তামাক পণ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপ সরকারের রাজস্ব বাড়াবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: তামাকজাত দ্রব্যের ওপর অ্যাডলেভরেম করারোপ পদ্ধতির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট করারোপ পদ্ধতি বাস্তবায়িত হলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে। একইসঙ্গে সরকারের রাজস্ব আদায়ও সহজ হবে। পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। এরই মধ্যে ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কাসহ আমাদের প্রতিবেশী বেশকিছু দেশ সুনির্দিষ্ট করারোপ পদ্ধতিতে রাজস্ব বৃদ্ধিতে ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় লাভবান হয়েছে।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) যৌথভাবে আয়োজিত ‘জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপ’ শীর্ষক এক জাতীয় সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের (এনটিসিসি) সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকার। বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার সৈয়দ মাহফুজুল হক, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের (সিটিএফকে) লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দীন আহমেদ।

সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিইআরের ফোকাল পার্সন অধ্যাপক ড. রুমানা হক। এছাড়া ‘রাজস্ব ফাঁকিতে তামাক কোম্পানির কূটকৌশল ও হস্তক্ষেপ’ শীর্ষক শিরোনামে বক্তব্য উপস্থাপন করেন তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষক ও একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, উন্নয়নকর্মী ও সাংবাদিকরা এ সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।

সেমিনারে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, গবেষণা থেকে দেখেছি, তামাক খাত থেকে সরকার যা আয় করছে, তার চেয়ে বেশি স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হচ্ছে। ফলে তামাক একটি ক্ষতিকর বস্তু, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করবেন। এটা কিন্তু একটি জাতীয় প্রতিশ্রুতি। ফলে এটি বাস্তবায়ন করা আমাদের দায়িত্ব।

তিনি আরও বলেন, অনেক সময় তামাক কোম্পানির বিভিন্ন লবিংয়ের কারণে এনবিআর চাইলেও সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে পারে না। তবে আমি বিশ্বাস করি সরকার ভালো কাজ করছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এখন পর্যন্ত অনেক ভালো কাজ করেছেন। আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ চলুন সবাই একসঙ্গে আগামী দিনের তরুণ সমাজের জন্য তামাকের এই সমস্যাকে প্রতিহত করি।

অনুষ্ঠানে অন্য বক্তারা বলেন, সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলে সারাদেশে বিনা মূল্যে হƒদরোগ চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। তামাকের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপ ও করহার বাড়িয়ে এ ব্যয় মেটানো যেতে পারে। এছাড়া সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করে বছরে সরকার প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। অতিদ্রুত সরকারকে এ কর ফাঁকি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে সিগারেট ও বিড়ির খুচরা বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে। কারণ এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে এবং ভোক্তারাও তামাক গ্রহণে উৎসাহিত হচ্ছে। এছাড়া তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপের পাশাপাশি সিগারেটের চার স্তরভিত্তিক কর কাঠামো ধারাবাহিকভাবে এক স্তরে নিয়ে আসতে হবে।

তারা আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী তামাক কর নীতি প্রণীত হলে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর করারোপ একটি সাধারণ নিয়মের মধ্যে আসবে। এর মাধ্যমে আধুনিক ও কার্যকর করারোপ পদ্ধতি ও কর আদায় পদ্ধতির প্রচলন হবে। ফলে তামাক কর ব্যবস্থার জটিলতা কমে আসবে। একটি কমপ্রিহেন্সিভ তামাক কর নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে কর প্রশাসন আরও কার্যকর ও দক্ষ হয়ে উঠবে, যার মাধ্যমে কর ফাঁকি রোধ করা যাবে। একইসঙ্গে এর মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় অগ্রগতিপূর্ণ ভূমিকা রেখে জনবান্ধব রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে বাংলাদেশ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০