নিজস্ব প্রতিবেদক: একদিকে পুঞ্জীভূত লোকসানের পাহাড়, অন্যদিকে শেয়ারপ্রতি লোকসান। সবদিক দিয়ে লোকসানের বোঝা বাড়ছেই মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের। লোকসানের বোঝা বাড়লেও শেয়ারদরে অস্বাভাবিক উত্থান থামছে না। এমন একটি লোকসানি কোম্পানির দর বাড়ার বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে।
তথ্যমতে, গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেও কোম্পানিটির শেয়ারদর ফেসভ্যালুর নিচে লেনদেন হয়েছে। তবে মে মাসের শেষ দিকে কোম্পানির শেয়ারদর বেড়ে ফেসভ্যালুর ওপরে উঠে আসে। গত এক মাসের বেশিরভাগ সময় কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ছে। কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিক বাড়ার বিষয়টি নজরে আসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের। এতে কোম্পানিকে নোটিস দিয়ে দর বাড়ার কারণ জানতে চায় ডিএসই। জবাবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানায়, দর বাড়ার পেছনে কোনো ধরনের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। তবুও শেয়ারদরে উল্লম্ফন থামছে না।
‘পুঞ্জীভূত লোকসানে থাকার পরও শেয়ারদর কী কারণে বাড়ছে’Ñজানতে চাইলে কোম্পানির সচিব আশরাফ আলী এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে উত্থান-পতন থাকবেই। কিন্তু দুর্বল ও লোকসানি কিছু কোম্পানির দর এমন সময় বাড়ে, তাতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্তই হচ্ছেন বেশি। এসব কোম্পানির সম্পর্কে মাঝে মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জ অস্বাভাবিক দর বাড়ার কারণ জানতে চাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। কারা এসব কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ানোর পেছনে কাজ করছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে পারলে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতেন।
এ সম্পর্কে অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘লোকসানি কিছু কোম্পানির দর হঠাৎ বেড়ে যায় বা কমে যায়। এসব কোম্পানি শেয়ার থেকে অনেক বিনিয়োগকারীই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব কোম্পানির পেছনে কারা জড়িত, এটা জানা তো নিয়ন্ত্রক সংস্থার বেগ পাওয়ার কথা নয়। তারা ইচ্ছা করলেও বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে’ বলে মনে করেন তিনি।
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, কোম্পানিটির পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬২ কোটি ২৭ লাখ টাকা। পাশাপাশি শেয়ারপ্রতি লোকসানেও রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক টাকা ৩৭ পয়সা।
আলোচ্য সময়ে কোম্পানির পণ্য বিক্রির পরিমাণও কমতে দেখা গেছে। আলোচিত সময়ে কোম্পানির পণ্য বিক্রি বাবদ আয় হয়েছে ১১ কোটি ২২ লাখ টাকা। আগের বছর একই সময়ে লোকসানের পরিমাণ ছিল এক টাকা ২৪ পয়সা এবং পণ্য বিক্রি বাবদ আয় হয়েছিল ১৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
শেয়ারদর পর্যালোচনায় দেখা গেছে, লোকসানি এ কোম্পানিটির শেয়ারদর গত এক মাসে বেড়েছে প্রায় ৩৬ শতাংশ। গত তিন কার্যদিবসে কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে তিন টাকা ৩০ পয়সা। গত ৬ জুলাই কোম্পানির শেয়ারদর ছিল ১১ টাকা ৮০ পয়সা, গতকাল তা বেড়ে ১৫ টাকা ১০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। গত এক বছরে কোম্পানির শেয়ার সর্বনি¤œ ছয় টাকা ৩০ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ১৫ টাকা ৪০ পয়সা বেচাকেনা হয়েছে। লোকসানি কোম্পানির শেয়ারদর দীর্ঘদিন ফেসভ্যালুর নিচে অবস্থান করলেও হঠাৎ উত্থানে সংশয়ে রয়েছে বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে লভ্যাংশের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছর কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছেÑএমন কোনো ইতিহাস খোঁজে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ আলোচিত সময়ে লোকসানে পড়ে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
পুঁজিবাজারে ২০০১ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৮০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১৬ কোটি টাকা। কোম্পানির শেয়ারসংখ্যা এক কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর মধ্যে পরিচালকদের কাছে ৫০ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
Add Comment