নিজস্ব প্রতিবেদক: পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মো. হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সহকারী পরিচালক জাভেদ হাবীব মঙ্গলবার পটুয়াখালীতে মামলাটি দায়ের করেন।
এজাহারে বলা হয়েছে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ও জমি বরাদ্দে কলাপাড়া ইউএনওর স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অতিরিক্ত ৪২ জনের নামে প্রায় ৭২ একর ৬৩ শতাংশ খাসজমি রেজিস্ট্রি করে দেন সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবির।
তার আগে একই বিষয়ে গত ৪ আগস্ট সার্ভেয়ার মো. হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বাদী হয়ে কলাপাড়া থানায় মামলা করেন। মামলাটি দুদকের তফসিলভুক্ত হওয়ায় থানা থেকে দুদকের কাছে পাঠানো হয়।
মামলায় ইউএনওর স্বাক্ষরিত মূল নথি গোপন করে ৪২টি কবুলিয়ত খেপুপাড়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে রেজিস্ট্রি করে দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে সার্ভেয়ার হুমায়ুনের বিরুদ্ধে।
এজাহারে বলা হয়েছে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীনদের চূড়ান্ত নামের তালিকায় স্বাক্ষর করে ওই তালিকা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে জমা দিতে হুমায়ুনকে নির্দেশ দেন ইউএনও। ভূমিহীনদের মাঝে খাসজমি রেজিস্ট্রি করে দিতে সার্ভেয়ারকে ক্ষমতাও দেন তিনি। এ সুযোগে চূড়ান্ত তালিকা পাল্টে নিজের পছন্দের একটি তালিকা প্রস্তুত করেন সার্ভেয়ার, যাতে তিনি অতিরিক্ত ৪২ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। পাল্টে দেয়া তালিকায় ইউএনওর স্বাক্ষর স্ক্যান করে সুকৌশলে বসিয়ে দেন সার্ভেয়ার হুমায়ুন। পরে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে তাদের অনুকূলে খাসজমি রেজিস্ট্রিও করে দেন।
উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে গত ২৮ মার্চ ইস্যুকৃত এক নম্বর স্মারকে ২২ ভূমিহীনের স্থলে ৩১ জন, ২৪ এপ্রিল দুই নম্বর স্মারকে ১২০ জনের পরিবর্তে ১৩২ এবং ৯ মে তিন নম্বর স্মারকে ৫৩ জনের স্থলে ৭৪ জন ভূমিহীন দেখিয়ে কবুলিয়ত রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। ১৯৫ জনের পরিবর্তে ২৩৭ জনকে জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়া হয়।
ইউএনওর কার্যালয় সূত্র বলছে, সরকার যেখানে প্রত্যেক ভূমিহীন পরিবারকে দুই শতাংশ জমিসহ ঘর দিচ্ছে, সেখানে অতিরিক্ত ওই ৪২ জনের মধ্যে কারও নামে দুই একর, কারও নামে দেড় একর এবং কারও নামে তিন একর করে জমি সাব-রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করে দেয়া হয়েছে। যাদের নামে অতিরিক্ত ৭২ একর ৬৩ শতাংশ খাস জমি রেজিস্ট্রি করা হয়, যার আনুমানিক মূল্য ২৫ কোটি টাকা। যাদের জমি দেয়া হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবির মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে এ ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. ওবায়দুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ওই ৪২ জনের কারও নামে কোনো খাসজমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া সাব-রেজিস্ট্রার তালিকা দেখে রেজিস্ট্রি করে দেবেন, এটাই ছিল নিয়ম। তিনিও তালিকা যাচাই না করে কবুলিয়ত রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন। ৫ আগস্ট সার্ভেয়ারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।