রহমত রহমান: আবাসন খাতের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান এবিসি রিয়েল এস্টেট লিমিটেড। এবিসি গ্রুপের প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যয় বা কেনাকাটা ও ভাড়ার ওপর সঠিকভাবে ভ্যাট পরিশোধ করা হয় না। পাঁচ বছরে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়েছে। মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এই ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে। ফাঁকি দেয়া ভ্যাট পরিশোধে ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেট থেকে এ প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে। এবিসি রিয়েল এস্টেট ছাড়াও এই গ্রুপের আরও দুটি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে এবিসি রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের পরিচালক নাশিদ ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এ রকম কোনো বিষয় তো আমার জানা নেই। আমাদের এ বিষয়ে যে টিম কাজ করে, সেই টিমকে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছি।’ তবে এবিসি রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের কোনো কর্মকর্তা বক্তব্য দিতে যোগাযোগ করেননি। পরে কয়েক দিন ধরে নাশিদ ইসলামের ব্যক্তিগত নম্বরে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে বক্তব্যের বিষয় লিখে দিলে তিনি সিন করেন। তবে কোনো জবাব দেননি।
সূত্রমতে, এবিসি গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা এবং তিনটি প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষা করার উদ্যোগ নেয় মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (ভ্যাট গোয়েন্দা)। তিনটি প্রতিষ্ঠান হলো এবিসি রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, এবিসি বিল্ডিং প্রোডাক্টস লিমিটেড, অ্যাসোসিয়েটেড বিল্ডার্স করপোরেশন লিমিটেড। নিরীক্ষায় তিনটি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়। পরে তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির মামলা করা হয়। এর মধ্যে এবিসি রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে দুই কোটি ৮৩ লাখ তিন হাজার ৩১২ টাকা ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়। চলতি বছরের ৮ মে মামলা করে ব্যবস্থা নিতে ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী সম্প্রতি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ দাবিনামা-সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক দলিলাদি ও দাখিলপত্র যাচাই করে দেখা গেছে, এবিসি রিয়েল এস্টেট লিমিটেড কেনাকাটা বা ব্যয়ের ক্ষেত্রে উৎসে ভ্যাট কর্তন করে সরকারি কোষাগারে জমা দেয় না। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত উৎসে কর ফাঁকি দিয়েছে এক কোটি সাত লাখ ৩২ হাজার ৪৭৩ টাকা। এই অপরিশোধিত উৎসে ভ্যাটের উপর দুই শতাংশ হারে সুদ ৯ লাখ ১২ হাজার ৩৯৪ টাকা। সুদসহ ফাঁকির পরিমাণ প্রায় এক কোটি ১৬ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬৭ টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি বিজ্ঞাপন, অডিট ফি, বিনোদন, ইন্টারনেট বিল, অফিস ভাড়া, অফিস স্টেশনারি, পোস্টেজ অ্যান্ড স্ট্যাম্প, অফিস মেরামত, গাড়ি মেরামত, সেলস প্রমোশন, অফিস ইক্যুপমেন্ট, ফার্নিচার ক্রয়, কনস্ট্রাকশন ইক্যুপমেন্ট, মিনিবাস ক্রয়, ইলেকট্রিক ম্যাটেরিয়াল, সেনেটারি ম্যাটেরিয়াল, শাটার ম্যাটেরিয়ালসহ প্রায় ৩০ ধরনের ব্যয় বা কেনাকাটায় উৎসে ভ্যাট কর্তন করে জমা দেয়া হয়নি। ২০১৯-২০ অর্থবছর এক কোটি ৬৯ লাখ ৫৯ হাজার ৭৮৯ টাকা এবং ২০২০-২১ অর্থবছর এক কোটি ৫৬ লাখ ২৫ হাজার ৮৭২ টাকাসহ দুই অর্থবছর প্রযোজ্য উৎসে ভ্যাট মোট তিন কোটি ২৫ লাখ ৮৫ হাজার ৬৬১ টাকা। এর মধ্যে দুই কোটি ১৮ লাখ ৫৩ হাজার ১৮৮ টাকা পরিশোধ করা হলেও বাকি এক কোটি সাত লাখ ৩২ হাজার ৪৭৩ টাকা পরিশোধ না করে ফাঁকি দিয়েছে। ফাঁকি দেয়া এ ভ্যাটের ওপর দুই শতাংশ হারে প্রযোজ্য সুদ ৯ লাখ ১২ হাজার ৩৯৪ টাকা। সুদসহ মোট ফাঁকি এক কোটি ১৬ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬৭ টাকা।
অপর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবিসি রিয়েল এস্টেট ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ব্যয় বা কেনাকাটার ক্ষেত্রে উৎসে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে এক কোটি আট লাখ ৭৯ হাজার ৪১৯ টাকা। এর ওপর দুই শতাংশ হারে প্রযোজ্য সুদ ৫৭ লাখ ৭৯ হাজার ২৬ টাকা। সুদসহ মোট ফাঁকি দিয়েছে এক কোটি ৬৬ লাখ ৫৮ হাজার ৪৪৫ টাকা। ২০১৬-১৭ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত প্রায় ৩০টি খাতে (প্রতি অর্থবছর আলাদা আলাদা) কেনাকাটা বা ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি এই উৎসে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
সূত্রমতে, এবিসি রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করা হয়। দুটি মামলায় প্রতিষ্ঠানকে পৃথক দাবিনামা-সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছে ঢাকা ভ্যাট উত্তর কমিশনারেট।
উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সালে এবিসি রিয়েল এস্টেট লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয়। আবাসন ও নির্মাণ খাতের স্বনামধন্য এবিসি রিয়েল এস্টেট অ্যাসোসিয়েট বিল্ডার্স করপোরেশন লিমিটেডের (এবিসি লিমিটেড) একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান।