নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত প্রথম জেটিতে ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রথমবার বার্থিং করে পানামা পতাকাবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ ‘ভেনাস ট্রায়াম্প’। এরপর গতকাল ‘এমভি হোসেই ফরচুন’ জাহাজটি বার্থিংয়ের মাধ্যমে ১০০তম জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের মাইলফলক স্পর্শ করছে মাতারবাড়ী জেটি। কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে এরই মধ্যে ৯৯টি সমুদ্রগামী জাহাজ হ্যান্ডলিং কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এসব জাহাজ থেকে প্রায় এক লাখ ১৭ হাজার ৯১ টন মালামাল হ্যান্ডলিং করা হয়। এতে রাজস্ব আয় বাবদ প্রায় দুই কোটি আট লাখ টাকা।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরের সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের বিষয়ে বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট ইনিশিয়েটিভ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী সিদ্ধান্তে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পরে মাতারবাড়ীতে বাণিজ্যিক বন্দরসহ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প কর্তৃক নির্মিত প্রথম জেটিতে ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রথমবার বার্থিং করে পানামার পতাকাবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ ‘ভেনাস ট্রায়াম্প’। এরপর গত বছরের ১৫ জুলাই জাহাজ বার্থিংয়ের মাধ্যমে দ্বিতীয় জেটি চালু করা হয়। এসব জেটিসহ মাতারবাড়ী বর্তমানে ‘দ্য নেক্সট পাওয়ার অ্যান্ড পোর্ট হাব’, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মানুষের জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সর্বশেষ গতকাল এমভি হোসেই ফরচুন জাহাজটি বার্থিংয়ের মাধ্যমে ১০০তম জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের মাইলফলক স্পর্শ করেছে মাতারবাড়ী জেটি। কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে ২০২৫ সালে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম পর্যায়ের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। তখন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জাহাজ ভিড়বে এ জেটিতে।
বর্তমানে সিপিজিসিবিএল কর্তৃক নির্মিত জেটিতে প্রবেশের জন্য চ্যানেলের প্রশস্ততা ২৫০ মিটার থেকে ৩৫০ মিটারে উন্নীত করা হয়েছে। এ চ্যানেল বা প্রবেশপথ দিয়েই বঙ্গোপসাগর থেকে জাহাজ বন্দর জেটিতে প্রবেশ করবে এবং আগামী বছর মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রায় ৮০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা পরিবহনকারী জাহাজ আগমনের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া চলতি বছরে এ অফশোর এলাকায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন কর্তৃক স্থাপিত এসপিএম প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এতে মাতারবাড়ীতে অনেক বড় জাহাজের আগমন হবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক শেয়ার বিজেক বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) প্রচেষ্টায় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে এরই মধ্যে ৯৯টি সমুদ্রগামী জাহাজ হ্যান্ডলিং কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এসব জাহাজ থেকে প্রায় এক লাখ ১৭ হাজার ৯১ টন মালামাল হ্যান্ডলিং করা হয়। এতে রাজস্ব আয় বাবদ প্রায় দুই কোটি আট লাখ টাকা, যা আগামীতে আরও বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, চ্যানেলটি নির্মাণের সময়কাল থেকে অদ্যাবধি সিপিজিসিবিএলের নির্মাণসামগ্রী বহনকারী আগত বৈদেশিক জাহাজগুলো হ্যান্ডলিং ও কার্গো হ্যান্ডলিং পরিচালনা কাজে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ টাগ, পাইলটেজ ও স্টিটিভিডোরিং সেবা প্রদান করে আসছে। চবক পাইলটদের সহায়তার কারণে আলোচ্য চ্যানেলে এখন পর্যন্ত কোন ধরনের নৌ-দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়নি। এমনকি চবকের নিবিড় তত্ত্বাবধানের কারণে ওই চ্যানেলে আসা জাহাজগুলোয় কোনো রকম চুরি-ডাকাতি বা অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি।
