প্রকৃত কারণ অজানা। তবে রেডিয়েশন, কারখানাজাত কেমিক্যাল বা রাসায়নিক দ্রব্য, কীটনাশক, ভেজাল খাবার, হেয়ার ডাই, লুব্রিকেন্টস, বার্নিশ, কেমোথেরাপি ড্রাগস ও কিছু জেনেটিক অসুখকে দায়ী করা হয়। কোনো কারণে অস্থিমজ্জার ভেতরে স্টেমসেলের মিউটেশন বা পরিবর্তন হলে রক্তকণিকা তৈরির সময় ব্লাস্টসেল বা অপরিপক্ব কোষ অতি দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
উপসর্গ ও লক্ষণ: রক্তস্বল্পতার জন্য দুর্বলতা, খাবারে অরুচি, বুক ধড়ফড়, পায়ে পানি জমে যাওয়া, ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া প্রভৃতি দীর্ঘদিনের জ্বর বা ঘনঘন জ্বর। অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ (শরীরে র্যাশ, দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত পড়া, প্রস্রাব-পায়খানা ও কাশির সঙ্গে রক্ত পড়া, মাসিক বেশি হওয়া প্রভৃতি)। গ্লান্ড ফুলে যাওয়া, যকৃৎ ও প্লিহা বড় হওয়া। হাড়ে ব্যথা। লোহিত রক্তকণিকার ঘাটতিতে রক্তস্বল্পতা, অস্বাভাবিক শ্বেত রক্তকণিকার কারণে বারবার সংক্রমণ বা জ্বর ও অণুচক্রিকার ঘাটতিতে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। অস্বাভাবিক রক্তকণিকা (ক্যানসার সেল) গ্ল্যান্ড, যকৃৎ ও প্লিহায় জমতে থাকলে এগুলো বড় হয়।
কীভাবে নির্ণয়: ব্লাড ক্যানসারের উপসর্গ ও লক্ষণগুলোর সঙ্গে রক্তের সিবিসি পরীক্ষায় অস্বাভাবিকতা দেখা যাবে। যেমন হিমোগ্লোবিন ও প্লাটিলেট কমে যাওয়া, ডব্লিউবিসি বেড়ে যাওয়া, অথবা হিমোগ্লোবিন, প্লাটিলেট ও ডব্লিউবিসিÑসবই কমে যাবে।
চিকিৎসা: কী ধরনের ওষুধ বা কেমোথেরাপি দিতে হবে এবং ফলাফল কী হবে, তা জানার জন্য লিউকেমিয়া বা লিম্ফোমাকে পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন উপভাগে ভাগ করা হয়। অ্যাকিউট লিউকেমিয়া খুবই মারাত্মক। এর চিকিৎসা দ্রুত শুরু করাতে হয়। যে ধরনেরই অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া (এএলএল) হোক না কেন, চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদি। শুধু কেমোথেরাপি দিয়ে চিকিৎসা করালে দুই থেকে আড়াই বছর সময় লাগে। এম-৩ বা এপিএল নামক ব্লাড ক্যানসারকে পর্যায় বুঝে শুধু ওষুধ বা কেমোথেরাপি দিয়ে টানা ছয় মাস থেকে দুই বছর চিকিৎসা করলে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার সম্ভবনা ৮০ শতাংশের বেশি। কিছু ব্লাড ক্যানসারের জন্য বিএমটি বা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন ছাড়া কার্যকর চিকিৎসা নেই। ব্লাড ক্যানসার মানেই মারণব্যাধি নয়। সঠিক সময়ে নির্ভুল রোগ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা নিলে অনেক ব্লাড ক্যানসার ভালো হয় ও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
ডা. মো. কামরুজ্জামান
ব্লাড ক্যানসার ও বিএমটি বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ
