এটিএম সেলিম সরোয়ার, জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের কালাই ও আক্কেলপুরে বাজারের সাব-ডিলারদের (খুচরা) দোকানগুলোয় ইউরিয়া সার পাওয়া যাচ্ছে না। বিসিআইসির অনুমোদিত ডিলারদের দোকানে গেলেও কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী সার দেয়া হচ্ছে না। ডিলারদের দোকানে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর পাঁচ-দশ কেজি করে ইউরিয়া সার দেয়া হচ্ছে বলে কৃষকেরা অভিযোগ করেছেন। তাও আবার ক্যাশমোমো ছাড়া। বেশি দাম নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ কৃষকদের। এতে আমনের মৌসুমে বেকায়দা পড়ছেন কৃষকরা।
খুচরা সার ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিসিআইসির অনুমোদিত ডিলারেরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী সার দিচ্ছেন না। আবার দামও বেশি নিচ্ছেন। সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে তাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে সার। প্রশাসনের কড়া হুশিয়ারি ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভয়ে ডিলাররা দোকানে সার বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। তাদের অভিযোগ, ডিলাররা নাকি এ মাসে সরকারিভাবেই সারের বরাদ্দ কম পেয়েছেন। তাই তারা চাহিদা মোতাবেক সার দিচ্ছেন না।
কালাই ও আক্কেলপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের দেয়া তথ্যানুযায়ী, এ দুই উপজেলায় চলতি মাসে এক হাজার ১৯০ মেট্রিক টন ইউরিয়া, ২০৩ মেট্রিক টন টিএসপি, ২৮৩ মেট্রিক টন এমওপি ও ৩৭৫ মেট্রিক টন ডিএপি সার বরাদ্দ দেয়া হয়। এরমধ্যে এক হাজার ১১৭ মেট্রিক টন ইউরিয়া, ১৮১ দশমিক ৯০ মেট্রিক টন টিএসপি, ২৬৭ দশমিক ৩৫ মেট্রিক টন এমওপি ও ২২৮ মেট্রিক ডিএপি সার ডিলারেরা উত্তোলন করেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবারে এ দুই উপজেলার বিসিআইসির ডিলার পর্যায়ে ১৪০ মেট্রিক টন ইউরিয়া, ১০৯ দশমিক ৩০ মেট্রিক টন টিএসপি, ২৫ দশমিক ৯ মেট্রিক টন এমওপি, ১৪০ দশমিক ৫ মেট্রিক টন ডিএপি আর খুচরা পর্যায়ে ৬৫ মেট্রিক টন ইউরিয়া, ৫৬ মেট্রিক টন টিএসপি, ১৫ মেট্রিক টন এমওপি ও ১৭০ মেট্রিক টন ডিএপি সার মজুত রয়েছে। এছাড়া ডিলারদের কাছে আগের এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশি লাভের আশায় বেশি দামে কেনা সার মজুত রয়েছে।
দুই উপজেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আক্কেলপুর কলেজ বাজার এলাকায় ১৫টি এবং কালাই পৌর এলাকায় ১০টি খুচরা দোকান রয়েছে। এসব খুচরা দোকানে গিয়ে তারা সার পাচ্ছেন না। বিসিআইসির অনুমোদিত ডিলারদের দোকানে অনেক সার আছে। কিন্তু খুচরা দোকানে তারা চাহিদা অনুযায়ী সার পাচ্ছেন না। তারপরও তারা ডিলারদের দোকানে গিয়ে অনেক সময় ব্যয় করে ক্যাশ মোমো ছাড়াই অল্প পরিমাণে সার কিনে আনছেন।
দুদিন ধরে আক্কেলপুর পৌরশহরের বিসিআইসির ডিলার মেসার্স আবু তালেব সরদারের দোকানে এবং কালাই পৌরশহরের পাঁচশিরা বাজারের বিসিআইসির ডিলার মেসার্স কালাই রাইস মিল নামক হুমায়ন কবির তালুকদারের দোকানে কৃষকদের সার নিতে ভিড় করতে দেখা গেছে।
আক্কেলপুরের কৃষক এনামুল হক বলেন, খুচরা দোকানে গিয়ে ইউরিয়া সার পাইনি। ডিলারের দোকানে এসেছি। আমাকে ১০ কেজি ইউরিয়া সার দিয়েছে। আমার এক বস্তা (৫০ কেজি) ইউরিয়া সারের দরকার। আর সার কোথায় পাই, সেই চিন্তাই করছি। এখন বেশি দামেই কিনতে হবে।
কালাইয়ের কৃষক আজমল হোসেন বলেন, আমার ২০ কেজি সার দরকার। আমাকে পাঁচ কেজি সার দিয়েছে। হাতিয়ার বাজারে খুচরা দোকানে সার নেই।
কলেজ বাজারের খুচরা সার (সাব-ডিলার) বিক্রেতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অনুমোদিত ডিলারেরা তাদের সার দিচ্ছেন না। আবার সারের যে দাম নিচ্ছেন তাতে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম বিক্রি না করলে লোকসান হবে। আবার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম নিলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হচ্ছে। এসব কারণে তারা সার বিক্রি করছেন না।
আক্কেলপুরের বিসিআইসির ডিলার আমিনুল ইসলাম ও কালাইয়ে বিসিআইসির ডিলার হুমায়ন কবির তালুকদার বলেন, সারের জন্য বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত কোনো কৃষকই ফেরত যাননি। পর্যাপ্ত সার না থাকায় কম-বেশি করে কৃষকদের দেয়া হচ্ছে। আর খুচরা ব্যবসায়ীদের দেয়া হচ্ছে না। তবে বরাদ্দ বেশি পেলে অবশ্যই তাদেরও সার দেয়া হবে।
আক্কেলপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, সারের কোনো সংকট নেই। কৃষকেরা আমন মৌসুমে অযাচিতভাবে আগামী আলুর জন্য অগ্রিম সার মজুত করছেন। এ কারণে কৃষকদের কম পরিমাণে সার দেয়া হচ্ছে। দাম বেশি নেয়া এবং ক্যাশ মেমো ছাড়াই সার বিক্রি হচ্ছে, এ বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু কিছু দোকানে দাম বেশি নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে এসব দোকানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তাছাড়া এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
জেলা প্রশাসক শরীফুল ইসলাম বলেন, আমার জানামতে সারের কোনো সংকট নেই। কালাই ও আক্কেলপুরের কৃষকেরা আলুর জন্য আগাম সার মজুত করছেন বলে জানতে পেরেছি। কারণ জেলার সবচেয়ে বেশি আলুর আবাদ এই দুই উপজেলায়। যদি কেউ সারের দাম বেশি নেন, তাহলে ওই দোকানের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।