মূল্যস্ফীতি সেপ্টেম্বরেও বাড়বে, কমবে অক্টোবরে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি সেপ্টেম্বর মাসেও দেশে সাধারণ মূল্যস্ফীতি বাড়বে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। তিনি বলেন, ‘জুলাইতে বলেছিলাম, আগস্টে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। এখন বলছি সেপ্টেম্বরেও মূল্যস্ফীতি বাড়বে। অক্টোবরে গিয়ে এটি কমে আসবে।’

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে গতকাল পরিকল্পনা কমিশন বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (ডিজেএফবি) উন্নয়ন সংলাপে মন্ত্রী এ কথা বলেন। ডিজেএফবির সভাপতি হামিদ-উজ-জামান মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

এ সময় তিনি বলেন, সরকারের কাছে ২০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুত আছে, সামনে আমন চলে আসবে। আইএমএফ থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ পাব। সব মিলিয়ে অক্টোবর থেকে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। আগস্ট মাসের মূল্যস্ফীতির তথ্য হাতে এসেছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারপ্রধান দেশের বাইরে আছেন। তাকে দেখানোর পর আগস্ট মাসের মূল্যস্ফীতি প্রকাশ করা হবে। উন্নয়নের নানা ঘটনাবলি উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান যুগ বিশেষায়িত জ্ঞানের যুগ। কাজেই ইকোনমিক ক্যাডারের প্রয়োজনীয়তা ছিল। এ ক্যাডার বিলুপ্ত হওয়ায় উন্নয়ন কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, বর্তমানে একীভূত হওয়ার পরও ইকোনমিক ক্যাডারের অনেক কর্মকর্তা ভিন্ন পরিচয়ে কাজ করছেন, যে কারণে উন্নয়ন কার্যক্রমে এ ক্যাডার বিলুপ্তির নেতিবাচক প্রভাবটা তেমন বোঝা যাচ্ছে না। তবে ১০ থেকে ১৫ বছর পর যখন বিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডারের সদস্যদের সংখ্যা কমে আসবে, তখন এ ক্যাডার বিলুপ্তির নেতিবাচক প্রভাবটা বোঝা যাবে।

ক্যাডার সিস্টেম সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, অনেক ক্যাডার শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সমন্বিত। এখানে সেটি হয়তো থাকবে। কিন্তু নানা জায়গায় প্রতিবন্ধকতা কেনÑযেমন, শিক্ষক ব্র্যাকেটে লেখা থাকে বিসিএস, বিসিএস আনসার প্রভৃতি। এসবের প্রয়োজন নেই। কেউকি ক্যাডারে যোগ দেয়? বরং যোগ দেয় সরকারি চাকরিতে। এখানে সংস্কার প্রয়োজন। তিনি বলেন, ক্যাডার ব্যবস্থা যদি ভালোই হতো তাহলে ব্রিটিশরা নিজেদের দেশে সেটা চালু রাখত।

তিনি বলেন, বর্তমান যুগ হচ্ছে বিশেষায়িত যুগ ও পেশার যুগ। কেননা বিচার করতে হয় বিধিবদ্ধ আইন থেকে, শুধু মাথা থেকে নয়। অনেক ক্যাডারে একমত নই। তবে পরিকল্পনা বা বেশকিছু বিশেষায়িত খাত প্রয়োজন। এই সাপ্লাই কমে যাবে। তাদের বেশকিছু সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, গত ১০ বছরে দেশে উন্নয়ন বেশি হওয়ায় খরচও হয়েছে বেশি, আমলে নেয়া হয়নি অনেক কিছু। করোনাভাইরাস ও বহির্বিশ্বে মোড়লদের কোন্দলের কারণে দেশের অর্থনীতি কিছুটা বিপাকে থাকলেও আগামী অক্টোবরের মধ্যে স্থিতিশীলতা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

জ্বালানি তেলের মূল্য আগস্টে বাড়ানো হয়েছে, তাতে মূল্যস্ফীতি বাড়ছেÑএমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান অবস্থায় সবার কৃচ্ছ্রসাধন করা দরকার। অর্থনীতির কাজই হচ্ছে মাপ-জোঁক করে করতে হবে। বিগত ১০ বছরে নতুন প্রাপ্তি ছিল বেশি। বৈশ্বিক কারণেই এ সংকট হয়েছে। খাদের শেষপ্রান্তে গিয়ে সরকারপ্রধান লাগাম ধরেছেন। এতে করে আমরা অনেক কিছু থেকে বেঁচে গেছি। আগস্টে মূল্যস্ফীতি বাড়বে এবং সেপ্টেম্বরেও তা অব্যাহত থাকবে। মূল্যস্ফীতি সেপ্টেম্বরে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে জিডিপি সাড়ে সাত নতুনা সাড়ে ছয় শতাংশ হয়ে দাঁড়াবে। এই মাসে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে অক্টোবরে অনেক কমে আসবে মূল্যস্ফীতি। আশা করি মূল্যস্ফীতি কমবে।

আইএমএফের বিষয়ে তিনি বলেন, আইএমএফের দায়-দায়িত্ব আমাদের জন্যও রয়েছে। কোনো সদস্য বিপদে পড়লে তারা ঋণ, উপদেশ ও সহযোগিতা দেবে। কোনো রাষ্ট্র খাদে পড়ে গেলে সেখান থেকে তুলে আনার দায়িত্ব আইএমএফের। এখন আমাদের প্রয়োজন বেশি। সেক্ষেত্রে ঋণ চাইতে হবে। আমাদের সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করতে হবে, মহাজনের মতো নয়। আইএমএফের ঋণ পেয়ে যাব। তবে সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা না গেলে কেউ কাজ করতে পারবে না।

উন্নয়ন কার্যক্রম দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে আইন প্রয়োগে কঠোর হতে হবে বলে উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই হয়। তবে আমাদের এখানে বেশি দৃশ্যমান। আমরা চেষ্টা করি দুর্নীতি কমিয়ে রাখতে। দারিদ্র্যও দুর্নীতির অন্যতম কারণ। অনেক কাজে প্রকল্প পরিচালকের এখানে-সেখানে হয়তো কিছু এদিক-সেদিক হয়ে যায়। আমরা এখন যে বড় প্রকল্প নিয়েছি, তা আমাদের পূর্বপুরুষরা চিন্তাও করেনি। তবে দুর্নীতি বন্ধে প্রকল্প পরিচালকদের উচিত বসে থেকে কাজ করানো। সেজন্য একজনকে যেন একাধিক প্রকল্পের পরিচালক না করা হয়, সে বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা ছিল। কিন্তু সে নির্দেশনা পালন করা হয়নি। ক্রয় ও কাজে আইনের সঠিক প্রয়োগ করতে হবে। আইন প্রয়োগে কঠিন হতেই হবে, কোনো খাতির করতে পারবে না।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০