‘তুমি নির্মল কর মঙ্গল করে, মলিন মর্ম মুছায়ে; তব পুণ্য-কিরণ দিয়ে যাক, মোর মোহ কালিমা ঘুচায়ে’- কবি, গীতিকার, সংগীতশিল্পী রজনীকান্ত সেনের আজ ১৫৭তম জন্মদিন। ‘পঞ্চকবি’দের একজন রজনীকান্ত সেন। পঞ্চকবির অন্যরা হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুল প্রসাদ সেন। তাকে কান্তকবি ও স্বদেশি আন্দোলনের যুগের কবিও বলা হয়। রজনীকান্ত সেন ১৮৬৫ সালের ২৬ জুলাই সিরাজগঞ্জের ভাঙ্গাবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলায় খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকলেও অসম্ভব মেধার কারণে বরাবরই পরীক্ষায় ভালো ফল করেন। তিনি কুচবিহার জেনকিন্স স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, রাজশাহী কলেজ থেকে এফএ এবং কলকাতা সিটি কলেজ থেকে বিএ ও বিএল ডিগ্রি লাভ করে, রাজশাহী কোর্টে ওকালতি শুরু করেন। কিছুদিন তিনি নাটোর ও নওগাঁয় অস্থায়ী মুন্সেফ ছিলেন। আইন পেশার পাশাপাশি তিনি সংগীত, সাহিত্য, নাটক অভিনয় ইত্যাদিতে সম্পৃক্ত হন। কিশোর বয়সে তিনি স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বাবলীলভাবে বাংলা ও সংস্কৃত-উভয় ভাষায় কবিতা লেখা শুরু করেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি কালীসংগীত রচনা করেন। তার কবিতাগুলো স্থানীয় উৎস, আশালতা প্রমুখ সংবাদ-সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়। রাজশাহীতে তিনি বিভিন্ন সাহিত্যসভা, মজলিশ এবং অনুষ্ঠানে স্বরচিত গান পরিবেশন করতেন। গান রচনায় অস্বাভাবিক দ্রুত গতিসম্পন্ন ছিলেন রজনীকান্ত। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে স্বদেশি আন্দোলনে বিলাতি সব পণ্য বয়কট করে দেশীয় পণ্য ব্যবহার করার প্রতি যে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে ওঠে, সে আন্দোলনে রজনীকান্ত সমর্থন দেন ও রচনা করেন-‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই; দীন দুখিনি মা যে তোদের তার বেশি আর সাধ্য নাই।’ এই গান সাধারণ মানুষকে স্বদেশি আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করে। এর মাধ্যমেই তিনি খ্যাতি লাভ করেন এবং ‘কান্তকবি’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তার মোট গানের সংখ্যা ২৯০টিরও বেশি। তার প্রথম গ্রন্থ ১৯০২ সালে প্রকাশিত হয়। কবি রজনীকান্ত সেন ১৯১০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক আসাদ চৌধুরী ১৯৮৯ সালে রজনীকান্ত সেন শিরোনামে একটি জীবনীগ্রন্থ রচনা করেন।
কাজী সালমা সুলতানা
