শেয়ার বিজ ডেস্ক: শস্য চুক্তির আওতায় ইউক্রেনের বন্দর থেকে এখন পর্যন্ত ৪০ লাখ টনের বেশি শস্য রপ্তানি করেছে ইস্তাম্বুল। এই রপ্তানি প্রক্রিয়া এখনও অব্যাহত রয়েছে। গত শুক্রবার ইস্তাম্বুলে সংবাদকর্মীদের এ তথ্য জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। খবর: আনাদোলু এজেন্সি।
তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের পাশাপাশি রাশিয়ার শস্য ও সার রপ্তানির গুরুত্বের ওপরও জোর দেন এরদোয়ান। এই উদ্যোগ দরিদ্র দেশগুলোকে সাহায্য করবে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করার পর ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি মুখ থুবড়ে পড়ে। বিপুল পরিমাণ শস্য ইউক্রেনে আটকে পড়ে। এসব শস্যের পরিমাণ প্রায় দুই কোটি টন। ইউক্রেনের বন্দর অবরোধ করে এ বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য রপ্তানি রাশিয়া আটকে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি অভিযোগ করেন, ইউক্রেনের প্রায় অর্ধেক খাদ্যশস্য রপ্তানি বর্তমানে আটকে রয়েছে। আজভ ও কৃষ্ণ সাগরের মধ্য দিয়ে রপ্তানির প্রধান রুটটি অবরোধ করে রেখেছে রাশিয়া। দীর্ঘ অচলাবস্থা কাটাতে গত ২২ জুলাই জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় মস্কোর সঙ্গে চুক্তিতে উপনীত হয় কিয়েভ। আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ব্ল্যাক সি গ্রেন ইনিশিয়েটিভ’ বলা হলেও এটি ইস্তাম্বুল শস্য চুক্তি নামে পরিচিতি পায়। এর আওতায় ইউক্রেনের কৃষ্ণ সাগর উপকূলীয় বন্দর ছাড়তে শুরু করে শস্যবাহী বিভিন্ন জাহাজ। চুক্তিতে ইউক্রেনীয় খাদ্যশস্যের পাশাপাশি রাশিয়ায় উৎপাদিত খাদ্যশস্য ও সারও বিশ্ববাজারে আনার কথা বলা হয়েছে। গত শুক্রবার এ বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করেন এরদোয়ান।
যুদ্ধ শুরুর পর গত আগস্টে ইউক্রেনের শস্যবাহী প্রথম জাহাজ আফ্রিকার জিবুতিতে পৌঁছায়। জিবুতিতে লোহিত সাগরের একটি বন্দরে শস্যের প্রথম চালান পৌঁছেছে। লেবাননের পতাকাবাহী এমভি ব্রেভ কমান্ডার নামের জাহাজটিতে ২৩ হাজার টন গম ছিল। জাহাজটির ইথিওপিয়ায় যাওয়ার কথা। কৃষ্ণ সাগর থেকে যাত্রা করে আফ্রিকায় পৌঁছাতে জাহাজটির দুই সপ্তাহ লেগেছে। একই মাসে ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, ৮২টি দেশের ৩৪ কোটি ৫০ লাখ মানুষ ব্যাপক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে আছে ৪৫টি দেশের পাঁচ কোটি মানুষ। মানবিক সহায়তা না পেলে ঝুঁকি বাড়তে থাকবে। ইউক্রেনে নিযুক্ত ডব্লিউএফপির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর ম্যারিয়েন ওয়ার্ড বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষকে সহযোগিতা করতে ইউক্রেনের বন্দর থেকে অন্য জাহাজগুলো ছাড়ার পরিকল্পনা করছি আমরা।
এরই ধারাবাহিকতায় যুদ্ধের মধ্যেই তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় শস্য চুক্তির আওতায় খাদ্যপণ্য রপ্তানি করেছে ইউক্রেন। কৃষ্ণ সাগর বন্দর দিয়ে এসব পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। সম্প্রতি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ১৫টি দেশে ৪৪টি জাহাজে করে এসব খাদ্যপণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। আগামী কয়েক দিনে আরও প্রচুর পরিমাণে খাদ্যপণ্য বিভিন্ন দেশে পাঠানো হবে। এক মাসে তিন লাখ টন খাদ্যপণ্য রপ্তানির লক্ষ্য রয়েছে কিয়েভের। ক্রেডিট রেটিং প্রতিষ্ঠান এসঅ্যান্ডপি জানিয়েছে, ইউক্রেন থেকে সবচেয়ে বেশি গম রপ্তানি হয় মিসরে। এর পর রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, তুরস্ক, ইয়েমেন, ফিলিপাইন, তিউনিশিয়া, লিবিয়া ও ইথিওপিয়া। এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৬০ হাজার টন খাদ্যশস্য রপ্তানি করেছে ইউক্রেন।
বিশ্বে মোট গম রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশ হয় রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। ইউক্রেন বিশ্বের চতুর্থ খাদ্যশস্য রপ্তানিকারক দেশ। বিশ্বের ৪২ ভাগ সূর্যমুখী তেল উৎপাদিত হয় দেশটিতে। এছাড়া মোট ভুট্টার ১৬ শতাংশ ও গমের ৯ শতাংশ উৎপাদন করে দেশটি। এই যুদ্ধের কারণে বিশ্বে গমের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক রাশিয়া থেকেও রপ্তানি কমে গেছে। এরপর যুদ্ধের কারণে কৃষ্ণ সাগরে শস্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিশ্বজুড়ে খাদ্যসংকট দেখা দেয়। বিশেষ করে গমভিত্তিক তৈরি রুটি ও পাস্তার মতো অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। এছাড়া রান্নার তেল ও সারের দামও বিশ্বজুড়ে বেড়েছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ ‘প্রচণ্ড রকমের খাদ্যসংকটে’ ভুগছেন। সবমিলিয়ে ইউক্রেনে যুদ্ধের ফলে ধাক্কা খেয়েছে গোটা বিশ্ব।