দেশের পুঁজিবাজারে ব্যাংক খাতে বিনিয়োগকারীরা ২০১৬ সাল শেষ করতে যাচ্ছেন একটি স্থিতিশীল বছর হিসেবে। টানা পাঁচ বছর পর এবার এমন ঘটনা ঘটলেও এটা আমাদের পুঁজিবাজার ও সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য সুসংবাদ। আরও বেশি স্বস্তির খবর যে, বছরভর সিংহভাগ ব্যাংকের শেয়ারদরও ছিল স্থিতিশীল পর্যায়ে। বিষয়টি এরই মধ্যে হয়তো সচেতন বিনিয়োগকারীদের নজরে এসেছে। ধারণা করা যায়, এর মধ্য দিয়ে ব্যাংক খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীরা আরও আকৃষ্ট হবেন। আমরাও চাই, পুঁজিবাজারে সবচেয়ে শক্তিশালী খাতটিতে বিনিয়োগকারীদের মুনাফার ধারা অব্যাহত থাকুক। নিকট অতীতে শেয়ারবাজারের প্রতি যে আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে, তাও ফিরে আসুক এ বাজারে ব্যাংক খাতের এমন পারফরম্যান্সের মধ্য দিয়ে।
লক্ষণীয়, অন্য খাতের তুলনায় চলতি বছরজুড়ে বেশি চাহিদা দেখা গেছে ব্যাংক খাতের শেয়ারের। কারণ হিসেবে জানা যাচ্ছে, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সমন্বয়ের পাশাপাশি বেশিরভাগ ব্যাংক কোম্পানি মুনাফায় ফিরেছে এ বছর। বাস্তবতা হলো, পুঁজিবাজারে এমন পারফরম্যান্স ধরে রাখতে হলে মুনাফার ধারাও অব্যাহত রাখতে হবে নিবন্ধিত ব্যাংকগুলোকে। প্রশ্নটা সেখানেই। ডিসেম্বর ব্যাংকগুলোর বার্ষিক হিসাব সমাপনীর মাস। এ মাস শেষে চূড়ান্ত করা হবে বার্ষিক হিসাব-নিকাশ। এর ভিত্তিতেই লভ্যাংশ বণ্টন হবে শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে। বলা হচ্ছে, গত বছরের তুলনায় ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রবৃদ্ধি ও খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল বেশি হওয়ার কারণে মুনাফা বেড়েছে। নিকট অতীতে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি সংক্রান্ত যেসব প্রতিবেদন সংবাদপত্রে এসেছে, আদায় বা পুনঃতফসিল না হলে সঞ্চিতি রেখে তাদের পক্ষে মুনাফার এ ধারা অব্যাহত রাখা কি সম্ভব হবে? চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ হলে নেতিবাচক উপাদানগুলোর প্রভাব কি পুঁজিবাজারে পড়বে না?
তথ্যমতে, একসময় পুঁজিবাজারে মোট লেনদেনের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ থাকতো ব্যাংক খাতের অবদান। এখন তা নেমে এসেছে প্রায় ১০ শতাংশে। এটা যে ব্যাংক খাতে সংঘটিত কিছু বড় কেলেঙ্কারির ফল, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। শেয়ার হাতবদলের পরিসংখ্যান থেকেও বোঝা যায়, ব্যাংক খাতের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। খাতটির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ যেহেতু তৈরি হয়েছে, সেহেতু এটা ধরে রাখার দায়িত্ব ব্যাংক কর্তৃপক্ষেরও ওপর বর্তায়। ওইসব কেলেঙ্কারির পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সে ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে সংশ্লিষ্টদের। ছোট ছোট দুর্নীতির মোট পরিমাণও যে অনেক বড় হয়, তাও রাখতে হবে বিবেচনায়। বর্তমানে ব্যাংক খাতে যে বিপুল পরিমাণ অলস টাকা রয়েছে, তা অনেকের জানা। মুনাফার ধারা অব্যাহত রাখতে হলে এ টাকা বিনিয়োগের উপযুক্ত ক্ষেত্র খুঁজে বের করতে হবে। আমানতের সুদ কমিয়ে বেশি মুনাফা করার যে প্রবণতা ব্যাংকগুলোর মধ্যে দেখা যাচ্ছে, তা ভালো লক্ষণ নয়। কম সুদ পাওয়া আমানতকারীরা ব্যাংক থেকে ব্যাপকভাবে মুখ ফিরিয়ে নিলে তার যে প্রভাব খাতটিতে পড়বে, এর পরিণাম পুঁজিবাজারের জন্যও মঙ্গলজনক হবে না। মনে রাখা দরকার, কাক্সিক্ষত সুদ পাওয়ার আশায় ব্যাংক খাতের অনেক আমানতকারীই ঝুঁকছেন সঞ্চয়পত্রে। এজন্য সংশ্লিষ্টদের সুবিবেচনা ও উপযুক্ত পদক্ষেপ প্রত্যাশিত।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেছেন, শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতের বিদ্যমান বাস্তবতায় সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের। তারা এসব শেয়ারের দিকে নজর দিলে খাতটি ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করেন তিনি। ব্যক্তি বিনিয়োগকারীর যেসব সীমাবদ্ধতা থাকে, তা সবার জানা। সে তুলনায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর ইতিবাচক দিক বেশি। এ ধরনের বিনিয়োগকারী যাতে ব্যাংক খাতের শেয়ারে আরও বেশি আগ্রহী হন, আমরা চাইবো তাদের উৎসাহিত করার মতো পদক্ষেপই গ্রহণ করুক সংশ্লিষ্টরা।
Add Comment