যশোরে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে সাফল্য

মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: সারাবছর টমেটোর চাহিদা থাকলেও একসময় আবহাওয়ার কারণে শুধু শীতকালেই সবজিটির চাষ হতো। কৃষিবিজ্ঞানীদের সফলতার কারণে এখন বছরের ১২ মাসই চাষ হচ্ছে টমেটোর। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিউট উদ্ভাবিত ‘বারি-৮’ নামে নতুন জাতের গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে আশার আলো দেখছেন যশোরের চাষিরা। এরই মধ্যে উন্নত জাতের এ টমেটো চাষে ব্যাপক ফলনও পেয়েছেন তারা। বারি-৮ টমেটো খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বাজারেও রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা। ফলে তারা দামও পাচ্ছেন ভালো। কৃষকরা বলছেন, অধিক ফলন আসায় এ টমেটো চাষ করে লাভবান হচ্ছেন তারা। তাই আগামীতে আরও বেশি জমিতে চাষের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। কৃষিবিজ্ঞানীরা বলছেন, স্বল্পমেয়াদি ও রোগ-প্রতিরোধক উন্নত ফলনশীল এই টমেটোর চাষ খুব দ্রুত সময়েই সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিউট সারাদেশে মোট ছয়টি টমেটোর জাত নিয়ে ২০২১ সাল থেকে কৃষক পর্যায়ে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করে। এর মধ্যে যশোরের বাঘারপাড়ার দরাজহাট ইউনিয়নের দাঁতপুর গ্রামেই ৫০ বিঘা জমিতে বারি-৮ নামে উন্নত জাতের এই টমেটোর চাষ করা হয়। পরীক্ষামূলক চাষের প্রথম মৌসুমেই ব্যাপক ফলন পেয়েছেন এখানকার কৃষকরা।

যশোর নড়াইল সড়কের ছাতিয়ানতলা বাজার পার হয়ে রাস্তার দুই ধারে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে এসব টমেটো ক্ষেত। প্রতিটি ক্ষেতই পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। পলিথিনের ঢাকা এসব শেডের নিচের গাছগুলোতে থরে থরে ঝুলে রয়েছে সবুজ ও লাল রঙের টমেটো। কৃষকের নিবিড় পরিচর্যায় প্রতিটি গাছেই প্রচুর পরিমাণ টমেটোর ফলন এসেছে।

দাঁতপুর গ্রামের কৃষক সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন, আগে তারা এই মাঠে অন্য জাতের টমেটো চাষ করতেন। এ বছর তারা যশোর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণার বিজ্ঞানীদের সার্বিক সহযোগিতায় বারি-৮ জাতের টমেটো চাষ করেছেন। প্রথম মৌসুমেই তারা ব্যাপক ফলন পেয়েছেন বলে জানান তিনি।

একই মাঠে কথা হয়, কৃষক ইমাদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ বছর বৈরী আবহাওয়ার জন্য অন্য ফসলের দিকে মনোযোগী হতে পারেননি। তবে টমেটো চাষে ব্যাপক লাভের আশা করছেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, বারি-৮ টমেটোর ফলন অন্যান্য জাতের চেয়ে ফলন প্রায় দ্বিগুণ। প্রতিটি গাছে ৩০-৪০টি ফল ধরে এবং গাছপ্রতি ফলন হয় প্রায় ১৫ কেজি। তিনি বলেন, অন্যান্য টমেটোর গড় ওজন ৩০ থেকে ৩৫ গ্রাম ওজন হলেও নতুন এ জাতের টমেটোর গড় ওজন ৫০ গ্রামেরও বেশি। এছাড়া চারা লাগানোর মাত্র ৬০ দিনের মধ্যেই ফল পাকতে শুরু।

শহর আলী নামে আরেক কৃষক বলেন, মাত্র এক শতক জমিতে বারি টমেটো-৮ চাষ করে উৎপাদন খরচ বাদে প্রায় ৯ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। অন্য জাতের টমেটো চাষে সেটি সম্ভব হয় না। এছাড়া এই টমেটোর জাতটি অনেকটা বেশি রোগ প্রতিরোধক। গ্রীষ্মকালে ফল ধারণের জন্য হরমোন প্রয়োগ না করলেও চলে। তিনি বলেন, এসব কারণে তারা বারি টমেটো-৮ চাষে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। তবে হরমোন প্রয়োগ করলে ফলন বেশি হয় বলে তিনি জানান।

যশোর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কাওছার উদ্দীন আহম্মদ বলেন, চলতি মৌসুমে যশোরের বাঘারপাড়ার দাঁতপুর গ্রামের ৪০ কৃষকের ৫০ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলক বারি টমেটো-৮ চাষ করা হয়। এসব কৃষককে এ টমেটো চাষের জন্য কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বীজ, সার, কীটনাশক ও হরমোন দেয়া হয়। কৃষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ টমেটো চাষে দক্ষ করা হয়। তিনি বলেন, কৃষকরা প্রথম বছরেই এমন লাভবান হবেন, তা আগে তারা কখনও বুঝতে পারেননি। অন্যান্য জাতের চেয়ে এ টমেটোর আকার বড় ও কালার হওয়ায় তারা বাজারে ভালো দামে বিক্রি করতে পারছেন। তিনি বলেন, গ্রীষ্মের আবহাওয়ার সঙ্গে শতভাগ সামঞ্জস্য এ নতুন জাতের টমেটো চাষে আগামীতে কৃষিতে বিপ্লব সৃষ্টি করবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০