সাইদুর রহমান, চট্টগ্রাম: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আয়ের খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম বন্ড কমিশনারেট। আবার এসব কমিশনারেটের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্ড কশিমনারেট রাজস্ব আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিষ্ঠানটি সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। শুধু তাই নয়, পরপর দুই অর্থবছরেই রেকর্ডসংখ্যক রাজস্ব আয় করেছে এ প্রতিষ্ঠানটি, যদিও কাস্টমস কমিশনারেটগুলোয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের খুব একটা নজির দেখা যায় না। কারণ এনবিআর থেকেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেয়া হয় বড় টার্গেট। ফলে কেউ কেউ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারলেও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই ব্যর্থ হয়।
কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯৫১ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট আয় করেছে ৯৭৯ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৮ কোটি টাকা বেশি। এছাড়া আগের অর্থবছরে ৬৫০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি আয় করেছিল ৮০১ কোটি টাকা। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে ১৭৮ কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছে। তাতে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ২২ শতাংশ।
এসব আয়ের মধ্যে অর্থবছর শুরুর প্রথম মাস জুলাইয়ে আয় আয় হয়েছে ১০৮ কোটি টাকা, তারপর ক্রমান্বয়ে আগস্ট মাসে ১৪৪ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বর মাসে ১৪ কোটি টাকা, অক্টোবর মাসে ৩২ কোটি টাকা, নভেম্বর মাসে ২৮ কোটি টাকা ও ডিসেম্বর মাসে ৬৯ কোটি টাকা। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ৭৫ কোটি টাকা, ফেব্রুয়ারি মাসে ৮৬ কোটি টাকা, মার্চ মাসে ১৭২ কোটি টাকা, এপ্রিল মাসে ১০৯ কোটি টাকা, মে মাসে ১০৭ কোটি টাকা এবং সর্বশেষ জুন মাসে ৩১ কোটি টাকা।
মোট ৯৭৯ কোটি টাকা আয়ের মধ্যে নিবারক তৎপরতার মাধ্যমে ২০৯ কোটি টাকা রাজস্ব আহরিত হয়েছে, যা আহরিত মোট রাজস্বের ২১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এসব রাজস্ব আয় হয়েছে ৯১টি প্রতিষ্ঠান থেকে। এসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময় সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছিল। ফলে নিবারক তৎপরতার মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট এসব প্রতিষ্ঠান থেকে রাজস্ব আদায় করে। তবে নিবারক তৎপরতার মাধ্যমে ২০৯ কোটি টাকা আদায়ের মধ্যে দেশের বৃহৎ শিল্প গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের শিল্পপ্রতিষ্ঠান এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড থেকে একাই আদায় করেছে ১৯৮ কোটি ৮০ লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং তাদের আরেকটি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস আলম ট্রেডার্স থেকে আদায় হয়েছে দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকা। আর বাদবাকি ৮৯টি প্রতিষ্ঠান থেকে আদায় হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা।
এছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে অডিটের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে তিন হাজার ১৬৪ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়েছে, যার বিপরীতে এরই মধ্যে দাবিনামা-সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করেছে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট। তবে এসব নোটিসের বিপরীতে এখনও রাজস্ব আদায় হয়নি। আর তিন হাজার ১৬৪ কোটি টাকার বিপরীতে ৫০টি কারণ দর্শানো নোটিস রয়েছে। তবে এখানে কিছু প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে একাধিক নোটিস রয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনার একেএম মাহবুবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে বিদায়ী অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯৫১ কোটি টাকা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বন্ড কমিশনারেট, চট্টগ্রাম কর্তৃক ৯৭৯ কোটি রাজস্ব আহরিত হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৮ কোটি টাকা বেশি। গত অর্থবছরে ৬৫০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৮০১ কোটি টাকা আদায় হয়েছিল। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে ১৭৮ কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছে। এতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ২২ শতাংশ। তিনি বলেন, ‘নিয়মিত বন্ডেড ওয়্যারহাউস পরিদর্শন ও নজরদারির কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। নিবারক তৎপরতার মাধ্যমে ২০৯ কোটি টাকা রাজস্ব আহরিত হয়েছে, যা আহরিত মোট রাজস্বের ২১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এছাড়া বিদায়ী অর্থবছরে অডিটের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে তিন হাজার ১৬৪ কোটি রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়েছে, যার বিপরীতে এরই মধ্যে দাবিনামা-সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়েছে।’