শেয়ারবাজার কেন নিন্মমুখীহয়

শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার: সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অনেকে মনে করেন, শেয়ার কিনলেই দাম কমে যায়। প্রকৃত পক্ষে তা সঠিক নয়। যারা সঠিক দামে শেয়ার কিনতে পারেন না তাদেরই কেনার পর দাম কমে যায়। আসলে কিছু গতানুগতিক কারণে শেয়ারবাজার নিন্মমুখী হয়।

লভ্যাংশ বিতরণ: যখন কোনো কোম্পানি তার বার্ষিক লভ্যাংশ প্রদান করে এবং রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করে, উক্ত রেকর্ড ডেটের পর শেয়ার মূল্য কমতির দিকে থাকে। কারণ লভ্যাংশ গ্রহণের পর ক্রেতার আগ্রহ কমতে থাকে। অথবা শেয়ার ডিবিডেন্ড পাওয়ার পর বাজার মূলধন বেড়ে যায় ইপিএস কমার সম্ভাবনা থাকে। তাই শেয়ার মার্কেটে শেয়ারদর হারাতে থাকে।

বাজার চাহিদা: কোম্পানির উৎপাদিত পণ্য বা সেবার বাজার চাহিদা নি¤œমুখী হলে অর্থাৎ চাহিদা কমতে থাকলে শেয়ারের বাজার মূল্য নি¤œমুখী হতে থাকে। কারণ এতে করে কোম্পানির লভ্যাংশ কমে যেতে থাকে এবং বিনিয়োগকারীরাও স্বল্প পরিমাণে লভ্যাংশের ভাগীদার হবেন।

আন্তর্জাতিক বাজার: ব্যবসা-বাণিজ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো রকম নেতিবাচক ঘটনা ঘটলে, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে কোম্পানির উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা কমলে উক্ত কোম্পানির শেয়ারের বাজার মূল্য নিন্মমুখী হতে থাকবে।

কাঁচামালের অনিশ্চয়তা: কোম্পানির উৎপাদন প্রক্রিয়ার মূল উপাদান কাঁচামালের সহজলভ্যতার ওপর কোম্পানির মূল্যমান অনেকটা নির্ভরশীল। কারণ কাঁচামালের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হলে বিক্রি কমে এতে কোম্পানির লাভ কমে যায়; ফলে শেয়ারের দামের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকে অর্থাৎ শেয়ারের দাম কমতে থাকে।

কোম্পানি সম্পর্কে নেতিবাচক খবর: কোম্পানির পণ্য এবং ব্যবস্থাপনা পরিষদ সম্পর্কে একটি নেতিবাচক খবর শেয়ার দরের ব্যাপক পতন ঘটাতে পারে, তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এ ব্যাপারে কোম্পানির প্রয়োজনীয় সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সচেতন থাকতে হবে।

আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থা: উৎপাদন ব্যবস্থা আধুনিকায়ন না করলে কোম্পানির ভালো লাভ করা সম্ভব হয় না। বর্তমান বাজারে উৎপাদন প্রক্রিয়ার আধুনিক মেশিন আবিষ্কার হয়েছে, যা পণ্যের উৎপাদন প্রক্রিয়াকে আধুনিকায়ন করেছে এবং উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করেছে। পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি করে কোম্পানি যদি আধুনিক উৎপাদন পদ্ধতি অনুসরণ করতে না পারে, তাহলে শেয়ারবাজার উক্ত কোম্পানির শেয়ারদর নিন্মমুখী হবে।

কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ: অযোগ্য ও অদক্ষ্য কোনো ব্যক্তিকে যদি পরিচালনা পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাহলে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে এবং কোম্পানির প্রতি শেয়ার হোল্ডাররা তাদের আস্থা হারিয়ে ফেলবেন; যার ফলে বাজার নিন্মমুখী।

চুক্তি বাতিল: কোনো প্রকার বাণিজ্যিক চুক্তি বাতিল হলে কোম্পানির মার্কেট ভ্যালুতে এফেক্ট করে। ফলে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শেয়ারদর কমে যায়। সুতরাং কোম্পানির প্রতিটি চুক্তি ও চুক্তির মেয়াদ, কার্য সম্পাদন সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। তা না হলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

নতুন বাজার ধরতে না পারা: কোম্পানির বাণিজ্য শাখার লোকজন যদি প্রতিনিয়ত নতুন বাজার সৃষ্টি বা কাস্টমার তৈরি করতে না পারে তাহলে ব্যবসা খারাপ হবে দাম কমবে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ: জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো দৈব দুর্যোগ আমাদের বাজারকে বড় ধরনের প্রভাবিত করে। অর্থাৎ বন্যা, খরা, মহামারির কারণে বাজারে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতা লক্ষ্য করা যায়। কারণ দৈব দুর্যোগে ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতা বা উৎপাদন সক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এতে শেয়ারবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

যুদ্ধ বিগ্রহ: দেশীয় ও আন্তর্জাতিক যুদ্ধ বিগ্রহ বাজার চাহিদাকে প্রভাবিত করে, আবার কাঁচামালের জোগানের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এর ফলে কোম্পানির উৎপাদন ও বিক্রয় ব্যবস্থা ব্যাহত হয়। কোম্পানি ক্ষতির সম্মুখীন হয়, তাই শেয়ার মূল্যে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা: বাজারে যদি নতুন করে বড় কোনো বিনিয়োগকারী আসেন এবং শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি করে, যা মোকাবিলা করা বর্তমানে কোম্পানির সক্ষমতা নেই তাহলে তা কোম্পানির অর্থনৈতিক কাঠামোতে আঘাত হানবেই।

বৈদেশিক বিনিয়োগ হারানো: কোনো কোম্পানির বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরা যদি তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ প্রত্যাহার করে তাহলে শেয়ারবাজারে নিন্মমুখী হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাবে।

উদ্যোক্তাদের শেয়ার হ্রাস: কোম্পানির উদ্যোক্তারা যদি তাদের ধারণকৃত অংশের শেয়ার বাজারে ছেড়ে দিয়ে নগদায়ন করে তাহলে বাজারে নিন্মমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাবে।

অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি: দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার মন্দা পরিস্থিতির মধ্যে পড়লে কোম্পানির শেয়ারের বাজারদর পড়ে যায় অর্থাৎ নিন্মমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।

নীতিমালার প্রভাব: আমাদের দেশে সরকারি অথবা ব্যাংক-বিমা কোম্পানির বিভিন্ন ব্যবসায়িক নীতিগত পরিবর্তনের ফলে কোম্পানির উৎপাদন পর্যায়ের পরিবর্তন হয়। আবার সরকারের কর কাঠামো বা ব্যাংকের সুদ কাঠামোর পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে নিন্মমুখী ধারা পরিলক্ষিত হয়।

অর্থবাজার একটি অতি সংবেদনশীল বাজার। এখানে উপরোক্ত যে কোনো ধরনের পরিবর্তন মার্কেটকে সরাসরি প্রভাবিত করে। তা বিনিয়োগকারীদের সব বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগ করতে হবে, নিজের পুঁজিকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। ওয়ারেন বাফেটের একটি উক্তি প্রনিধানযোগ্য। তা হলো ‘সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো, তুমি কী করছ সেটা না জানা’।

সহকারী অধ্যাপক

ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি, চট্টগ্রাম

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০