কমতে শুরু করেছে আমদানি ডলার বাজারে স্বস্তির আভাস

জয়নাল আবেদিন: ডলারের দাম বৃদ্ধিতে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বিশ্ববাজারে। এর অন্যতম কারণ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। যুদ্ধের কারণে বেড়েছে জ্বালানির দাম, একই সঙ্গে বেড়েছে আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহƒত মুদ্রা ডলারের বিনিময়মূল্য। বাংলাদেশের বাজারেও মার্কিন এই মুদ্রার দাম বাড়ছে লাগামছাড়া ঘোড়ার মতো। রেমিট্যান্স প্রবাহে ধীরগতি ও আমদানি বেড়ে যাওয়ায় ডলারের বাজারের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশেও। সম্প্রতি কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে তা কমতে শুরু করেছে। ফলে ডলার সংকট কমতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জুন মাসে আমদানির জন্য এলসি খোলার মোট মূল্য পরিশোধের হার প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, জুলাইয়ে আমদানি মূল্য হ্রাসের হার কমতে পারে প্রায় ২৫ শতাংশ। জুন মাসে ৭৩৮ কোটি ডলার মূল্যমানের পণ্য আমদানির এলসি খোলা হয়েছে, আগের মাস মে’তে যার পরিমাণ ছিল ৮২০ কোটি ডলার। অবশ্য জুন মাসে এলসি নিষ্পত্তি প্রায় ১৮ শতাংশ বেড়ে ৮৫৫ কোটি ডলারে ওঠে। জুন মাসে নিষ্পত্তি হওয়া এলসির বড় অংশ আগে খোলা। আর এলসি খোলা কমে যাওয়ার মানে নিকট ভবিষ্যতে আমদানি ব্যয় কমবে।

সূত্র জানায়, জুনের চেয়ে এলসি আরও কমেছে জুলাই মাসে। মূল্য বিবেচনায় ২৭ তারিখ পর্যন্ত কমার হার ২৫ শতাংশ। অন্যদিকে এ সময় পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ১৯০ কোটি ডলার। মাস শেষে রেমিট্যান্স ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আগের মাস জুনে রেমিট্যান্সে এসেছিল ১৮৪ কোটি ডলার। আগামী দুই মাসের মধ্যে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রসঙ্গত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য অনেক বেড়ে যাওয়ায় কয়েক মাস ধরে আমদানি ব্যয়ে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেছে। গত বছর আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করা রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে। মূলত রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রির ফলে এমন হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিক্রি করলেও ডলারের দর বেড়েই চলেছে। আমদানির জন্য ১০০ টাকার নিচে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০৭ থেকে ১০৮ টাকায় ডলার কিনে আমদানি দায় মেটাতে হচ্ছে। রেমিট্যান্সের জন্যও ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা দরে ডলার কিনতে হচ্ছে। খোলাবাজারেও দর বেড়ে ১০৮ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, কয়েক দিন আগে যা ১১২ টাকায় ওঠে। বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় কমাতে এরই মধ্যে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব উদ্যোগের বেশিরভাগই নেয়া হয়েছে জুলাই মাসে। ফলে আমদানিতে এর প্রভাব বোঝা যাবে জুলাই মাসের তথ্য হাতে পাওয়ার পর।

বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমাতে আমদানিতে রাস টানার উদ্যোগ শুরু হয় গত মে মাস থেকে। তবে ৪ জুলাই এ ক্ষেত্রে বেশ কঠোরতা আরোপ করা হয়। গাড়ি, স্বর্ণ, টিভি, ফ্রিজসহ ২৭ ধরনের পণ্য আমদানির এলসি মার্জিন নির্ধারণ করা হয়েছে শতভাগ। আর জ্বালানি, অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য, শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল, মূলধনি যন্ত্রপাতিসহ কিছু পণ্য বাদে অন্য সব ক্ষেত্রে এলসি মার্জিনের নূ্যূনতম হার হবে ৭৫ শতাংশ। উভয় ক্ষেত্রে মার্জিনের জন্য ঋণ দেয়া যাবে না। এর মানে এলসি খোলার সময়ই আমদানিকারকের নিজস্ব উৎস থেকে পুরো অর্থ নগদে দিতে হবে।

এর আগে গত ১০ মে’র নির্দেশনায় কিছু পণ্যে এলসি মার্জিনের ন্যূনতম হার ৫০ ও ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। সরবরাহ বাড়াতে ব্যাংক ও রপ্তানিকারকের ডলার ধারণের ক্ষমতা কমানো হয়েছে। রপ্তানি আয় আসার এক দিনের মধ্যে ডলার নগদায়নের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ডলারের দর নিয়ন্ত্রণের জন্য এক ব্যাংকের রপ্তানি আয় অন্য ব্যাংকে ভাঙানোর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ইডিএফ থেকে নেয়া ঋণ কেবল রপ্তানি আয় বা জমা থাকা বৈদেশিক মুদ্রা থেকে পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে কভিডকালে দেয়া শিথিলতার মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আবার বিদেশে আটকে থাকা ১৫০ কোটি ডলারের রপ্তানি বিল এবং দায় পরিশোধ হলেও দেশে না আসা ৮৮০ কোটি ডলারের পণ্য দ্রুত আনার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।

গত ২৮ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক শেষে এফবিসিসিআই সভাপতি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বৈদেশিক মুদ্রাবাজার অস্থিরতার পেছনে যেসব ব্যবসায়ী ও ব্যাংক দায়ী, তাদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আমরা একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে আছি। এটা ওভারকাম করতে পারলে সবকিছু স্বাভাবিক হবে। এমন অবস্থায় সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা দরকার।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০