আইএমএফের কাছে ঋণের আবেদন করেছি: অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ঋণের আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের ঋণ দরকার। সেজন্য আমরা আইএমএফের কাছে আবেদন করেছি।’ তবে এই ঋণের অঙ্ক কত, তা জানাননি তিনি।

ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে গতকাল বুধবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা জানান। মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এখন আমাদের ঋণ দরকার। সেজন্য আমরা আইএমএফের কাছে আবেদন করেছি।

‘আইএমএফের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাম্প্রতিক আলোচনা শেষে আপনি বলেছিলেন, আমরা আইএমএফের কাছ থেকে এখন কোনো ঋণ নেব না। আমাদের অর্থনীতি ভালো অবস্থানে আছে। এরই মধ্যে এমন কী পরিস্থিতি হলো যে আপনি আবার আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছেন?’ এক সাংবাদিক এ কথা জানতে চাইলে জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘তখন আমরা যদি টাকা চাইতাম, আইএমএফ নানা শর্ত দিত; দর-কষাকষির জন্য আমরা সুযোগ পেতাম না। সেজন্য তখন চাইনি। তখন আমরা একটু ভাব দেখিয়েছি। এটা দেশের স্বার্থে করা হয়েছে। ঋণ নিলে সবার জানার অধিকার আছে। আমার কাজ হচ্ছে তার ব্যাখ্যা দেয়া।’

ডলার সংকট মোকাবিলায় অনেক উদ্যোগ নেয়ার পরও কোনো কাজে আসছে না কেনÑজানতে চাইলে মোস্তফা কামাল বলেন, ‘কাজ হবে, একটু সময় লাগবে। এক্সপোর্ট বাড়ছে, রেমিট্যান্সও বাড়ছে। গত বছর রেমিট্যান্স কিছুটা কম হলেও চলতি অর্থবছর আশা করছি ভালো রেমিট্যান্স পাব। রেমিট্যান্স ও এক্সপোর্টের মাধ্যমেই ডলারের চাহিদা মেটানো হবে।’

তিনি বলেন, ‘কিছু আমদানিকারক মূল্যবৃদ্ধির কারসাজি করে আমদানি করছে। আমরা এসব অনিয়ম খতিয়ে দেখছি, তবে ডলারের মূল্য নির্ধারিত হবে চাহিদার ও জোগানের ভিত্তিতেই।’

ব্যাংক খাতে ৯-৬ সুদহার উঠিয়ে দেয়ার কথা বলেছে আইএমএফ। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি এখন ভালো অবস্থানে আছে। যদি ৯-৬ নির্ধারিত না করা হতো তাহলে কভিডের সময় ছোট-বড়-মাঝারি কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই টিকে থাকতে পারত না। ভয়াবহ বেকারত্ব সৃষ্টি হতো। আমি মনে করি ব্যাংক খাতে আমানত ও সুদের হার ৯-৬ করার উদ্যোগটি ভালো। আইএমএফ যা বলছে, তা ঠিক নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুদহার ৯-৬ করার কারণে ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। বেসরকারি খাতও চাঙা হয়েছে। সুতরাং আইএমএফ যে কথা বলেছে, তা সঠিক নয়।’

আইএমএফের পাশাপাশি দাতা সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে ঋণ চাওয়া হবে বলে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শুধু আইএমএফ নয়; বিশ্বব্যাংক, জাইকা, এডিবিসহ সব দাতা সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে ঋণ সহায়তা চাইব। আমাদের প্রতি তাদের পূর্ণ বিশ্বাস আছে। ঋণ দেয়ার জন্য তারা আমাদের পিছে পিছে আছে। কারণ বাংলাদেশ একটি ভালো দেশ, ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা আছে। উন্নয়ন সহযোগীদের বাংলাদেশের ওপর পূর্ণ আস্থা আছে। তারা জানে, বাংলাদেশ সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারবে।’

চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আইএমএফফের কাছ থেকে বাংলাদেশের ঋণ চাওয়ার বিষয়টি বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনায় রয়েছে। গত সপ্তাহে সংস্থাটির একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে এসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করলে সেই আলোচনা আরও জোর পায়।

তবে গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তা নাকচ করে বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আইএমএফের কাছে কোনো অর্থ সহায়তা চায়নি। আইএমএফও বাংলাদেশের কাছে এ ধরনের কোনো প্রস্তাব করেনি। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের আইএমএফের কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন নেই।’

বুধবার সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী। তখন তিনি আইএমএফকে চিঠি দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নেন। ‘দরকার নেই’ বলার পরে কেন গত রোববার আইএমএফকে ওই চিঠি পাঠানো হলোÑসেই প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ডলার প্রিন্ট করি না, ডলার অর্জন করতে হয়। রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ের মাধ্যমে আমরা ডলার অর্জন করি। এর মাঝে খারাপ কিছু হয়নি। এটা খুব সহজ জিনিস। আপানারা আমার জায়গায় থাকলে একই কাজ করতেন। আমরা বার্গেইন করে এভাবে ঋণ নিই। শক্ত কোনো টার্ম অ্যান্ড কন্ডিশনস যেন ঋণের মধ্যে ঢুকে না যায়, সেদিকে আমাদের লক্ষ রাখতে হয়।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০