেয়। ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের মন্তব্যকে উদ্ধৃত করেছে ভয়েস অব আমেরিকা বলেছে, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে জনসমক্ষে বিশ্বব্যাংকের মতো বহুপক্ষীয় সংস্থাসহ সব দাতাগোষ্ঠীকে আমাদের দৃঢ় মনোবল দেখিয়ে দেয়া গেল।’ আনাম, যিনি হাসিনার কট্টর সমালোচক, লিখেছেন, বহু দেশ তাদের নিজের টাকায় সেতু বানায়। কিন্তু এই সেতু নির্মাণ বাংলাদেশের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ, কারণ এর মধ্য দিয়ে দান-খয়রাতের ওপর নির্ভরশীলতার যে ভাবমূর্তি আমাদের ছিল তা চিরতরে মুছে গেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সেতুটি দেশের দারিদ্র্যপীড়িত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সরাসরি প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দলের রাজনৈতিক সমর্থন বেশি। পদ্মা সেতু এ এলাকার মানুষের ভ্রমণ সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেবে। সেতুটি চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড তৈরি করেছে এবং বেইজিং এটিকে চীন-বাংলাদেশ সহযোগিতার একটি মাইলফলক হিসেবে দেখে। চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম এটিকে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিসিয়েটিভের (বিআরআই) অংশ হিসেবে দাবি করার চেষ্টা করেছে, যা বাংলাদেশ সরকার এ সপ্তাহের শুরুতে খারিজ করে দিয়েছে। দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার শক্তিশালী রিজার্ভের কারণে চাঙা বাংলাদেশ সরকার এর আগে সেতু নির্মাণে চীনের ঋণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল।

এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড অবকাঠামো উদ্যোগের সরাসরি অংশ না হলেও, চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের বিবৃতির ভাষ্যমতে বেইজিং পদ্মা সেতুকে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে দেখছে। চায়না রেলওয়ে গ্রুপ বলেছে, পদ্মা সেতুতে পরবর্তীতে একটি রেল নেটওয়ার্ক থাকবে, যা অন্যান্য বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের সঙ্গে সংযোগ ঘটাবে এবং এটি চীন এবং প্যান-এশীয় রেল নেটওয়ার্কের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ হিসেবে কাজ করবে। এপির খবরে আরও বলা হয়, অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন প্রতি বছর অতিরিক্ত ১.৩ শতাংশ বৃদ্ধি করবে, যা ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার জিডিপির বাংলাদেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধির সঙ্গে যোগ হবে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ২০২১-২২ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৯ শতাংশ এবং ২০২২ সালে তা ৭.১ শতাংশে উন্নীত হবে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সেতু নির্মাণে ৪ হাজারের বেশি প্রকৌশলী সম্পৃক্ত ছিলেন। পানির নিচের পাইলগুলো ১২২ মিটার (৪০০ ফুট) গভীরে প্রোথিত, যা একটি বিশ্ব রেকর্ড। এছাড়া সেতুর জন্য পিলার লেগেছে ৪১টি। পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগগুলো কানাডার অন্টারিওতে একটি সুপিরিয়র কোর্টে গিয়েছিল, যা ২০১৭ সালে সেতুর নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত একটি আন্তর্জাতিক ঘুষের মামলায় কানাডিয়ান সংস্থা এসএনসি-লাভালিনের তিনজন প্রাক্তন শীর্ষ নির্বাহীকে অভিযোগ থেকে খালাস দেয়।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) পরিবেশিত সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পোস্ট। এছাড়া এপির খবর পরিবেশন করে মধ্যপ্রাচ্যের দৈনিক খালিজ টাইমস। এতে বলা হয়, দেশের দীর্ঘতম সেতু রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলার মধ্যে দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে। যুক্তরাজ্যের দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্টও ‘বাংলাদেশ দীর্ঘ সেতুর উদ্বোধন উদ্যাপন করতে যাচ্ছে’ শিরোনামে এপির রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে।

