শরিফুল ইসলাম পলাশ: তালিকাভুক্তির পর থেকেই কমছে ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের আয়। পাশাপাশি কমছে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা। ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিন বছরে কোম্পানির মুনাফা ৬১ শতাংশ কমেছে। একইভাবে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) এক টাকা ৬২ পয়সা। আয় ও মুনাফা কমার কারণে আগ্রহ হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। যে কারণে দুবছরের বেশি সময় ধরে ইস্যুমূল্যের নিচে এর শেয়ারদর।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ব্যবসা সম্প্রসারণে নতুন তিনটি হোটেল প্রতিষ্ঠা এবং ব্যাংকঋণ পরিশোধের জন্য ২০১২ সালে পুঁজিবাজারে আসে ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট। সে সময় ৬৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ ৭৫ টাকা ইস্যুমূল্যে দুই কোটি ৬০ লাখ শেয়ার ছেড়ে ১৯৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের কোম্পানিটি। তালিকাভুক্তির সময় কোম্পানিটির পরিচালন আয় ছিল ২১৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্যবস্থাপনা ব্যয় হয়েছিল ৪৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ওই অর্থবছরে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা হয় ১১৪ কোটি ৬৫ লাখ পাঁচ হাজার টাকা। আর ইপিএস ছিল চার টাকা দুই পয়সা। অন্যদিকে তালিকাভুক্তির পর থেকে কোম্পানিটির পরিচালন আয়, কর-পরবর্তী মুনাফা ও ইপিএস কমছে। কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা ২০১৩ সালে কমেছে ১৩ কোটি ও ২০১৪ সালে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। তবে তিন বছরের মধ্যে সর্বশেষ ২০১৫ সালে সবচেয়ে বেশি কর-পরবর্তী মুনাফা কমেছে, যার পরিমাণ প্রায় ৪৪ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটির পরিচালন আয় প্রায় ছয় কোটি টাকা কমে ২১০ কোটি ৯৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। তবে আয় কমলেও ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমেনি, বরং প্রায় দুই কোটি টাকা বেড়েছে। ওই অর্থবছরে ব্যবস্থাপনার পেছনে ৪৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আয়-ব্যয়ে ভারসাম্যহীনতায় কর-পরবর্তী মুনাফা ৬১ দশমিক চার শতাংশ কমে ৭০ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় নেমেছে। আর ইপিএস তিন বছরে এক টাকা ৬২ পয়সা কমে দুই টাকা ৪০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছরে (১৮ মাসের জন্য) বিনিয়োগকারীদের ২২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে ইউনিক হোটেল। সে হিসেবে লভ্যাংশ দেওয়ার হারও কমেছে।
এদিকে তালিকাভুক্তির পর পরিচালন আয়, কর-পরবর্তী মুনাফা, ইপিএস ও লভ্যাংশের হার কমে যাওয়া কারণে কোম্পানির প্রতি আগ্রহ হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। যে কারণে দুই বছরের বেশি সময় ধরেই ইস্যুমূল্যের নিচে কোম্পানিটির শেয়ারদর। ২০১২ সালে প্রিমিয়ামসহ ৭৫ টাকা ইস্যুমূল্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনিক হোটেলের শেয়ারদর ২০১৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর ৬৬ টাকা ১০ পয়সা ছিল, যা গত ২২ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) সর্বশেষ ৪৭ টাকা ১০ পয়সা দরে লেনদেন হয়েছে। সে হিসেবে তালিকাভুক্তির পর তিন বছরে ২৭ টাকা ৯০ পয়সা দর হারিয়েছে কোম্পানিটি।
নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্যানুযায়ী, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রতিকূল বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক পরিস্থিতি, নতুন নতুন প্রতিযোগির সঙ্গে টিকে থাকতে ব্যবস্থাপনা ব্যয় বৃদ্ধি এবং নতুন তিনটি হোটেল প্রতিষ্ঠায় সময়ক্ষেপণের কারণে কোম্পানিটি মুনাফার ধারা ধরে রাখতে পারছে না। তবে বিভিন্ন সময়ে কোম্পানির পক্ষ থেকে নতুন প্রকল্প ও জমি কেনার ঘোষণায় শেয়ারদর ওঠানামা করেছে।
হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের প্রিমিয়াম ও আয়-মুনাফা কমা প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান-উর রশিদ চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কোম্পানিটি যখন পুঁজিবাজারে আসে তখনই বিনিয়োগকারীরা আইপিও বাতিলের দাবি তুলেছিল। কিন্তু তারপরও টাকা তোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোনো লাভ হয়নি। বরং কোম্পানির আয়-মুনাফা-লভ্যাংশ ও শেয়ারদর কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা লোকসানের মুখে পড়েছে। কোম্পানিটির আয় কেন কমছে খতিয়ে দেখা উচিত।’
অন্যদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে কোম্পানিটির পরিচালন আয় ১০৪ কোটি ২৯ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে ব্যবস্থাপনা ব্যয় হয়েছে ২৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আর কর-পরবর্তী মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৩৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকায়। ছয় মাসে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে এক টাকা ২১ পয়সা। অর্থবছরের বাকি সময়ে এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০১৬ অর্থবছর শেষে কোম্পানিটির পরিচালন আয় ২০৮ কোটি টাকা, ব্যবস্থাপনা ব্যয় ৪৯ কোটি টাকা, কর-পরবর্তী মুনাফা ৭১ কোটি টাকা ও ইপিএস দুই টাকা ৪২ টাকায় দাঁড়াবে।
তবে এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নূর আলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। পরে খুদেবার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
Add Comment