নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘নালন্দা’র মতো হয়ে উঠুকÑএমনটাই নিশ্চিত করতে চেয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হবে আনন্দ নিকেতন, মানুষ গড়ার কারখানা। গতকাল রাজধানীর কেরানীগঞ্জের তারানগরে ছায়ানট-নালন্দা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অপালা ভবনের দ্বার উদ্ঘাটন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
নালন্দার শিক্ষা কার্যক্রমের প্রশংসা করে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করার অধিকার থাকতে হবে। পারিবারিক পরিসরেও গণতান্ত্রিক চর্চা থাকতে হবে। আর প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মনোবৃত্তি তৈরি করতে হবে। যে শিক্ষা আয়তন এ চর্চা করে, সেই শিক্ষা আয়তনই সত্যিকারের শিক্ষায়তন। সে রকম একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মনে হচ্ছে নালন্দা। আমাদের দেশের সব শিক্ষায়তন হয়ে উঠুক এই রকম আনন্দময় শিক্ষায়তন।’
নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে আমরা স্বপ্নের মানুষ পাব না। সে জন্য পুরো শিক্ষাক্রমটাকে পাল্টে ফেলার চেষ্টা করছি। যেখানে মুখস্থ বিদ্যালয় নয়, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়ে উঠবে আনন্দ নিকেতন। শিক্ষায়তন হয়ে উঠবে মানুষ হয়ে ওঠার কারখানা।’
নালন্দা ভাবনের প্রসঙ্গ টেনে শিক্ষা প্রকৌশলীদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনও যেন আনন্দ নিকেতন হিসেবেই গড়ে তোলা হয়। ভবন নির্মাণ ও নকশায় প্রভাব থাকে।’
দীপু মনি বলেন, ‘ষাটের দশক থেকে ছায়ানট বাঙালির চর্চা ও সাধনাকে খরপ্রবাহে স্রোতস্বিনী করার কাজে নিয়োজিত হয়েছে। ১৯৬৭ সালে রমনার বটমূলে বর্ষ উদযাপনের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধিকার ও স্বাধীনতার চেতনা জাগ্রত করার অনন্য প্রয়াস গ্রহণ করে ছায়ানট। স্বাধীন বাংলাদেশে বাঙালির ঐতিহ্যকে জাগিয়ে রাখার ঐতিহ্য হয়ে ওঠে। ছায়ানট শিশুদের নালন্দা বিদ্যালয়ের সংস্কৃতি সমন্বিত আনন্দময় বিশেষ শিক্ষা কার্যক্রম হাতে নেয়। এই শিক্ষা সুদূর প্রসারী প্রভাব ফেলছে শিশুশিক্ষার্থীদের মনে ও মানস গঠনে। বাংলাদেশের সংস্কৃতির যাত্রা পথকেও এ শিক্ষাদর্শ মসৃণ করে তুলছে। অন্যদিকে নিত্য নবমাত্রার সঞ্চার করছে বাঙালি সংস্কৃতির সঞ্জীবিত ধারায়। শিশুদের সামগ্রিক বিকাশ কেন্দ্র নালন্দার লক্ষ্য শিশুচিত্তে উদ্ভাবন মানসিকতা, বিচার বোধ উসকে দেয়া, শিশুর গ্রহণ ও ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নির্দ্বিধায় নিঃসংকোচে প্রশ্ন করার পরিসর সৃষ্টি। শিশুদের মনে প্রকৃতি ও মানব প্রেমের আনন্দ যোগসহ বাংলা ও বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে বিশ্বসংস্কৃতির অন্তরঙ্গ সম্মিলনের মধ্য দিয়ে পরিচালিত নালন্দার শিক্ষা কার্যক্রম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রচলিত নানা শিক্ষা পদ্ধতি থেকে প্রতিষ্ঠিত আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিগুলোর ভালো দিক পর্যালোচনা করা ও তা বাঙালির সংস্কৃতি ও মূলবোধে জারিত করে নালন্দার শিক্ষা পদ্ধতি ও পাঠক্রম নির্ধারিত। গতানুগতিক সূচি পদ্ধতির শ্রেণি শিক্ষা ধারার মুখস্থ বিদ্যা আর পরীক্ষা নির্ভরতা পরিহার করে বৈজ্ঞানিক গবেষণা আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষা অনুসৃত হচ্ছে নালন্দায়। আঁকা, গল্প, নাটক, কবিতা, নৃত্যগীত, খেলা, বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ, অভিজ্ঞতা সঞ্চায় ও যুক্তিতর্কের সমন্বয়ে আবর্তিত হচ্ছে এর পাঠ ও অনুশীলন।’
শিক্ষামন্ত্রী জানান, ২০০৩ সালে তিনটি শ্রেণি নিয়ে এর যাত্রা শুরু। প্রতি বছর একটি শ্রেণি যোগ করে ২০১২ সাল থেকে দশম শ্রেণিতে পাঠদান শুরু হয়। বর্তমানে নালন্দা-ছায়ানট ট্রাস্ট পরিচালিত এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে নিবন্ধিত একটি উচ্চ বিদ্যালয়। জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রম ও নালন্দার স্বতন্ত্র শিক্ষাদর্শ সমন্বিত রূপ অনুসরণ করে চলছে নালন্দার পাঠদান প্রক্রিয়া। বিগত ১৬ বছর ধরে ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনেই নালন্দা বিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। শিশুদের সহজ, স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বাধীনভাবে বিকশিত করার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ভিন্নধর্মী এক আনন্দময় শিক্ষায় শিশুদের দীক্ষিত করছে। দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সংগতি রেখে ভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে নালন্দা শিশুদের পঠন-পাঠন ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিকে করে তুলছে ভিন্নমাত্রিক।
প্রসঙ্গত, সরকারের সহায়তায় তৈরি হচ্ছে অপলা ভবন। তিনটি তলা নির্মিত হয়েছে। ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর করেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক।