উইলসন এক ধরনের বিরল প্রকৃতির জিনগত রোগ, যা মানব শরীরে কপারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। মা-বাবার কাছ থেকে সন্তানরা এই রোগটি পেয়ে থাকে। যকৃৎ ও মস্তিষ্কের পাশাপাশি শরীরের আরও কিছু অঙ্গ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বংশগত রোগ হওয়ায় উইলসন সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব হয় না। তবে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা করালে রোগটিকে বেশ ভালোভাবেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
কারণ: প্রোটিন এটিপি সেভেন বি-এর মিউটেশন বা পরিবর্তনের কারণে এই রোগ হয়। মা অথবা বাবার যেকোনো একজনের জিনের মধ্যে মিউটেটেড জিনের অস্বাভাবিক অনুলিপি উপস্থিত থাকতে হবে, যিনি সেটা বহন করছেন। যদি মা ও বাবা উভয়ের মধ্যেই এই জিন উপস্থিত থাকে, তাহলেই সন্তানের উইলসন রোগ হবে।
লক্ষণ: উইলসন রোগ মূলত যকৃৎ ও মস্তিষ্ককে বেশি আক্রান্ত করে, তাই এর লক্ষণগুলো এ দুটি অঙ্গসংক্রান্ত হয়ে থাকে। শারীরিক দুর্বলতা, জন্ডিস, পেটে পানি আসা, লিভার শক্ত হয়ে যাওয়া এবং লিভারের কার্যকারিতা হঠাৎ নষ্ট হয়ে যাওয়া। এ ছাড়া বিষণœতা, উদ্বেগ, মেজাজ বদলে যাওয়া, কাঁপুনি বা ট্রেমর, কথা বলতে সমস্যা হওয়া, শারীরিক ভারসাম্যহীনতা, চোখের আইরিসের চারপাশে বাদামি রঙের রিং তৈরি হওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা যাবে। কিছু ক্ষেত্রে এই রোগের কারণে হƒদরোগও হতে পারে।
রোগনির্ণয়: রক্তের কিছু বায়োকেমিক্যাল পরীক্ষা যেমন লিভার ফাংশন টেস্ট, রক্তে কপার ও সেরুলোপ্লাজমিনের পরিমাণ, প্রস্রাবে ২৪ ঘণ্টায় কী পরিমাণ কপার নির্গত হয় তা নির্ণয় করা। ব্রেনের এমআরআই পরীক্ষা ও চোখের স্পিøট ল্যাম্প পরীক্ষারও দরকার হতে পারে। জেনেটিক টেস্টও করা যেতে পারে।
চিকিৎসা: উইলসন রোগের চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হচ্ছে শরীরে অতিরিক্ত কপার জমার বিষয়টি প্রতিরোধ করা, অন্ত্রে কপারের শোষণ হ্রাস করা ও কিডনি দিয়ে মূত্রের মাধ্যমে অতিরিক্ত কপার বের করে দেয়ার চেষ্টা করা।
ডি-পেনিসিলামাইন ও জিঙ্ক দিয়ে সাধারণত উইলসন রোগের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন বা প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হতে পারে।
ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন
সহযোগী অধ্যাপক, পরিপাকতন্ত্র, লিভার ও প্যানক্রিয়াস রোগ বিভাগ
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল