নিজস্ব প্রতিবেদন: ডলার সংকটের কারণে এই মুহূর্তে দেশ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বর্তমানে দেড় বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স বিদেশে আটকে আছে, যেটা এখনও আনা হয়নি। এছাড়া ব্যাংকগুলোর নস্ট্রো অ্যাকাউন্টে (বিদেশে থাকা দেশীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রায় অ্যাকাউন্ট) প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট প্রসিডস রিকনসলেশন হিসেবে আটকে আছে। সবমিলিয়ে ব্যাংকগুলোকে সাড়ে ১০ বিলিয়ন ডলার দ্রুত আনার নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
এই মুহূর্তে ব্যাংকগুলো যদি বিপুল অঙ্কের এ ডলার বিদেশ থেকে না নিয়ে আসে, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক আর ডলার সাপোর্ট দেবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম। কারণ এখন পর্যন্ত মার্কেট স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সাত বিলিয়ন ডলারের বেশি সাপোর্ট দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোর সাপোর্টের ওপর ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
গতকাল বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্যাংকার্স সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে ডেপুটি গভর্নর, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন, বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের এমডি আতাউর রহমান প্রধানসহ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানান সিরাজুল ইসলাম।
তিনি আরও বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দেশের আয়নার মতো। ব্যাংকগুলোকে ডলার দিয়ে রিজার্ভকে একেবারে তলানিতে নামিয়ে আনা সম্ভব নয়। রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো যেভাবে সহযোগিতা করবে, ঠিক একইভাবে রপ্তানির টাকাও ফেরত আনতে হবে। নিয়মের মধ্যে থাকলে যেকোনো ধরনের ঝুঁকি নেয়ার জন্য প্রস্তুত সংস্থাটি। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে কোনো দায় নেবে না বাংলাদেশ ব্যাংক।
ঋণ পুনঃতফসিলের সার্কুলার সম্পর্কে মুখপাত্র বলেন, কোন গ্রাহককে পুনঃতফসিল সুবিধা দেয়া হবে এবং কাকে দেয়া হবে না, এটার পুরোপুরি দায়িত্ব এখন ব্যাংকের ওপর। এ ধরনের কোনো দায়িত্ব এখন আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিতে চাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে যদি কোনো অনিয়ম ধরা পড়ে, তাহলে কোনো রকম ছাড় দেয়া হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি। কারণ পুনঃতফসিলের অনিয়মে জিরো টলারেন্স থাকবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই সার্কুলারের ফলে এখন থেকে ঋণ বিতরণের জন্য সবাই সতর্ক থাকবে। কারণ আগে শুধু ব্যাংককে দায় করা হতো। এখন ব্যক্তিকেও দায় করা হবে।
বৈঠক শেষে এবিবি চেয়ারম্যান সেলিম আরএফ হোসেন বলেন, এই সার্কুলারের মাধ্যমে ব্যাংক খাতে সংস্কার শুরু। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সংস্কারও হবে। তিনি বলেন, ঋণ পুনঃতফসিলের ক্ষমতা ব্যাংকের পর্ষদের হাতে যাওয়ায় প্রক্রিয়াটি আরও সুষ্ঠু এবং সহজ হবে। কারণ এখন থেকে খেলাপি ও ঋণ পুনঃতফসিলের ভালো-মন্দের পুরো দায়ভার ব্যাংকের ওপর বর্তাবে।
বাফেদার চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ঋণ পুনঃতফসিল সার্কুলারটি সময়মতো হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর কাজের গতি ফিরে আসবে। এটি যুগোপযোগী ও ভালো সার্কুলার। এতে করে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণও কমে যাবে। মূলত ঋণ পুনঃতফসিলের কাজ বাংলাদেশ ব্যাংকের নয়। ঋণ দেয়, এটার দায়িত্বও ব্যাংকের। এখন কোনো সমস্যা হলে ব্যাংকগুলো দায় নেবে। ডলার মার্কেট যে অস্থিরতা চলছে, তা দ্রুত কেটে যাবে বলে আশা করেন তিনি।