প্রতি বছরের মতো আবারও ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছাল দুই প্রধান ধর্মীয় উৎসবের একটি পবিত্র ঈদুল আজহা তথা কোরবানির ঈদ। কোরবানির ঈদের বিশেষত্বই হলো পশু কোরবানি আর এই পশু কোরবানিকে ঘিরে নানান বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষ উৎসব আমেজে মেতে ওঠে। কিন্তু আমাদের দেশে কোরবানির আগে প্রায়ই দেখা যায়, দূর-দূরান্ত থেকে ট্রাকে করে গবাদিপশু বহন করে নিয়ে আসা হয়। ২০ থেকে ২২ ঘণ্টা পর্যন্ত একনাগাড়ে নিরীহ পশুগুলো দাঁড়িয়ে থাকে। অল্প জায়গায় অধিক পশু নেয়ার জন্য তারা এমনভাবে পশুকে দাঁড় করিয়ে রাখে যেন পশুগুলো বসতে না পারে, মাঝখানে বাঁশ দিয়ে দেয় যাতে কোনোক্রমেই বসতে না পারে। এ চিত্র আমাদের সমাজে সচরাচর। আমরা যেন শুধু আমাদের সুবিধাটাকেই প্রাধান্য দিই। দুটো পয়সা বাঁচানোর জন্য গাড়িতে দুইটা পশুর জায়গায় চারটা তুলে দিই। আমরা ভুলে যায় পশুর যে জীবন আছে, তারাও কষ্ট পায়, তাদেরও আবেগ আছে, অনুভূতি আছে। আপনি যখন একটি পশু পালন করেন তখন পশুটি আপনাকে ছেড়ে যাওয়ার সময় কষ্ট পায়, আপনার কাছে থাকতে চায়, পশুটিরও চোখের কোণে পানি আসে। তাহলে আপনি একজন মানুষ হয়ে পশুটির জন্য মায়া হয় না? আর মায়া হলে এরকম নিষ্ঠুর ব্যবহার কীভাবে করেন? মনে রাখবেন আল্লাহর প্রত্যেকটি সৃষ্টি আল্লাহর কাছে প্রিয়। পশুর সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করার অধিকার আপনার নেই। একজন মানুষের সঙ্গে মানুষের আচরণ যেমন হওয়া উচিত, একটি পশুর প্রতি মানুষের আচরণও ঠিক সেই রকমই হওয়া উচিত। আমি যদি পশু-পাখির প্রতি সহানুভূতি না দেখাতে পারি, তাহলে আমি মানুষের প্রতিও সহানুভূতি দেখাতে পারব না। পশু-পাখি এত নিষ্পাপ, এত ‘ইনোসেন্ট’, যা আপনি মানুষের মধ্যেও পাবেন না। পশু-পাখি তো কোনো পাপ করতে পারে না। এত নিষ্পাপ প্রাণীর প্রতি যদি আমরা মমতা দেখাতে না পারি, তাহলে মানুষের প্রতি মমত্ব দেখানোর কোনো বিষয় তৈরি হয় না। আল্লাহর পৃথিবীতে বহু প্রজাতির প্রাণী সৃষ্টি করেছেন। প্রাণিকুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো মানুষ। মানুষের প্রয়োজনে অন্য সব কিছু সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ। অন্য প্রাণী মানুষের উপকারার্থে সৃষ্টি করা হলেও ওই সব প্রাণীর প্রতি সদয় ও দরদি হতে বলেছেন মানুষকে। কোরবানির ঈদসহ সারা বছরই পশু-পাখি দ্বারা আমরা নানা কল্যাণ লাভ করে থাকি। আল্লাহতায়ালার দেয়া এ বিশেষ নিয়ামত পশু-পাখির প্রতি সব ধরনের নিষ্ঠুরতা পরিহার করে এদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের অন্যতম দায়িত্ব। কারণ, আল্লাহ পশু পাখিদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আমাদের দিয়েছেন। তাই এদের প্রতি সদয় হতে হবে। পশু পাখির প্রতি সব ধরনের নির্দয় আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের ইসলামি বিধানানুযায়ী পশু পাখির প্রতি যথাযথ সদয় আচরণের মাধ্যমে তার নৈকট্যলাভ ও সার্বিক কল্যাণ হাসিলের তাওফিক দিন।
ইমরান হোসাইন
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়