নিজস্ব প্রতিবেদক: চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ২৫ শতাংশ শেয়ার কেনার মাধ্যমে স্টক এক্সচেঞ্জটির কৌশলগত অংশীদার হতে চেয়ে একটি প্রস্তাব দিয়েছিল এবিজি লিমিটেড (একটি বসুন্ধরা গ্রুপ প্রতিষ্ঠান)। বসুন্ধরার প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সিএসইর কাছে শেয়ার ব্যবসায় কোম্পানিটির অভিজ্ঞতা, সক্ষমতা এবং সেই সঙ্গে সিএসইকে অফার দেয়ার প্রক্রিয়া জানতে চায়। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসির সিকিউরিটিজ ভবনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, সিএসই এবং বসুন্ধরা গ্রুপের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
সূত্র মতে, গতকাল বিএসইতে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির সম্পর্কে এবং সিএসইর কৌশলগত অংশীদার হওয়ার প্রস্তাব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে একটি বিস্তারিত বর্ণনা উপস্থাপন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি কোম্পানিটির কাছ থেকে আরও কিছু বিষয় জানতে চায়। বসুন্ধরার কাছ থেকে সব বিষয়ে জেনে তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা যায়। এর আগে বিএসইসির চাওয়া ব্যাখ্যা সিএসই জমা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ নিশ্চিত করে শেয়ার বিজকে বলেন, গতকাল সিএসই চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে বসুন্ধরার সঙ্গে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠক বেশ কিছু সময় ধরে চলে। বসুন্ধরা তাদের সম্পর্কে এবং সিএসই নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে বর্ণনা দেয়। বসুন্ধরা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে কী বলেছে জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, তারা বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে তারা জানিয়েছে যে, সিএসইর কৌশলগত অংশীদার হলে তারা স্টক এক্সচেঞ্জটির আধুনিকায়ন করবে। সেই সঙ্গে সিএসইর ব্যবসা বাড়াবে।
তিনি আরও বলেন, বসুন্ধরার উপস্থাপনার পর কমিশন থেকে তাদের মূল্যায়ন এবং নীতিগত বিষয়সহ আরও কিছু বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে জানার পর কমিশন আলোচনা এবং পর্যালোচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত দেবে।
সিএসইর ব্যাখ্যার বিষয়ে তিনি বলেন, এর আগে সিএসইও তাদের ব্যাখ্যা দিয়েছে। ব্যাখ্যায় সিএসই জানিয়েছে যে, বসুন্ধরা তাদের কৌশলগত অংশীদার হলে তাদের জন্য ভালো হবে বলে তারা মনে করছে। যেজন্য বসুন্ধরা তাদের কৌশলগত বিনিয়োগকারী হতে পারে বলে তারা জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, বসুন্ধরা কৌশলগত অংশীদার হওয়ার জন্য সিএসইর কাছে একটি প্রস্তাব জমা দেয়। সিএসই গত ১ আগস্ট বিএসইসির কাছে সেই প্রস্তাবটি পাঠায়। এরপর গত ১৭ আগস্ট বিএসইসি থেকে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি জারি করে সিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠায়। চিঠিতে বিএসইসি জানায়, এবিজি লিমিটেড সিএসইর প্রতিটি শেয়ারের জন্য ১৫ টাকা অফার করে, কিন্তু সিএসই ২০১৬ সালের মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে যে দাম আসে সে দাম চায়। কিন্তু বর্তমানের বাজার পরিস্থিতির ওপরে সেটা প্রতিফলিত হয় না। বসুন্ধরার প্রস্তাবিত শেয়ারপ্রতি ১৫ টাকা হিসেবে ২৫ শতাংশ শেয়ারের দাম আসে প্রায় ২৪০ কোটি টাকা।
২০১৬ সাল পর্যন্ত সিএসইর আর্থিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে কেপিএমজি দ্বারা প্রস্তুত করা মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুসারে, ডিসকাউন্টেড ক্যাশ ফ্লো পদ্ধতি অনুসারে শেয়ারপ্রতি ১১ টাকা ৭৫ পয়সা মূল্য নির্দেশক ছিল, আয়ের অনুপাত অনুযায়ী শেয়ার মূল্য ১১ টাকা ৪ পয়সা এবং বুক রেশিও অনুযায়ী শেয়ার প্রতি মূল্য ২৮ টাকা ৮৭ পয়সা। এদিকে বিএসইসি বলছে, সিএসই প্রতিবেদন আপডেট করেনি এবং শেয়ারের মূল্য নির্ধারনের প্রক্রিয়াটিও উল্লেখ করেনি।
এই বিষয়ে বিএসইসি প্রস্তাবিত কৌশলগত অংশীদারের কাছে শেয়ার বিক্রির আগ্রহের অভিব্যক্তি বিবেচনা করে বিডিং প্রক্রিয়ার প্রাথমিক যাচাই-বাছাই এবং মূল্যায়নের বিষয়ে সিএসইকে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করার জন্য জানানো হয়েছিল।
উল্লেখ্য, সিএসই কয়েক বছর ধরে ভারত, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং হংকং থেকে কৌশলগত অংশীদার খুঁজছে। যাতে ডিমিউচুয়ালাইজেশনের অধীনে তার ২৫ শতাংশ মালিকানা বিক্রি করা যায়। ২০১০ সালের স্টক মার্কেটের বড় পতনের পর, স্টেকহোল্ডাররা সরকারের কাছে ম্যানিপুলেশন বন্ধ করতে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং বাজারে স্বচ্ছতা আনতে মনিটরিং নিশ্চিত করার দাবি জানায়। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে সংসদে ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন পাস হয়।