শেয়ার বিজ ডেস্ক: ইউক্রেনের ওডেসা বন্দর থেকে শস্যভর্তি প্রথম জাহাজটি লেবাননের উদ্দেশে রওনা করেছে। গতকাল সোমবার তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানায়। খবর: এএফপি।
ইউক্রেনের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় রাজোনি নামে সিয়েরা লিওনের পতাকাবাহী জাহাজটি রওনা করে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, রাজোনি জাহাজটি ওডেসা ছেড়ে লেবাননের ত্রিপোলির উদ্দেশে যাত্রা করেছে। আজ এটির ইস্তাম্বুলে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। ইস্তাম্বুলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এর যাত্রা অব্যাহত থাকবে।
ইউক্রেনের অবকাঠামো-বিষয়ক মন্ত্রী ওলেকসান্দর কুবরাকভ জানায়, জাহাজটিতে ২৬ হাজার টন ভুট্টা রয়েছে। বসফরাস প্রণালী ও ওই অঞ্চলে জাহাজ চলাচল-সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ ইয়োরুক ইসিক বলেন, কাল (আজ) মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ জাহাজটি বসফরাস প্রণালী মুখে পৌঁছাতে পারে।
২২ জুলাই শস্য চুক্তি করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। এর আওতায় ভবিষ্যতে আরও কিছু শস্যবাহী জাহাজ ইউক্রেনের বন্দর ছেড়ে যাবে। বিশ্বে মোট গম রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশ হয় রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। ইউক্রেন বিশ্বের চতুর্থ খাদ্যশস্য রপ্তানিকারক দেশ। বিশ্বের ৪২ ভাগ সূর্যমুখী তেল উৎপাদিত হয় দেশটিতে। এছাড়া মোট ভুট্টার ১৬ শতাংশ ও গমের ৯ শতাংশ উৎপাদন করে দেশটি। এই যুদ্ধের জেরে বিশ্বে গমের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক রাশিয়া থেকেও রপ্তানি কমে গেছে। এরপর যুদ্ধের কারণে কৃষ্ণসাগরে শস্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিশ্বজুড়ে খাদ্যসংকট দেখা দেয়। বিশেষ করে গমভিত্তিক তৈরি রুটি ও পাস্তার মতো অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। এছাড়া রান্নার তেল ও সারের দামও বিশ্বজুড়ে বেড়েছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ ‘প্রচণ্ড রকমের খাদ্যসংকটে’ ভুগছেন। সবমিলিয়ে ইউক্রেনে যুদ্ধের
ফলে ধাক্কা খেয়েছে গোটা বিশ্ব। এ সংকট মোকাবিলায় গত ২২ জুলাই জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে শস্য রপ্তানির এক ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের পর বিশ্ববাজারে গমের দাম কমতে শুরু করে।
গত জুলাইয়ে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত শস্য ও সার রপ্তানি চুক্তির আওতায় ইউক্রেন থেকে শস্যবাহী জাহাজের এই যাত্রা সম্ভব হয়েছে। চুক্তির অধীন ইউক্রেনের বৃহত্তম রপ্তানি বন্দর ওডেসাসহ তিনটি বন্দর দিয়ে শস্য ও সার রপ্তানি হবে। চুক্তিতে চেরনোমোরস্ক, ওদেসা ও পিভদেন্নি বন্দর থেকে জাহাজ ছেড়ে যাওয়া এবং অন্য বন্দর থেকে সেখানে জাহাজ আসার জন্য নিরাপদ পথ নিশ্চিত করা হয়েছে।
রাজোনি জাহাজটি তৈরি করা হয়েছে ১৯৯৬ সালে। এর দৈর্ঘ্য ১৮৬ মিটার ও প্রস্থ ২৫ মিটার। সিয়েরা লিওনের পতাকার অধীনে চলাচলকারী এ জাহাজটির সক্ষমতা ৩০ হাজার টন। বহুল কাক্সিক্ষত এই চুক্তিতে পৌঁছাতে সময় লেগেছে প্রায় দুই মাস। আর এই চুক্তির স্থায়িত্ব হবে ১২০ দিন। তবে উভয় পক্ষ রাজি হলে চুক্তির মেয়াদ নবায়ন করা হতে পারে।
চুক্তির আওতায় রপ্তানি কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করতে গত বুধবার ইস্তাম্বুলে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশেষ যৌথ সহযোগিতা কেন্দ্র চালু করে তুরস্ক। যুদ্ধরত দুই দেশ এবং তুরস্ক ও জাতিসংঘের
সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের ওই কেন্দ্রে নিযুক্ত করা হয়েছে। তাদের প্রাথমিক কাজ হলো, ইউক্রেনের শস্যবাহী জাহাজগুলো চলাচলের জন্য নিরাপদ পথ পাচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা এবং এগুলোয় নিষিদ্ধ অস্ত্র রয়েছে কি না, তা নজরদারি করা।
উল্লেখ্য, ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করে রাশিয়া। কিন্তু এখনও কিয়েভ দখল করতে পারেনি তারা। লড়াইয়ে কয়েক হাজার সেনা ও বিপুল অস্ত্র খুইয়ে গত এপ্রিলে সামরিক অভিযানের প্রথম পর্বে ইতি টানার কথা ঘোষণা করে রাশিয়া। এরই মধ্যে মারিওপোল দখল করেছে রুশ বাহিনী। ডনবাস অঞ্চলে অভিযান আরও তীব্র করেছে পুতিনের বাহিনী। এখনও ডনবাসের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলে রুশপন্থি বিদ্রোহীদের সঙ্গে তুমুল লড়াই চলছে ইউক্রেনীয় সেনাদের।