এমসিসিআই-ইইউ সেমিনারে অভিমত : গবেষণায় অগ্রগতি নেই বাংলাদেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশকে প্রত্যাশিত অগ্রগতি অর্জন করতে হলে বিভিন্ন খাতের ওপর গবেষণা বাড়ানোর বিকল্প নেই। এজন্য ২০১৪ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) হরাইজন-২০২০ ফান্ড চালু হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে যৌথ উদ্যোগে গবেষণায় অর্থায়ন করছে ইইউ। বাংলাদেশি গবেষকরা ২০১৪ সালে এ ফান্ড থেকে ১৫টি প্রকল্পে অর্থায়ন পেয়েছে। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি প্রস্তাব এসেছে। এ ফান্ড থেকে অর্থায়ন পেতে গবেষকদের আহ্বান জানানো হয়েছে। গতকাল মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) সম্মেলন কক্ষে এক সেমিনারে বক্তারা এ আহ্বান জানান।

এমসিসিআই ও ইইউ প্রতিনিধি দলের যৌথ আয়োজনে এ সেমিনারে ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশ অর্থনীতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে এখন নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। এখন আমাদের লক্ষ্য মধ্য আয়ের দেশে রূপান্তরিত হওয়া। তথ্যপ্রযুক্তিতে উন্নয়ন হয়েছে দেশ। ই-কমার্সের বড় বাজার তৈরি হয়েছে। কিন্তু তার জন্য যে অবকাঠামো দরকার তা নেই। সেজন্য প্রয়োজন গবেষণা। অন্যদিকে সফটওয়্যার খাতেও বাংলাদেশের রয়েছে উজ্জ্বল সম্ভাবনা। এসব ক্ষেত্র নিয়েও গবেষণা করতে হবে।’

এমসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবিরের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। অন্যদের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আনোয়ার হোসেন, ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। পরে সেমিনারের মূল আলোচ্য বিষয়ে বক্তব্য রাখেন ভারতে নিয়োজিত ইইউ প্রতিনিধিদলের গবেষণা ও উদ্ভাবনবিষয়ক প্রধান তানিয়া ফ্রেডরিক ও উপদেষ্টা ড. বিবেক দাম।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, জলবায়? পরিবর্তনের বড় প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়ছে। এর মোকাবিলার জন্য গবেষণা জরুরি। দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে বড় উন্নয়ন সাধন করেছে। গবেষণার মাধ্যমেই উন্নয়নমূলক কাজ ত্বরান্বিত করতে হবে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতের গবেষণা কাজে ইইউ সহায়তা করছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বরাবরই বাংলাদেশের উন্নয়নের পাশে ছিল। ভবিষ্যতেও থাকবে। গবেষণা খাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহায়তা দেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সভাপতির বক্তব্যে ব্যারিস্টার নিহাদ কবির বলেন, ইইউ ২০১৪ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মেয়াদে হরাইজন-২০২০ নামে গবেষণা ফান্ড চালু করেছে। এর মাধ্যমে প্রায় ৮০ বিলিয়ন ইউরো (৭১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা প্রায়) অর্থ ব্যয় করা হবে। এরই মধ্যে বেশ কিছুটা সময় পেরিয়ে গেছে। বিগত ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ৮০টি গবেষণা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ১৫টি গৃহীত হয়েছিল। ওই প্রকল্পগুলোয় বাংলাদেশ প্রায় ১১০ লাখ ইউরো অর্জন করেছে। কিন্তু এ বছর এ ধরনের প্রস্তাবের সংখ্যা খুবই সীমিত। এখন পর্যন্ত দুটি মাত্র প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছেন গবেষকরা। গবেষণার অভাব আমাদের বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধির ধীরগতির অন্যতম কারণ বলেও তিনি চিহ্নিত করেন।

পরে হরাইজন-২০২০ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ভারতে নিয়োজিত ইইউ প্রতিনিধি দলের গবেষণা ও উদ্ভাবনবিষয়ক প্রধান তানিয়া ফ্রেডরিক বলেন, এ অর্থ কোনো উন্নয়ন সহায়তা নয়। এটা গবেষণা ও উদ্ভাবনের কাজেই বিনিয়োগ করা হচ্ছে। তবে এটা কোনো ব্যক্তিগত উদ্যোগের গবেষককে দেওয়া হবে না। এর ক্ষেত্রে ইউরোপীয় একাধিক দেশের গবেষকের সঙ্গে বাংলদেশ ও অন্যান্য দেশের গবেষকদের যৌথ উদ্যোগ হতে হবে। বিজ্ঞান, শিল্পোদ্যোগ ও সামাজিক অবস্থা-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের ওপর এসব গবেষণা প্রস্তাবনা করতে হবে। এর মাধ্যমে উন্নত ও অনুন্নত বিশ্বের মধ্যে মেধা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার সমন্বয় করার প্রস্তাব করা হয়।

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০