প্রতিনিধি, ফটিকছড়ি : একদিকে বাবা মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত, অন্যদিকে মায়ের লিভারে টিউমার ধরা পড়েছে। চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৩০ শতাংশ লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করতে হবে মায়ের। কোথায় পাবে, কে দেবে এই দুষ্প্রাপ্য লিভার। তাই মাকে বাঁচাতে নিজের লিভার দান করতে যাচ্ছেন ফটিকছড়ির তরুণ চিকিৎসক ডা. মাসুদুল করিম।
তিনি সদ্যসমাপ্ত কুমিল্লা ময়নামতি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন। বেশ কিছুদিন আগে তার মায়ের লিভার টিউমার ধরা পড়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক ও টিমের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৩০ শতাংশ লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করতে হচ্ছে। এজন্য ভারতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হয়েছে ডা. মাসুদের মাকে।
উপরোক্ত তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডা. মাসুদুল করিম। মায়ের সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি। এছাড়াও তার পিতার ক্যান্সার রোগ আরোগ্যের জন্যও সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।
ডা. মাসুদ ফটিকছড়ি উপজেলার কাঞ্চননগর ইউপির বাসিন্দা এবং ফটিকছড়ি করোনেশন সরকারি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক মোহাম্মদ আজাহারুল ইসলামের ছেলে।
এদিকে, ডা. মাসুদের মায়ের অসুস্থতা নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন এফডিএসআরের স্টুডেন্টস উইংয়ের আহ্বায়ক ডা. জোবায়ের রাফি। তিনি তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আন্টির চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক টিম সিদ্ধান্ত দিলেছে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করাতে হবে। কীভাবে করবে সবাই চিন্তিত। কে দেবে আন্টিকে লিভার (কলিজা)। হন্য হয়ে খোঁজ করতে লাগল। কিন্তু কীভাবে সম্ভব?
যে দেশ মুমূর্ষু রোগীর জন্য রক্ত লাগলে হন্য হয়ে খুঁজতে হয়। একজন সুস্থ মানুষ রক্ত দিতে ভয় পায়, সে দেশে কলিজা ডোনেট! কল্পনার রাজ্যে বসবাস ছাড়া কিছুই নয়।
পরিবারের অন্য সবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা হলো। ছোট বোন, ছোট ভাই আর মাসুদের সাথে সবকিছু ম্যাচ করে, বাকি ভাইবোন দুজনের বয়স কম। এখনো সবকিছু বোঝার ক্ষমতা হয়ে ওঠেনি। মাসুদ সিদ্ধান্ত নিল ওর আম্মুকে বাঁচাতে হলে নিজেকেই কিছু একটা করতে হবে। মাসুদ কঠিন সিদ্ধান্ত নিল, ওর কলিজা দিয়ে আম্মু বেঁচে থাকবেন। এর থেকে ভালো কাজ জীবনে কি হয়? মাসুদের কলিজার ৩০ শতাংশ ওর আম্মুর জন্য ডোনেট করবেন।
আমি তো বলি, ৩০ শতাংশ কলিজা তো কেটে দেবে মাত্র। ও তো পুরো কলিজাটাই মা-বাবার জন্য দিয়ে দিয়েছে।’ ডা. মাসুদের এহেন কর্মকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে যাওয়ার পর থেকেই অনেকে আবেগঘন স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তার প্রতি ভূয়সী প্রশংসা করেন।