শীর্ষ ১০ দেশি কোম্পানির ক্যাপাসিটি চার্জ ৪৪ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা

বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা প্রতি বছর বাড়লেও বড় অংশই বসে থাকছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ থেকে প্রচুর আয় করেছে বিনিয়োগকারী কোম্পানিগুলো। সাম্প্রতিক বিদ্যুৎ খাতের সংকটে নতুন করে আলোচনায় আসে ক্যাপাসিটি চার্জ। তাই গত এক যুগে এ খাতে সরকারের ব্যয় ও কোম্পানিগুলোর আয় নিয়ে অনুসন্ধান করেছে শেয়ার বিজ। এ নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজনের আজ ছাপা হচ্ছে দ্বিতীয় পর্ব

ইসমাইল আলী: বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরশীলতা গত এক যুগে কয়েক গুণ বেড়েছে। এ সময় দেশি কিছু কোম্পানি এ খাতে বিনিয়োগ করেছে। এতে বিদ্যুৎ খাত গুটিকয়েক করপোরেটের দখলে চলে গেছে। যদিও বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর বড় অংশই নিয়মিত বসে থাকছে। তবুও এ খাতে প্রতি বছর বড় অঙ্কের ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি)।

সংস্থাটির হিসাব বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১০-১১ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত ১২ বছরে পিডিবি’কে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় ৮৬ হাজার ৬৬৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে শীর্ষ ১০টি গ্রুপ/কোম্পানির পকেটে গেছে ৪৪ হাজার ৬৪০ কোটি ২২ লাখ টাকা। অর্থাৎ শীর্ষ দেশি ১০টি গ্রুপ/কোম্পানি ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে এ খাতে ব্যয়ের ৫১ দশমিক ৫১ শতাংশ।

পিডিবির তথ্যমতে, গত ১২ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে শীর্ষে রয়েছে সামিট গ্রুপ। বর্তমানে গ্রুপটির অধীনে সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া বিবিয়ানা-২-এর ৮০ শতাংশ ও খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (কেপিসিএল) ৩৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সামিটের কাছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে সামিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ৪৫১ মেগাওয়াট। গত ১২ বছরে গ্রুপটি ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে প্রায় ১০ হাজার ৮৭২ কোটি ৫৪ লাখ  টাকা, যা মোট ক্যাপাসিটি চার্জের ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে দ্বিতীয় অবস্থানে দেশীয় ইউনাইটেড গ্রুপ। বর্তমানে এ গ্রুপটির ছয়টি নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া গ্রুপটির কাছে কেপিসিএলের ৩৫ শতাংশ, পায়রায় একটি কেন্দ্রের ৮২ দশমিক ৫০ শতাংশ ও আশুগঞ্জের একটি কেন্দ্রের ৭১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। সব মিলিয়ে ইউনাইটেড গ্রুপের বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার পাঁচ মেগাওয়াট। ১২ বছরে গ্রুপটি ছয় হাজার ৫০৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে, যা মোট ক্যাপাসিটি চার্জের সাড়ে সাত শতাংশ।

দেশীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাংলাক্যাট রয়েছে ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে তৃতীয় স্থানে। এ গ্রুপের নিজস্ব পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে বর্তমানে, যেগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা ৬০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে অ্যাক্রন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের (ইউনিট-১, ২ ও ৩) উৎপাদন সক্ষমতা ৩০০ মেগাওয়াট এবং বাংলা ট্র্যাক-১ ও ২ কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ৩০০ মেগাওয়াট। এছাড়া প্যারামাউন্ট বি. ট্রাক ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৪৯ শতাংশ রয়েছে বাংলাক্যাটের হাতে। এতে সব মিলিয়ে এ গ্রুপটি ১২ বছরে পাঁচ হাজার ৬৯৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে। মোট ক্যাপাসিটি চার্জের তা ছয় দশমিক ৫৮ শতাংশ।

দেশীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে চতুর্থ অবস্থানে থাকা ওরিয়ন গ্রুপের বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৫০৭ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ১০০ মেগাওয়াটের একটি নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুৎকেন্দ্রও রয়েছে। এ গ্রুপটি এক যুগে চার হাজার ৫৩১ কোটি ১১ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে। মোট ক্যাপাসিটি চার্জের তা পাঁচ দশমিক ২৩ শতাংশ।

ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল)। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের পাঁচটি সমিতির অধীনে গড়ে ওঠা এ কোম্পানিটির বর্তমান উৎপাদন সক্ষমতা ১৮২ মেগাওয়াট। ১২ বছরে এ কোম্পানির পকেটে গেছে চার হাজার ৪১৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা, যা মোট ক্যাপাসিটি চার্জের পাঁচ দশমিক ১০ শতাংশ।

এদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কেপিসিএলের বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে দুটি। এছাড়া পায়রায় ইউনাইটেড গ্রুপের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে কেপিসিএলের কাছে। সামিট ও ইউনাইটেড গ্রুপের সমান ৩৫ শতাংশ করে ৭০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে কোম্পানিটির। বাকি ৩০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে। কোম্পানি এক যুগে ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে তিন হাজার ৬৪৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা কোম্পানিটির জন্য পকেটে গেছে চার দশমিক ২০ শতাংশ অর্থ।

ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে এর পর রয়েছে মোহাম্মদী গ্রুপ। সপ্তম অবস্থানে স্থানে থাকা গ্রুপটির বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৩২৫ মেগাওয়াট। দেশ এনার্জি নামে তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে রয়েছে এ গ্রুপের। ১২ বছরে গ্রুপটি দুই হাজার ৫৩৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে, যা মোট ক্যাপাসিটি চার্জের দুই দশমিক ৯২ শতাংশ।

দেশীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে অষ্টম অবস্থানে থাকা হোসাফ গ্রুপের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বর্তমানে ২১৩ মেগাওয়াট। এনার্জি প্রিমা ও হোসাফ পাওয়ার নামে এ গ্রুপের কেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। ১২ বছরে এ গ্রুপটি ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে দুই হাজার ৪৫৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, যা মোট ক্যাপাসিটি চার্জের দুই দশমিক ৮৪ শতাংশ।

ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে নবম অবস্থানে রয়েছে ডরিন গ্রুপ। এ গ্রুপটির অধীনে বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ছয়টি, যেগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৩৬৯ মেগাওয়াট। ১২ বছরে এ গ্রুপটি দুই হাজার ১৩৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে, যা মোট ক্যাপাসিটি চার্জের দুই দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে দশম অবস্থানে থাকা সিকদার গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র বর্তমানে দুটি। এগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৯৪ মেগাওয়াট। পাওয়ার প্যাক নামে উৎপাদন করা এ গ্রুপটি গত অর্থবছর এক হাজার ৮৪২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে। মোট ক্যাপাসিটি চার্জের তা দুই দশমিক ১৩ শতাংশ।

উপরোল্লিখিত ১০টি গ্রুপ/কোম্পানির বাইরে দেশীয় ম্যাক্স গ্রুপ, সিনহা গ্রুপ, রিজেন্ট গ্রুপ, এনার্জি প্যাক, বারাকা পাওয়ার, কনফিডেন্স গ্রুপ, প্যারামাউন্ট গ্রুপসহ আরও কয়েকটি কোম্পানি বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করেছে। এসব গ্রুপ/কোম্পানির এক বা একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বর্তমানে উৎপাদনে রয়েছে। তবে এদের আদায়কৃত ক্যাপাসিটি চার্জ এ খাতে ব্যয়ের দুই শতাংশের কম।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০