অবৈধ চাল মজুতে ১৬ হাজার মিলার কালো তালিকাভুক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক: অবৈধভাবে চাল মজুত করায় ১৬ হাজার মিলমালিককে তিন বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এসব মিলমালিকের থেকে আগামী তিন বছর সরকার চাল কিনবে না বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা জানান।

বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির কারণ উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে, হাওর অঞ্চলে বন্যার সময় অসাধু ব্যবসায়ীরা সস্তা দামে চাল মজুত করেছিল। আমরা যে ক্রয়মূল্য (৩৪ টাকা) নির্ধারণ করেছিলাম তার থেকে বাজারদরের সঙ্গে বিরাট ফারাক ছিল, যার ফলে আমরা চাল সংগ্রহ করতে পারিনি।

অসাধু চাল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, যেসব মিলমালিক অসাধুভাবে চাল মজুত করেছে তাদের আমরা তিন বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করেছি। তাদের কাছ থেকে আমরা আর চাল কিনবো না।

টানা কয়েক বছর বাম্পার ফলনের কারণে কয়েক বছর চালের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও এবার বোরো মৌসুমে আগাম বন্যায় সরকারি হিসাবে ছয় লাখ টনের মতো ধান নষ্ট হয় হাওরে। পাশাপাশি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে (১০ টাকা কেজি দরের চাল) সাড়ে সাত লাখ টন চাল বিতরণ করায় সরকারি মজুত অনেক কমে আসে।

এ পরিস্থিতিতে বাজারে চালের দাম বাড়তে শুরু করলে সরকার উগ্যোগী হয়। সরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির জন্য দরপত্র দেওয়ার পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়।

রোজার মধ্যে চালের দাম যখন ৬০ টাকা কেজিতে পৌঁছে গেলো, তখন পাইকার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ছিল, স্থানীয় পর্যায়ের শিল্পগ্রুপগুলো অটোমিল করে সারা দেশের চালের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে সরকার চেষ্টা করেও তখন চালের মূল্য স্বাভাবিক অবস্থায় নামিয়ে আনতে পারেনি।

বাংলাদেশে সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত চালকলের সংখ্যা জানতে চাইলে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বদরুল হাসান বলেন, দেশে প্রায় ২০ হাজার মিল আছে, যাদের মধ্যে ১৬ হাজার মিলকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

খাদ্যমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, বেসরকারিভাবে ভারত থেকে চাল আসার পর মজুতকারীরা এখন ধরে রাখা চাল বাজারে ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে।

সরকারিভাবে ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা চালের প্রথম চালানে ২০ হাজার মেট্রিক টন চাল নিয়ে একটি জাহাজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে এসেছে জানিয়ে কামরুল বলেন, কিছু কাস্টমস ফরমালিটিজ আছে, সেগুলো যদি আজকে শেষ হয় তাহলে কালকে সকাল থেকে খালাস করতে পারবো। আর ফরমালিটিজগুলো যদি আজকে শেষে হতে বিলম্ব হয় তাহলে রোববার খালাস হয়ে যাবে।

ভিয়েতনাম থেকে সরকারিভাবে মোট আড়াই লাখ টন চাল আমদানি করা হচ্ছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় চালানে ১৮ জুলাই ২২ হাজার টন এবং ৩০ জুলাই ২১ হাজার টন ও ৩০ হাজার টনের চালান দেশে আসবে বলে জানান কামরুল।

ভিয়েতনামে বাকি চাল জাহাজে তোলা শুরু হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আগামী ১৫ থেকে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে সব চাল লোডিং শেষ হবে, এরপর আসতে যতটুকু সময় লাগে।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারিভাবে চাল আনতে চারটি টেন্ডার হয়েছে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবারও আরেকটি টেন্ডার হচ্ছে। টেন্ডারে ৪০ দিনের মধ্যে চাল সরবরাহ করতে বলা হচ্ছে। ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড থেকেও সরকারিভাবে চাল আসছে।

তিনি জানান, আগামী ১৬ জুলাই ভারতের একটি প্রতিনিধি দল এবং ২৮ জুলাই থাইল্যান্ডের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা আসবে, তাদের সঙ্গে বসে দরদাম ঠিক করে জিটুজি ভিত্তিতে চাল আনা হবে।

এ ছাড়া কম্বোডিয়া সমঝোতা চুক্তির খসড়া পাঠিয়েছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আগস্টে কম্বোডিয়া যাবো। সেখান থেকেও জিটুজি ভিত্তিতে চাল আনতে পারবো। মিয়ানমারও আমাদের চাল দিতে আগ্রহী।

তবে বর্তমানে কী পরিমাণ খাদ্য মজুত আছে সে বিষয়ে মন্ত্রীকে বারবার প্রশ্ন করা হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০