নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে জেট ফুয়েলের দাম ছিল লিটারপ্রতি ৪৬ টাকা। আর ২০২২ সালের জুলাইয়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩০ টাকা। অর্থাৎ গত ২০ মাসে জেট ফুয়েলের দাম বেড়েছে ১৮৩ শতাংশ। অবিশ্বাস্য মূল্য বৃদ্ধির কারণে চাপে রয়েছে দেশের এভিয়েশন শিল্প।
জানা যায়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি গত ৭ জুলাই অভ্যন্তরীণ রুটে জেট ফুয়েলের মূল্য ১১১ টাকা থেকে ১৯ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা নির্ধারণ করে। আর আন্তর্জাতিক রুটে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের মূল্য ১.০৯ ডলার থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১.২২ ডলার। এ নিয়ে গত ৫ মাসে জেট ফুয়েলের দাম বেড়েছে প্রতি লিটারে ৫০ টাকা। আর করোনা মহামারির সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত গত ২০ মাসে জেট ফুয়েলের দাম বেড়েছে ১৮৩ শতাংশ।
দাম বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য প্রতি লিটারের নির্ধারিত মূল্য ছিল ৪৬ টাকা। এরপর ডিসেম্বরে ছিল ৪৮ টাকা। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে দাম বাড়িয়ে করা হয় ৫৩ টাকা। ফেব্রুয়ারিতে ৫৫, মার্চে ৬০ এবং এপ্রিলে ৬১ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়। মে মাসে লিটারে এক টাকা দাম কমানো হয়েছিল। জুনে আবার তিন টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৬৩ টাকা। জুলাইয়ে ৬৬, আগস্টে ৬৭, অক্টোবরে ৭০ এবং নভেম্বরে ৭৭ টাকা করা হয়। আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুই দফায় কমানো হয়েছিল চার টাকা। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে দুই দফায় ১৪ টাকা বাড়িয়ে ৮৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আর এপ্রিলে দাম বেড়েছে হয়েছিল ১০০ টাকা। সর্বশেষ গত ৭ জুলাইয়ে ছিল ১১১ টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসে রুটিন করে জেট ফুয়েলের মূল্য বৃদ্ধি বাংলাদেশের এভিয়েশন ব্যবসাকে অস্থির করে তুলছে।
বেসরকারি বিমান পরিচালনা সংস্থাগুলোর মতে, ২০১২ সালে দেশের অভ্যন্তরীণ যাত্রী ছিল ছয় লাখ, যা ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২০ লাখ। কিন্তু করোনার কারণে পর্যটন শিল্প স্থবিরতা দেখা দেয়। সবেমাত্র করোনার সংকট কিছু কাটিয়ে ওঠে। এরমধ্যে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে অস্থির হয়ে ওঠে জ্বালানি তেলের বাজার। এমন সময়ে জেট ফুয়েলের দাম বাড়তে শুরু করেছে যখন ধুঁকতে থাকা বিমানশিল্প আবারও স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। কারণ একটি উড়োজাহাজের পরিচালন ব্যয়ের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ জ্বালানিতে ব্যয় হয়। ফলে উড়োজাহাজ ভ্রমণ আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে এবং দিন শেষে যাত্রীদের এ বোঝা বহন করতে হবে।
এ বিষয়ে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, কভিডকালে সারা পৃথিবীর প্রায় সব এয়ারলাইনস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রত্যেকটি দেশের সরকার কিংবা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এভিয়েশন ও ট্যুরিজমকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এয়ারলাইনস ও ট্যুরিজম কোম্পানির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। নানা ধরনের প্রণোদনা, ভর্তুকি, চার্জ মওকুফসহ
নানাবিধ কার্যক্রম দেখেছি। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে উল্টোচিত্র চোখে পড়েছে। করোনা মহামারির সময়ে এয়ারলাইনসগুলোর পক্ষ থেকে মাত্রাতিরিক্ত অ্যারোনোটিক্যাল ও নন-অ্যারোনোটিক্যাল চার্জ কমানোর অনুরোধ উপেক্ষা করা হয়েছে। দফায় দফায় জেট ফুয়েলের মূল্য বৃদ্ধি করে, এয়ারপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফি, সিকিউরিটি চার্জ যুক্ত করে এভিয়েশন খাতকেই হুমকিতে ফেলে দিয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের দাম বাড়লে, সেখানে তো আমাদের কিছুই করার নেই। আমরা তো ইচ্ছা করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছি না। জ্বালানি তেলের বাজার আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহের ওপর নির্ভর করে। আর জ্বালানির প্রভাবটা দ্রুত সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর প্রভাব তৈরি করে, যার কারণে এটা নিয়ে এত আলোচনা হয়।