জন্মদিন: জাফর পানাহি

২০০২ সালে রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ আয়োজিত সপ্তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন। ওই উৎসবে উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবে প্রদর্শিত হয় তার নির্মিত বেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘গোল্ডেন লায়ন’-প্রাপ্ত ‘দ্য সার্কেল’ (২০০২)। এ ছাড়া সপ্তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তার নির্মিত ছবির রেট্রোস্পেকটিভে ‘দ্য সার্কেল’ ছাড়াও আরও দুটি সিনেমা প্রদর্শিত হয়; একটি কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘ক্যামেরা ডিওর’ পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘দ্য হোয়াইট বেলুন’ (১৯৯৫) এবং অন্যটি লোকার্নো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ‘গোল্ডেন লিওপ্যার্ড’-প্রাপ্ত ‘দ্য মিরর’ (১৯৯৭)। হ্যাঁ, জাফর পানাহির কথাই বলা হচ্ছে। যে ক’জন ইরানি চলচ্চিত্রকার সিনেমায় নতুন আঙ্গিক নিয়ে এসেছেন, যারা বদলে দিয়েছেন ইরানের চলচ্চিত্র জগৎ, যারা এ বদলে দেওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন নিজেদের হাজার বছরের শিল্প-সাহিত্যের ঐতিহ্য থেকে এবং যাদের নির্মিত চলচ্চিত্র বিশ্ব চলচ্চিত্রে একটি বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে, তাদের অন্যতম জাফর পানাহি।

১৯৬০ সালের ১১ জুলাই ইরানের মিয়ানেহতে তার জš§। তিনি একই সঙ্গে চলচ্চিত্রকার, চিত্রনাট্যকার, লেখক, আলোকচিত্রী, অভিনেতা এবং চলচ্চিত্র সম্পাদক ও প্রযোজক। তিনি সেনাবাহিনীতে চাকরিও করেছেন। জাফর পানাহি মাত্র ১০ বছর বয়সে বই লিখে একটি সাহিত্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কার জেতেন। ওই সময়ই যুক্ত হন চলচ্চিত্রে। তারপর তিনি আলোকচিত্রে আগ্রহ অনুভব করেন। সেনাবাহিনীতে থাকার সময় জাফর পানাহি ইরাক-ইরান যুদ্ধে অংশ নেন। এ অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি নির্মাণ করেছেন তথ্যচিত্র। তিনি বিশ্ব বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার আব্বাস কিয়োরোস্তামির সহকারী হিসেবে বেশ কয়েকটি ছবিতে কাজ করেন। তা ছাড়া আব্বাস কিয়োরোস্তামির তৈরি চিত্রনাট্যে কয়েকটি ছবি নির্মাণ করেন।

২০০৩ সালে নির্মিত জাফর পানাহির ‘ক্রিমসন গোল্ড’ কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার জেতে। চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ২০০৬ সালে তিনি ‘সিলভার বিয়ার’ ও জুরি গ্রান্ড প্রিক্স পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন।

জাফর পানাহি নিজেকে একজন স্বাধীন চলচ্চিত্রকার হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। এ ‘স্বাধীন চলচ্চিত্রকার’ সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গী এ রকমÑ সবরকম নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত এবং সারা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের পীড়ন থেকে মুক্ত থাকা অর্থে স্বাধীন। সঠিক মনে করি না, বিশ্বাস করি নাÑ এমন যে কোনো কিছু থেকে বিরত থাকা অর্থে স্বাধীন। সেলফ-সেন্সরশিপ থেকে মুক্ত থাকা অর্থে স্বাধীন। আমি আমার চলচ্চিত্রে যা বলতে চাই, শেষ পর্যন্ত তা-ই বলি, এ বিবেচনায় স্বাধীন। স্বাধীনতা বলতে আমরা সাধারণত অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকে বুঝে থাকি; অর্থাৎ কারো কাছ থেকে বেতন নিচ্ছি না বা চাকরি করছি না। কিন্তু এখানে আমার স্বাধীনতা মানে রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকার স্বাধীনতা। এ কারণেই আমি রাজনৈতিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করি না। আমি যদি রাজনৈতিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করতাম, তাহলে আমাকে কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করতে হতো। তারা কোনটাকে ভুল বা শুদ্ধ মনে করছে, তা মাথায় রেখে কাজ করতে হতো। আমি মনে করি রাজনীতি থেকে শিল্প অনেক উঁচুমানের বিষয়। দূর থেকে দেখলে শিল্পকে রাজনীতির মতো মনে হয়। শিল্প কখনও বলে না এটা ভালো, ওটা মন্দ। বরং প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরে ভালো মন্দের ভার দর্শকের হাতে ছেড়ে দিয়ে ছবির পরিসমাপ্তি ঘটায়। রাজনৈতিক ছবি কোনো একটি নির্দিষ্ট সময় বা দিনের ঘটনার প্রেক্ষাপটে তৈরি করা হয়। কিন্তু একটি শিল্পসম্মত ছবি কখনও পুরোনো হয় না, তা কালজয়ী। ইরানি চলচ্চিত্রকার হিসেবে আমার পরিচয় হলেও আমি আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটেই নিজেকে বিচার করি।

 

 

 

 

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০