নিজস্ব প্রতিবেদক: যারা এবার কোরবানি দিয়েছেন, তারা কাঁচা চামড়ার কাক্সিক্ষত দাম পাননি। কয়েক বছরের মতো এবার গ্রাহক পর্যায়ে চামড়ার দাম ছিল না। তবে এর উল্টো চিত্র দেশের সবচেয়ে বড় চামড়ার আড়ত রাজধানীর পুরান ঢাকার পোস্তায়। সেখানকার আড়তদারদের চামড়া কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। দিন যত যাচ্ছে, কাঁচা চামড়ার দাম ততই বাড়ছে।
ঈদের দিন সন্ধ্যায় পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তার ব্যবসায়ীরা যে চামড়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় কিনেছেন, রাত ১০টার দিকে তা বিক্রি হয়েছে প্রতি পিস গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে। পরের দিন সোমবার একই ধরনের চামড়া তাদের কিনতে হয়েছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায়। গতকাল পোস্তার ব্যবসায়ীরা ওই চামড়া কিনেছেন ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে।
পোস্তার কয়েকজন আড়তদার বলছেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী তারা এবার কাঁচা চামড়া পাননি। তাই দর বাড়িয়ে লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন লালবাগের চামড়া ব্যবসায়ীরা। এখন তারা ফোন করে আশপাশের এলাকায় থাকা চামড়া পোস্তায় আনতে বলছেন।
ঈদের দিন বিভিন্ন এতিমখানা ও মাদ্রাসার ছাত্ররা পশুর চামড়া সংগ্রহে নামে। ঢাকায় কোরবানির পশুর চামড়ার অধিকাংশই এসব প্রতিষ্ঠানে দান করে দেয়া হয়। সাধারণত পোস্তার আড়তদার ছাড়াও ট্যানারি মালিকরা নিজস্ব তত্ত্বাবধানে এসব চামড়া সংগ্রহ করে থাকেন। কিন্তু এবার আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের মধ্যে চামড়া সংগ্রহে এক ধরনের প্রতিযোগিতা দেখা যাচ্ছে।
পোস্তার আড়তদাররা বলছেন, এবার তারা সমস্যায় থাকলেও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটেছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা পোস্তার পাইকারদের কাছে ভালো দামে চামড়া বিক্রি করছেন। যদিও কয়েক বছর চামড়ার দাম পাননি মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরিয়ে সাভারের হেমায়েতপুরে নেয়ার পর থেকেই চামড়ার দরপতন হতে শুরু করে। কয়েক বছর অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী লোকসান গুনেছেন। ফলে এবার তারা সে হারে চামড়া সংগ্রহে নামেননি। গতবারের চেয়ে এবার বেশি চামড়া সংগ্রহ করার আশায় ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বস্তা বস্তা লবণ কিনে রাখলেও সেই তুলনায় কাঁচা চামড়া আসছে না লালবাগের চামড়ার আড়তগুলোতে।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব খান বলেন, ‘এবার আমাদের লক্ষ্য দেড় লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ করার।’ গতবার এক লাখ পিস সংগ্রহ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চামড়া যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য পোস্তার ব্যবসায়ীরা ঢাকার পাশেই কেরানীগঞ্জ, হেমায়েতপুর, জাজিরা, নারায়ণগঞ্জে অস্থায়ী ঘর করেছেন।’ এদিকে সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বেশি দরে চামড়া কিনছেন সাভারের ট্যানারি ও পোস্তার আড়তদাররা। এবার পোস্তায় চামড়া এনে কোনো বিক্রেতাকেই অপেক্ষা করতে হচ্ছে না।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, ‘এ বছর মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সরাসরি চামড়া কিনছেন ট্যানারি মালিকরা।’ তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর চামড়ার লোকসান দিয়ে কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। অর্থ সংকটে অনেক ব্যবসায়ী চামড়া কিনছেন না।’ এবার আড়তদারদের খরচ বেড়েছে দাবি করে টিপু সুলতান বলেন, ‘সব মিলিয়ে চামড়াপ্রতি ৩০০ টাকার মতো খরচ হয়। এর মধ্যে প্রতি চামড়ায় লবণ মেশাতে মজুরি ৪০-৫০ টাকা, ট্রাক থেকে নামানো-উঠানো ও আড়তে নিয়ে যাওয়া বাবদ ১০ টাকা, পানি-লবণের দাম মিলিয়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা খরচ হয়। এর সঙ্গে কর্মকর্তাদের বেতন তো আছেই।’
প্রসঙ্গত, পশুর চামড়া সংগ্রহের সবচেয়ে বড় মৌসুম ঈদুল আজহা। দেশে সারা বছর যে পরিমাণ পশু জবাই হয়, তার ৬০ শতাংশই হয় ঈদুল আজহায় কোরবানির মাধ্যমে। এ বছর ঈদুল আজহার দিন সারাদেশে কোরবানি হয়েছে ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি পশু, যা গতবারের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি। এবার গরুর চামড়ার দর প্রতি বর্গফুটে সাত টাকা আর খাসির চামড়ার দাম তিন টাকা বাড়ানো হয়েছে। সরকার এবার ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪৭ থেকে ৫২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা। এ ছাড়া খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ঢাকায় ১৮ থেকে ২০ টাকা, বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।