বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, রাবি : রাবির মতিহার হলে ছাত্রলীগ কর্তৃক শিক্ষার্থীকে নির্মম নির্যাতন ও টাকা ছিনতাই, বিভিন্ন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও নিপীড়ন এবং শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) নিপীড়নবিরোধী ছাত্র-শিক্ষক ঐক্য।
আজ সোমবার (২২ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের পাশের প্যারিস রোডে প্রতিবাদ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।
প্রশাসনের প্রশ্রয়েই ছাত্রলীগের নির্যাতন সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছে জানিয়ে রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, ছাত্রলীগ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে। শত শত শিক্ষার্থীকে বঞ্চিত করে গুটিকয়েক সন্ত্রাসীকে নিয়ে তারা হাঁটছে। এ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা মেধা নিয়ে ভর্তি হয়ে কিছু শিক্ষকের মদতের কারণে চোর, বাটপার, সন্ত্রাসী হয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়। পরবর্তীতে তারা দেশের যে সেক্টরেই যাচ্ছে, সেখানেই দুর্নীতির আখড়া বানিয়ে ফেলছে। মতিহার হলে সামসুল ইসলামের ওপর যে নির্যাতন করা হয়েছে, তার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাব।
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি নাইমুল ইসলাম নাইম বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে রাজনৈতিক যে অপসংস্কৃতির চর্চা চলছে, তা শুধু একটি সংগঠনই করছে আর তা হলো ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগ এখন ছাত্রলীগের হাত থেকেও রক্ষা পাচ্ছে না। হোটেল মালিক থেকে চাঁদাবাজি, দোকান থেকে ছিনতাই, শিক্ষার্থীদের মারধর, সিটবাণিজ্যসহ অনেক অপকর্মে ছাত্রলীগ জড়িত। এমনসব অপকর্ম করেও তারা মুক্তভাবে ক্যাম্পাসে বিচরণ করছে। মতিহার হলের শিক্ষার্থীকে যে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে, আমরা তার সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ সময় শিক্ষার্থীর অভিভাবক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর হামিদ বলেন, শোকের মাসে আমাদের প্রতিবাদে দাঁড়াতে হচ্ছে। এটা শোকসন্তপ্ত জাতির কাছে বেমানান। এখন থেকে তাহলে মাস্তানি বিভাগ খোলা হোক বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাহলেই সেটা ভালো হবে। আর না হলে এগুলোকে উৎখাত করুন।
আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রাণ শিক্ষার্থী। সেখানে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন আর সেটার প্রতিবাদে আমাদের এখানে দাঁড়াতে হচ্ছে। যারা এসব সন্ত্রাসী কর্মকা- করছে, তাদের ছাত্র পরিচয় দিতে আমাদের লজ্জা লাগে। আমরা এমন ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। ছাত্রলীগের গু-ারা শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ না করে শিক্ষার্থীদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, রাজনীতি একটি দারুণ জিনিস যখন সেটার মাঝে কল্যাণ থাকে। আমরা যেটাকে রাজনীতি বলছি, সেটা হচ্ছে মাস্তানি, গু-ামি, টেন্ডারবাজি। আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে একটা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবেই দেখতে চাই। ছাত্রলীগের একদল গুন্ডাকে লালন করা হচ্ছে। যদি লালন করা না-ই করা হয়, তাহলে আমাকে প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা দেখতে হচ্ছে কেন?
গোপনে এ ধরনের নিপীড়ন আরও বেশি চলছে। আমি শিক্ষক হিসেবে চুপ থাকতে পারি না। ভয়কে জয় করতে পারলে সেদিন থেকে এই নৈরাজ্য বন্ধ হয়ে যাবে। ক্যাম্পাসে আবরার ফাহাদের মতো যদি কারো পরিণতি হয়, তাহলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা কী হবে একবার ভেবে দেখছেন? আমরা এর অবসান চাই।
এ সময় অবস্থান কর্মসূচিতে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দীন খান, সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. আখতার মজুমদার, সোনালী সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদ জামাল কাদেরি, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ড. কাজী মামুন হায়দার, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল হক, ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল মতিনসহ প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক সেখানে উপস্থিত ছিলেন।