চার কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ আবারও বাড়ল

নিজস্ব প্রতিবেদক: কুইক রেন্টাল তথা দ্রুত ভাড়াভিত্তিক চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ আবারও বাড়াল সরকার। প্রতি কেন্দ্রের মেয়াদই দুই বছর করে বাড়িয়েছে সরকার। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৩০০ মেগাওয়াট। ফার্নেস অয়েলচালিত কুইক রেন্টাল এ কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ এর আগেও বাড়ানো হয়েছিল।

গতকাল সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল চিকিৎসার জন্য বিদেশে থাকায় কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

সূত্র জানায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে ঢাকার কেরানীগঞ্জে অবস্থিত পাওয়ার প্যাক লিমিটেড ও চট্টগ্রামের অ্যাক্রন ইনফ্রাস্ট্রাকচার সার্ভিসেসের উৎপাদন ক্ষমতা ১০০ মেগাওয়াট করে। আর রাজশাহীর নর্দার্ন পাওয়ার সলিউশন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিনহা পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৫০ মেগাওয়াট করে।

জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে সরকার ২০১০ সালে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর জন্য বিশেষ ক্ষমতা (দায়মুক্তি) আইন পাস করে। পরে এ আইনের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। এ আইনের অধীনে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। এছাড়া চুক্তির মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে একই আইনের অধীনে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, সিনহা পাওয়ারের চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরায় অবস্থিত ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদন শুরু করে ২০১২ সালের ১৩ জানুয়ারি। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি তিন বছরের জন্য লাইসেন্স দেয়া হলেও পরে তা আরও দুই দফা বৃদ্ধি করা হয়। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মেয়াদ বেড়ে দাঁড়ায় ১০ বছর। গত ১২ জানুয়ারি সে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। নতুন করে আবার দুই বছর বাড়ল কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মেয়াদ।

রাজশাহীর কাঁটাখালীর নর্দার্ন পাওয়ার সলিউশন ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদন শুরু করে ২০১২ সালের ২২ মে। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পাঁচ বছরের জন্য লাইসেন্স দেয়া হলেও পরে তা আরেক দফা পাঁচ বছর বৃদ্ধি করা হয়। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মেয়াদ দাঁড়ায় ১০ বছর। গত ২১ মে সে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। নতুন করে আবার দুই বছর বাড়ল কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মেয়াদ।

একইভাবে পাঁচ বছরের জন্য লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত পাওয়ারপ্যাক ১০০ মেগাওয়াট কুইক রেন্টাল কেন্দ্রটি। ২০১২ সালের ২৭ মার্চ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদন শুরু করে। পরে তা আরও পাঁচ বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মেয়াদ বেড়ে দাঁড়ায় ১০ বছর, যা গত ২৬ মার্চ শেষ হয়। এ কেন্দ্রটির মেয়াদও নতুন করে আবার দুই বছর বাড়ল।

অপর কুইক রেন্টাল কেন্দ্রটি বাংলাক্যাট গ্রুপের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি অ্যাক্রন ইনফ্রাস্ট্রাকচার সার্ভিসেসের। চট্টগ্রামের জুলধায় অবস্থিত ১০০ মেগাওয়াট কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০১২ সালের ২৬ মার্চ উৎপাদন শুরু করে। পাঁচ বছরের জন্য এর লাইসেন্স দেয়া হলেও পরে তা আরও পাঁচ বছর বাড়ানো হয়। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মেয়াদ দাঁড়ায় ১০ বছর। গত ২৫ মার্চ সে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। এ কেন্দ্রটির মেয়াদও নতুন করে দুই বছর বাড়ল।

তথ্যমতে, কেন্দ্র চারটি থেকে গত অর্থবছর ৪০ কোটি ১৯ লাখ ১৮ হাজার ৬২০ ইউনিট বিদ্যুৎ কেনা হয়। এতে ব্যয় হয়েছে ৮৫৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়েছে ২৯৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। চারটি কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের মধ্যে অ্যাক্রনের জুলধা কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ে ইউনিটপ্রতি ১৮ টাকা ৩৩ পয়সা, সিনহা পাওয়ারের আমনুরা কেন্দ্রটিতে ব্যয় পড়ে ১৩ টাকা ১৫ পয়সা, পাওয়ার প্যাক কেন্দ্রটিতে ২৭ টাকা ৩৭ পয়সা ও নর্দান পাওয়ার কেন্দ্রটিতে ২৫ টাকা ৪১ পয়সা।

ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন নিরুৎসাহিত করা হলেও কুইক রেন্টাল কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বাড়ল কোন যুক্তিতে, এ বিষয়ে গতকাল বৈঠকের সভাপতি কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের কিছু জানাননি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুল বারিক সাধারণত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে থাকেন। তবে তিনিও গতকাল তা করেননি।

কেন ব্রিফ করেননিÑএমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল বারিক বলেন, ‘আমি নির্দেশিত হইনি।’ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে আবদুল বারিক বলেন, ‘যতটুকু জেনেছি, বিদ্যুৎ না দিলে টাকা পাবেন না (নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট) ভিত্তিতে এ মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০