দাহ্য পদার্থের দুর্ঘটনার দায় কেউই নিতে চায় না

নিজস্ব প্রতিবেদক : গত এক দশকে ১০টির বেশি রাসায়নিক দুর্ঘটনায় শতাধিক প্রাণহানি ও কয়েক কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ নষ্ট হয়েছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি মনে করে, দাহ্য পদার্থ উৎপাদন থেকে শুরু করে মজুত, শিপমেন্ট, বাজারজাতকরণÑসব জায়গায় দুর্বলতা থেকে গেছে। এসব পদার্থের আমদানি ও রপ্তানি ব্যবস্থাপনা অসম্পূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়ে গেছে। এই ব্যবসার জন্য এনবিআর, বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাই লাইসেন্স দিয়ে থাকে। কিন্তু কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কেউ কোনো দায় নিতে চায় না। তাই সমন্বয়ের জন্য একটি সমন্বিত কর্তৃপক্ষ দরকার।

গতকাল বুধবার সিপিডির কার্যালয়ে ‘রাসায়নিক ও বিপজ্জনক পণ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে শিল্প নিরাপত্তা: চট্টগ্রামের ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানানো হয়। সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।

সিপিডি জানিয়েছে, নব্বই দশকে রাসায়ানিক বা কেমিক্যালজনিত আগ্নিকাণ্ড কম ছিল, যা ২০১০ সালের পর বেড়েছে। বাংলাদেশে ক্রমাগত শিল্পায়নের পাশাপাশি রাসায়নিকের ব্যবহারও বাড়ছে। বিভিন্ন কারখানায় কাঁচামাল হিসাবে কেমিক্যালও ব্যবহƒত হচ্ছে। শিল্পায়নের এ উন্নতি রাসায়নিক দুর্ঘটনা বাড়াতে পারে। এমন অবস্থায় রাসায়নিক উৎপাদন, সংরক্ষণ ও পরিবহনে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।

জনবসতির বাইরে এমন রাসায়নিক হ্যান্ডলিংয়ের ব্যবস্থা করা, রাসায়নিক দ্রব্য সম্পৃক্ত সব মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয়, ডিপোতে পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তা সরঞ্জাম রাখা, রাসায়ানিক দ্রব্য থাকা ডিপোকে রেড ক্যাটেগরিতে চিহ্নিত করাসহ বেশ কিছু সুপারিশ করেছে সিপিডি।

ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দেশে অনেক দাহ্য পদার্থ উৎপাদিত হচ্ছে। বর্তমানে ২৫১টি প্রতিষ্ঠান এ উৎপাদন কাজের সঙ্গে জড়িত। তারপরও ২০২১ সালে ৩০২ মিলিয়ন ইউরিয়া আমদানি করা হয়েছে। অন্যান্য দাহ্য পদার্থ আমদানি করা হচ্ছে। এসব পদার্থের উৎপাদন থেকে শুরু করে শিপমেন্ট, রপ্তানি, বাজারজাতকরণ সব ক্ষেত্রে এনবিআর বন্দর কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, বিডা এমনকি ডিসি অফিসেরও অনুমোদন লাগে। কিন্তু দুর্ঘটনার সময় কেউ এককভাবে দায়িত্ব নিতে চায় না। তাই সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। নিরাপত্তা কাঠামো অত্যন্ত জরুরি। দাহ্য পদার্থকে রেড ক্যাটেগরি শিল্প গণ্য করে রুলস ও রেজুলেশন করা দরকার। এসব কার্যকর করাও দরকার। যাতে কোনো অগ্নিদুর্ঘটনা আর না ঘটে। এসব নিয়মকানুনকে একত্রিত করে অর্থাৎ সমন্বয়ের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সে যেন নিজের দাম এড়াতে না পারে। সমন্বয়কারী হিসেবে শ্রম মন্ত্রণালয় বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিডাও হতে পারে।

সিপিডির এ পরিচালক বলেন, ৪ জুন চট্টগ্রামের কনটেইনার ডিপোতে যে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে, সেটা শুধু অগ্নিকাণ্ড নয়। এ দুর্ঘটনায় ৫১ জন মারা গেছে। এর মধ্যে ১২ জন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী মারা যান। এতে ১১০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। কারও কাছে কোনো ঠিক তথ্য না থাকায় এভাবে দুর্ঘটনার মাত্র ভয়াবহ আকার ধারণ করে। অথচ এসব দাহ্য পদার্থের ব্যবসার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিস সবার অনুমোদন ছিল। এসব পদার্থের উৎপাদন থেকে শুরু করে শিপমেন্ট বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে বড় দুর্বলতা থেকে গেছে ব্যবস্থাপনায়। নিয়ম আছে ২০ কিলোমিটারের বাইরে এ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) হওয়ার কথা। ২০২১ সালের নতুন পলিসিতে বলা হয়েছে, ২০ কিলোমিটারের বাইরে আইসিডি করতে হবে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ের চাহিদার কারণে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে শিল্পায়নের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়াবে। বাংলাদেশও এরই মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের অঞ্চল গড়ে তুলেছে। এগুলো শিল্পায়নের বড় ভূমিকা রাখবে। ক্রমান্বয়ে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আমরা উত্তরণ ঘটাচ্ছি।’

সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ডিপোর ২৭টি কনটেইনারে বিপজ্জনক রাসায়নিক হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ছিল, যার মধ্যে ১৫টি বিস্ফোরিত হয়েছে। রাসায়ানিক দ্রব্যের তথ্য না জানা এবং সে ধরনের প্রস্তুতি না থাকায় সেখানে ১২ অগ্নিনির্বাপক কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০