আরব নিউজের শিরোনাম করা হয়েছে: ‘বাংলাদেশ ৩.৬ বিলিয়ন ডলারে নির্মিত পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেছে’। সৌদি আরবের দৈনিক আরব নিউজের খবরে বলা হয়, ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের পদ্মা সেতু-যা নদীর দুই তীরকে সংযুক্ত করেছে এবং যে নদীর নামে সেতুর নামকরণ করা হয়েছে-ঢাকাকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। রাজধানী এবং বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মংলার মধ্যে দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার কমিয়ে দিয়েছে এই সেতু। ঢাকা-ভিত্তিক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুরকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে যে যাত্রায় দুই থেকে তিন দিন লাগত তা এখন কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শেষ করা যেতে পারে। সেতুটি নির্মাণে আনুমানিক ৩.৬ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে, যা সবই অভ্যন্তরীণ তহবিল থেকে জোগান দেয়া হয়েছে। ‘সেতুটি বাংলাদেশের জনগণের। এটি আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, আমাদের সাহস, আমাদের ধৈর্য এবং আমাদের অধ্যবসায়কে প্রমাণ করে,’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে প্রায় ৩৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে মাওয়ায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। আহসান মনসুর বলেছেন, সেতুটি বাংলাদেশের জন্য একটি ‘আইকনিক বিনিয়োগ’ এবং এটি দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবে।

ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পরিণত বয়সে উপনীত হয়েছে। ২৫ জুন শনিবার পদ্মা নদীর ওপর ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক-রেল সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন পরিপক্কতার গল্প হিসেবেই এসেছে। হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছে। পদ্মা সেতুকে একটি যুগান্তকারী প্রকল্প বলে অভিহিত করেছে। প্রতিবেদনে পদ্মা সেতুর বিস্তারিত বিবরণ  উপশিরোনামে উল্লেখ রয়েছে: সেতুটি ঢাকা ও  ভারতের কলকাতার মধ্যে যাতায়াতের সময় প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনবে। হিন্দুস্তান টাইমস স্থিরচিত্র ও গ্রাফিকস দিয়ে ২ মিনিট ৩১ সেকেন্ডের ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরি করেছে। দি হিন্দু পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, পদ্মা সেতু শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগকেই সাহায্য করবে না; বরং ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও সরবরাহের উন্নতি ঘটাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে, ঢাকায় ভারতের হাইকমিশন বলেছে, অবকাঠামো প্রকল্পটি হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে চিত্রিত করে এবং ভারত সব সময় বাংলাদেশের উন্নয়ন উদ্যোগকে সমর্থন করেছে। সেতুটি ভারত এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশÑনেপাল এবং ভুটানের সঙ্গে দ্রুত পণ্য ও পণ্য পরিবহনে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফও শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘ভ্রাতৃপ্রতিম বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় সেতুটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক’। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, যোগাযোগ, ব্যবসাবাণিজ্য ও অর্থনীতিতে যে দুর্বার গতি আনবে সে বিষয়ে প্রতিবেদনটিতে আলোকপাত করা হয়েছে। নয়াদিল্লিভিত্তিক মাল্টিমিডিয়া নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে তার পারিবারিক সুনাম নষ্ট করতে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এশিয়ান টাইমসের প্রতিবেদনে পদ্মা সেতু দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক কী প্রভাব ফেলবে, সে সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু প্রকল্প বিভিন্ন প্রকৌশল বিস্ময়ের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ প্রত্যক্ষ করেছে। এটি বাংলাদেশের জন্য বিস্ময়কর কাঠামো হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও জ্ঞানের ব্যবহার করা হয়েছে সেতুতে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘এই সেতুটি শুধু ইট, সিমেন্ট, লোহা এবং কংক্রিটের নয়… এই সেতুটি আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতা, আমাদের শক্তি এবং আমাদের মর্যাদার প্রতীক। এই সেতু বাংলাদেশের জনগণের।’

পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় এএফপি পরিবেশিত সংবাদে বাংলাদেশে সেতু উদ্বোধনের খবর দিয়ে নির্মাণকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কী কী গুজব ছড়িয়েছিল তারও উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যম যে সেতু নির্মাণ চলাকালে প্রচুর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সে বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। পাকিস্তান যে বাংলাদেশের সাফল্যকে এখনও বাঁকা চোখে দেখে এ বিষয়টি প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে। উদ্বোধনের চমৎকার ছবি দিয়ে একই খবর প্রকাশ করেছে দুবাইয়ের গালফ নিউজ।

ব্রুনেই দারুসসালামের ইংরেজি দৈনিক বোর্নিও বুলেটিনের প্রতিবেদনে বলার হয়, সে দেশে বাংলাদেশ হাইকমিশনে পদ্মা সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠান টেলিভিশনে দেখার জন্য বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্যরা একত্র হয়েছেন। কেক কেটে উদ্বোধন অনুষ্ঠানটি উদ্যাপন করা হয়। শিলংভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দ্য মেঘালয়ান এ সেতু উদ্বোধনের খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করে।

কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনে ‘আরও কাছাকাছি ঢাকা ও কোলকাতা : আজ পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন শেখ হাসিনা’ শিরোনামের একটি ভিডিও ক্লিপ প্রচার করেছে। ‘জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়! পদ্মা সেতু উদ্বোধনে হাসিনার কণ্ঠে সুকান্ত’ শিরোনামে পরিবেশিত সংবাদে বলা হয়: উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠে শোনা গেল সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার লাইন। হাসিনা বলেন, ‘কারও বিরুদ্ধে আমার কোনো অনুযোগ নেই। আমরা নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা দেশবাসীকে নিয়ে সব সমস্যা মোকাবিলা করে যাচ্ছি।’ হাসিনা এর পর সুকান্তের কবিতা থেকে দুটি লাইন শোনান, ‘জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়। আমরা মাথা নোয়াইনি, আমরা মাথা নোয়াব না। জাতির পিতা আমাদের মাথা নোয়াতে শেখাননি।’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলকাতা থেকে বাসে ঢাকায় আসতে হলে কিছু দিন আগে পর্যন্ত পদ্মা পার হতে স্টিমারের প্রয়োজন হতো। কলকাতা থেকে ঢাকার দূরত্ব অন্তত ৫০ শতাংশ কমে যাবে। আগে কলকাতা থেকে ঢাকা, ৪০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় লাগত ১০ ঘণ্টা। এখন তা মোটামুটি চার ঘণ্টায় হয়ে যাবে। আর রেলপথে পৌঁছতে সময় লাগবে মোটামুটি সাড়ে ছয় ঘণ্টা। পদ্মা সেতুর ফলে বঙ্গোপসাগর তীরের মোংলা এবং চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার কমে যাবে। সংশ্লিষ্ট বন্দর দুটিকে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ফলে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর সঙ্গে ভারতের মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ সুগম হবে। পদ্মা সেতু দুদেশের বাণিজ্যেও নতুন সেতুবন্ধন করবে। আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠান সরাসরি প্রচার করেছে। ‘পদ্মা ব্রজ: ১০০ টাকা থেকে ছয় হাজার টাকা! পদ্মা সেতু পেরোতে খরচ করতে হবে কত?’ শিরোনামে ১৬টি ছবির অসাধারণ একটি ফটোফিচার প্রকাশ করেছে। ফটোফিচারে ইঙ্গিত করা হয়েছে, সব ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই শেখ হাসিনা ভারত সফরে যেতে পারেন এই পদ্মা সেতু দিয়েই। আনন্দবাজার অনলাইনে ২৭ জুন ‘পদ্মা ব্রিজ: পদ্মা সেতুর নকশা তৈরিতে চারটি সংস্থা! কিন্তু নেপথ্যে কার মস্তিষ্ক’ শিরোনামে ২৫টি ছবির আরেকটি ফটোফিচার তৈরি করেছে।

পিআইডি নিবন্ধ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০