জ্বালানি তেলের বর্ধিত দাম প্রত্যাহার করুন

বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। যেখানে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১৪০ ডলার থেকে ৯০ ডলারে নেমে এসেছে, সেখানে বাংলাদেশ সরকার ভোক্তা পর্যায়ে কোনো প্রকার আলাপ-আলোচনা ছাড়াই প্রায় ৪২ শতাংশ থেকে ৫১ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে।

ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ৮০ টাকা থেকে ১১৪ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ দাম বৃদ্ধির হার প্রায় ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। পেট্রোলের দাম লিটারপ্রতি ৮৬ টাকা থেকে ১৩০। অর্থাৎ বৃদ্ধির হার ৫১ দশমিক ১৬ শতাংশ। অকটেনের দাম ৮৯ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা করা হয়েছে, বৃদ্ধির হার ৫১ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

এদিকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাসভাড়া বৃদ্ধি করেছে প্রায় ২২ শতাংশ। অর্থাৎ পরিবহনের ব্যয় বৃদ্ধির ফলে পরিবহন মালিক সমিতি তাদের ভাড়াও বৃদ্ধি করেছে।

জ্বালানি বৃদ্ধির প্রভাব প্রায় সব খাতেই পড়ে। এর মধ্যে প্রধান প্রভাব পড়ে কৃষি ও পরিবহন খাতে। কৃষকদের বড় একটা অংশ ব্যয় হয় সেচ কাজে। যেখানে ডিজেল ব্যবহার করা হয়। এরপর এসব পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে বাজারে আসে। পরিবহনের বাড়া বৃদ্ধির ফলে এসব পণ্যের দাম বেড়ে যায়। যার প্রভাব পড়ে ভোক্তা পর্যায়ে। কিন্তু বিপরীতে ভোক্তা বা সাধারণ জনগণের তো সে তুলনায় আয় বাড়ে না। ফলে একজন ভোক্তা তার পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণেও ব্যর্থ হয়।

এভাবে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পায়। যার প্রভাবে মানুষ বিপর্যস্ত হয়। ইতঃপূর্বে আমাদের দেশে মূল্যস্ফীতি গত ৯ বছরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। অর্থাৎ ৭.৫৬ শতাংশ, যা সাধারণ জনগণের জন্য অস্বস্তিকর এবং যা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মানকে ব্যাহত করে। বিশেষ করে নি¤œবিত্ত-মধ্যবিত্ত মানুষ যে আর্থিকভাবে কতটা সংকটপূর্ণ অবস্থায় পড়বে তা সহজেই অনুমেয়।

সর্বোপরি, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি শুধু একটি পণ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়; বরং এর সঙ্গে পরিবহন, কৃষিশিল্প, ঔষধশিল্প, নির্মাণশিল্প, পোশাকশিল্পÑসব ধরনের খাদ্যদ্রব্য সামগ্রীসহ রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের ভোক্তা ও ব্যবহারকারী সম্পর্কিত। অর্থাৎ নি¤œ থেকে উচ্চতর সব পর্যায়ে এর অর্থনৈতিক বিরূপ প্রভাব ফেলবে। বর্তমানে দেশে জ্বালানি মজুতের যে ক্ষমতা তা আরও দীর্ঘায়িত করে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে একটি দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি স্থায়ীভাবে জ্বালানি উত্তোলনের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে যেকোনো অবস্থাতেই হোক স্থানীয় বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি হ্রাস করতে হবে।

শহিদুল ইসলাম

শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ

ফেনী সরকারি কলেজ, ফেনী

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০