ওবাইদুল আকবর রুবেল, ফটিকছড়ি : যান্ত্রিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী কৃষি ও গৃহসামগ্রী। আধুনিকতার কাছে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার একসময়কার জনসাধারণের বৃষ্টি থেকে বাঁচার প্রধান মাধ্যম বাঁশ ও বেতের তৈরি ‘জুঁইর’ (মাথাসহ পিঠ ঢাকার এক ধরনের বর্ষাতি), যা একসময় গ্রামগঞ্জে হরহামেশা দেখা গেলেও এখন আর কেউ চেনে না। একসময় বর্ষা মৌসুমে ধুমধামের সঙ্গে তৈরি হতো ‘জুঁইর’। ব্যস্ত সময় পার করতেন এর নির্মাতা গ্রামীণ কারিগরেরা। এখন তাদের আর হাট-বাজারে দেখা যায় না।
জানা যায়, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার বেশকিছু এলাকায় তৈরি হতো বাঁশ ও বেতের তৈরি ‘জুঁইর’, যা এখন কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী কৃষি ও গৃহসামগ্রীটি। গ্রামগঞ্জে এখন পুরোপুরি যান্ত্রিক ঢেউ লেগেছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন জুঁইর কদর কমে যাচ্ছে। গ্রামবাংলার কৃষকদের বাড়ি থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে এ শিল্পটি।
হাতেগোনা দু-একজন জেলে ও কৃষকের বাড়িতে বাঁশ ও বেতের তৈরি বৃষ্টি থেকে বাঁচার অন্যতম সম্বল প্রাচীনতম বর্ষাতি ‘জুঁইর’ এখনও মাঝেমধ্যে চোখে পড়ে।
উপজেলার পাইন্দং ইউনিয়নের বেড়াজালী গ্রামের বৃদ্ধ আহমদ হোসেন জানান, ‘একসময় জুঁইর খুব কদর ছিল। কিন্তু এখন কয়েক গ্রাম খোঁজ করেও একটি জুঁইর পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ। আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ জুঁইর বিলুপ্তির পথে। একসময় ফটিকছড়ির পাইন্দং ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে ও রাঙ্গামাটিয়ার কামরাঙ্গাপাড়ার বেশ কিছু কারিগর বানাত। এখন আর কেউ ব্যবহারও করে না আর কেউ তৈরিও করে না।’
সুন্দরপুর ইউনিয়নের আজিমপুর গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি ও একসময়কার জুঁইর তৈরির কারিগর আলী আহমদ বলেন, ‘একসময় জুঁইর তৈরি করে তাদের সংসার চলত। বর্তমানে এর ব্যবহার নেই বললেও চলে। চাহিদাও নেই তাই তিনি এ কাজ আর করেন না।’ একই গ্রামের আরও কয়েকজন জুঁইর তৈরির কারিগর এখন আর আগের মতো বাড়ির আশেপাশে বাঁশ ও বেত গাছ রাখছেন না। সেগুলো কেটে বিভিন্ন চাষাবাদসহ দালান তৈরি করছেন মানুষ। তাই কাঁচামাল আর আগের মতো সহজেই পাওয়া যায় না। এখন গ্রামীণ উৎসব ও মেলাগুলোয় ‘জুঁইর’ চাহিদাও নেই। তারা আরও জানান, এক সময় বহু পরিবার ‘জুঁইর’ তৈরি করে সংসার চালাত। এখন অনেকে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন।
তিনি জানান, গ্রামীণ জনপদের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে বাবা-দাদার মাটি ও কুঁড়েঘরের বদলে ইটের বাড়িঘর তৈরি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকে বাড়িতে জুঁইর রাখতে চান না, ব্যবহার তো দূরে থাক। জুঁইর বললে এখনকার অনেকে চিনবেনও না। বলতে গেলে এটি এখন বিলুপ্তপ্রায়।’