নিজস্ব প্রতিবেদক: সীতাকুণ্ডের ত্রিপুরাপাড়ার ৯ শিশুর মৃত্যুর কারণ হিসেবে হামকে চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছে সরকার। ত্রিপুরাপাড়ার ৮৫টি পরিবারের কাছে কয়েক দশকেও টিকা পৌঁছে দিতে না পারায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে দুঃখও প্রকাশ করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ। গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে এসব তথ্য জানান।
জানা যায়, গত ৮ জুলাই পাহাড়ি টিলায় অসুস্থতার কারণে একটি শিশুর মৃত্যু হয়। পরদিন ৯ জুলাই আরও দুজন শিশু মারা যায়। সম্প্রদায়গত প্রথা হিসেবে তারা এটিকে ভালো মনে করে ভীত হয়ে ওই রাতে মশাল জ্বালিয়ে প্রার্থনা করেন। পরদিন কোনো শিশুর মৃত্যু না হওয়ায় তারা মনে করেন, প্রার্থনা কাজে লেগেছে। কিন্তু একদিন পর ১১ জুন আরও একজন শিশু মারা যায় এবং ১২ জুন একই দিনে চারজন শিশু মারা যায়। সম্প্রদায়টির কয়েকজন তরুণ পাশের বাঙালিদের জানালে তারা সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে জানান। এরপর তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
সীতাকুণ্ডের ঘটনার বিষয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশে হামের পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। এটি (ত্রিপুরাপাড়া) একটি ছোট বিচ্ছিন্ন এলাকা এবং তারা কখনোই আধুনিক চিকিৎসা নেয়নি। আধুনিক চিকিৎসা নিলে হয়তো এ প্রাণহানি ঠেকানো যেত বলে মনে করেন তিনি।
ত্রিপুরাপাড়ায় টিকা না দেওয়া কাদের ব্যর্থতাÑএমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, আমরা বলেছিলাম কিন্তু ত্রিপুরাদের মতো কিছু কিছু পাহাড়ি আছে যাদের সম্পর্কে আমরা জানি না। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আমরা শিক্ষা নিয়েছি এবং মাঠপর্যায়ের লোকরা কোনো ধরনের অবহেলা করেছে কি না, তার জন্য এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট চেয়েছি। এখন থেকে পাহাড়িদের কাছে নিয়মিত সেবা নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই মহাপরিচালক।
গত মাসের শেষ দিক থেকে বারআউলিয়ার সোনাইছড়ি ত্রিপুরাপাড়ার শিশুদের মধ্যে জ্বর, ফুসকুড়ি, শ্বাসকষ্ট ও খিঁচুনির মতো উপসর্গ দেখা দেওয়া শুরু করে। যার ফলে একের পর এক শিশু মারা যেতে শুরু করে। অজ্ঞাত রোগে শিশুদের আক্রান্ত হয়ে শিশুমৃত্যুর খবর পেয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রতিনিধিরা ওই এলাকায় যান। প্রাথমিক অনুসন্ধানে শিশুরা দীর্ঘদিনের অপুষ্টির কারণে এক ধরনের সংক্রমণে আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানান আইইডিসিআরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
সংবাদ সম্মেলনে আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সাবরিনা, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা) এবিএম জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Add Comment