প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার: চা শ্রমিকদের মজুরি ১৭০ টাকার ভিত্তিতে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বকেয়া মজুরি প্রদানের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন। গতকাল রোববার দুপুরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন মজুরি বৃদ্ধির জন্য যে আন্দোলন ঘোষণা করেছিল সেই ঘোষণার পর বাংলাদেশের সব চা শ্রমিকনেতা, চা শ্রমিক মা-বোন-ভাইসহ ছাত্র ও যুবসমাজ একযোগে মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ ও চট্টগ্রাম জেলায় আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। সেই আন্দোলন-সংগ্রামের সুফল হিসেবে গত ২৭ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে চা শ্রমিকদের ১৭০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করা হয়।
বাংলাদেশ চা সংসদ ও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় শ্রম চুক্তির বিগত ধারা অনুযায়ী ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট পর্যন্ত চা শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি মালিক পক্ষের পরিশোধ করার কথা থাকলেও মালিকরা সেটা করছেন না। এছাড়া মালিক পক্ষ চা বাগানগুলোকে শ্রেণিভেদে চা শ্রমিকদের সমমজুরি থেকে বঞ্চিত রাখছেন। স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিকদের সমপরিমাণ মজুরির চুক্তি থাকলেও বেশিরভাগ চা বাগানের মালিক পক্ষ অস্থায়ী শ্রমিকদের জন্য নিজেরা মজুরি নির্ধারণ করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা মোতাবেক অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধির কথা থাকলেও সেখানেও শুভংকরের ফাঁকি দিয়ে চলেছেন, যার ফলে চা শ্রমিকদের মধ্যে বিরাট ক্ষোভ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হতে চলেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন দুর্গাপূজা উৎসব উদ্যাপনের আগে চা শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ইউনিয়নের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়। অন্যথায় বকেয়া মজুরিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অপরিশোধিত থাকলে আবার শ্রম অসন্তোষ কিংবা দেশে চা উৎপাদনশীলতায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হলে কোনোভাবেই ইউনিয়নকে দায়ী করা যাবে না বলে জানান চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতারা।
এদিকে সংবাদ সম্মেলন শেষে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ চা সংসদের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি প্রতি দুই বছর অন্তর অন্তর হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে আমাদের এ মজুরি কার্যকর হবে এবং ৫০ টাকা বৃদ্ধি হয়েছে। এবার মালিকপক্ষ তালবাহানা করছে। প্রতিটা শ্রমিকের দৈনিক ৫০ টাকা হারে ২০ মাসে আসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। আমাদের প্রায় ৯৭ হাজার স্থায়ী শ্রমিক আছে। সেই ৯৭ হাজার শ্রমিকের বেতন ৩০ হাজার টাকা করে হিসাব করলে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা মালিকপক্ষের কাছে পাওনা রয়েছে। সেই টাকা দেয়ার জন্য আমরা বারবার মালিকপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি। তারা বিভিন্ন তালবাহানা করছেন, বেতন না দেয়ার জন্য পরিকল্পনা করছেন। এতে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হতে চলেছে।’
এদিকে সকালে শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ চা বোর্ডের শ্রীমঙ্গলস্থ প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটে (পিডিইউ) চা উৎপাদন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দক্ষতা উন্নয়নকল্পে আয়োজিত ‘টি টেস্টিং অ্যান্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল’ প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বকেয়া মজুরি যেন দুর্গাপূজার আগে প্রদান করা হয়, সেজন্য চা বোর্ডের পক্ষ থেকে বাগান মালিকদের বলা হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাখন লাল কর্মকার, সহসভাপতি পংকজ কন্দ, কার্যকরী সভাপতি বৈশিষ্ট তাঁতি, সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দি, মনু-ধলাই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরি প্রমুখ।