প্রতিনিধি, শ্রীপুর (গাজীপুর): হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির খবরে গাজীপুরে শুরু হয়েছে গণপরিবহন সংকট। সড়কে যেসব বাস চলাচল করছে সেগুলো যাত্রীর তুলনায় কম। অনেকে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন। তবে সিএনজিচালিত টেম্পোগুলো চলাচল করছে। বাস না পেয়ে যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে উঠছেন টেম্পোগুলোয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
গতকাল থেকে লিটারপ্রতি ডিজেল ৮০ টাকা থেকে ৩৪ টাকা বেড়ে ১১৪ টাকা, কেরোসিন ৩৪ টাকা বেড়ে ১১৪ টাকা, অকটেন ৪৬ টাকা বেড়ে ১৩৫ টাকা এবং পেট্রোল ৪৬ টাকা বেড়ে ১৩০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার পর্যন্ত কেরোসিন ও ডিজেল প্রতি লিটার ৮০ টাকা, অকটেন প্রতি লিটার ৮৯ টাকা এবং পেট্রোল প্রতি লিটার ৮৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
গতকাল সকাল থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের শ্রীপুরে রাজেন্দ্রপুর, ভবানীপুর, মাস্টারবাড়ী, মাওনা চৌরাস্তা, নয়নপুর, এমসি বাজার ও জৈনা বাজার বাসস্ট্যান্ডে বাসের জন্য যাত্রীদের দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। সড়ক ফাঁকা থাকলেও অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরও অনেকে বাস পাচ্ছেন না। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
আল-আমিন হোসেন এসকিউ গ্রুপের পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তিনি জানান, রাত বা সকালেও যদি জানতাম পরিবহন বন্ধ তাহলে সময় হাতে নিয়ে বা অন্য ব্যবস্থা করে চলে যেতাম অফিসে। সকালে সড়কে এসে শুনি গাড়ি চলাচল বন্ধ। এটা তো কোনো নিয়মের পর্যায়ে পড়ে না। এই সুযোগে রিকশাওয়ালাও ডাবল ভাড়া আদায় করে নিচ্ছে।
এদিকে শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণার পর থেকেই অনেক পাম্প তেল বিক্রি বন্ধ করে দেয়। রাতে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ থেকে তেলের দাম বাড়ার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই পাম্পগুলোর কর্তৃপক্ষ তেল দেয়া বন্ধ করে দেয়।
যেসব যানবাহন ও মোটরসাইকেল তেল কিনতে পাম্পে গেছে, তাদের পাম্প ম্যনেজার তেল নেই বলে ফিরিয়ে দিচ্ছে। অনেক পাম্প কর্মকর্মতাদের সঙ্গে তেল নিতে আসা যানবাহন ও মোটরসাইকেল চালকদের তর্কে জড়াতে দেখা গেছে।
শ্রীপুরের পলক সিএনজির ব্যবস্থাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা কী করব? জ্বালানির দাম বেড়ে গেলে আমরাও বাড়িয়ে বিক্রি করি। আগের জ্বালানি মজুত ছিল আপনাদের, সেই জ্বালানি আজ থেকে বাড়ানো দামে কেন বিক্রি করছেনÑএ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের জ্বালানি মজুত থাকে না। প্রতিদিন আমরা জ্বালানি নিয়ে আসি। যদি কোনো পাম্পে মজুত থেকে থাকে, তবে সেটি খুবই অল্প।
গাজীপুরের বাঘের বাজার এলাকার মণ্ডল ইন্টিমেটস গার্মেন্টসের কর্মকর্তা মো. পলাশ জানান, তিনি প্রতিদিন বোর্ড বাজার থেকে মোটরসাইকেলে অফিসে যাতায়াত করেন। পেট্রোল ও অকটেনের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাইকে অফিসে আসা সম্ভব নয়। যা বেতন পাই তা সারা মাসের আসা-যাওয়ার তেল খরচে চলে যাবে। তাই আজকে বাইক ছাড়াই অফিসে আসছি।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার আলম এশিয়া পরিবহনের চালক আব্দুল জব্বার জানান, হঠাৎ করে ডিজেলের দাম যে পরিমাণ বেড়েছে, তাতে আগের ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করা আমাদের সম্ভব হবে না। তাই আপাতত যাত্রী পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে।
গাজীপুর জেলা সড়ক পরিবহন কর্মচারী শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান উদ্দিন বলেন, সড়কে যানবাহনের সংকট নেই। তবে যেসব পরিবহনে জ্বালানি ছিল না তারা দাম বৃদ্ধির কারণে অনেকে সড়কে গাড়ি নিয়ে বের হয়নি। আমরা পরিবহন চালক বা মালিকদের কোনো ধরনের নির্দেশনা দিইনি।