সুফল পেতে মহাসড়ক সম্প্রসারণের দাবি পরিবহন শ্রমিকদের

মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: উদ্বোধনের অপেক্ষায় কালনা সেতু। আগামী মাসে উদ্বোধন হচ্ছে ছয় লেনের এ সেতুটি। সেতুর মূল কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। তবে বহুল আকাক্সিক্ষত এ সেতুসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলো সম্প্রসারণ না করলে এ অঞ্চলের মানুষ সেতুর পুরোপুরি সুফল থেকে বঞ্চিত হতে পারে এমনি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষসহ পরিবহন শ্রমিকদের মাঝে।

সড়ক পরিবহন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেতুটি উদ্বোধন হওয়ার কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ঢাকার সঙ্গে যোগাগে নতুন মাত্রা যোগ হলেও সংকীর্ণ সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে দুর্ঘটনার সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যে কারণে নড়াইল, বেনাপোল, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ আশপাশের সড়কগুলোকে দ্রুত চার লেনে রূপান্তরিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য কালনা সেতু অনেক কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। পদ্মা সেতু চালু হলেও মধুমতী নদীর ওপর কালনা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় এর পূর্ণ উপযোগ মেলেনি এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের।

সেতুটি চালু হলে ঢাকার সঙ্গে নড়াইল, বেনাপোল, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ আশপাশের সড়কপথের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার থেকে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত কমে যাবে। এছাড়া এটি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ক্রসবর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় হওয়ায় ভারতের কলকাতা, আসামসহ দেশের বাইরে যোগাযোগ ও অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে। তবে প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে, সেতুসংলগ্ন কালনা-নড়াইল ভায়া যশোর, সাতক্ষীরা, বেনাপোল সড়ক সম্প্রসারণ না করেই উদ্বোধনের কারণে এ সুফল কতটা পাবে এ অঞ্চলের মানুষ।

এ বিষয়ে যশোর জেলা পরিবহন শ্রমিক সংস্থার সভাপতি আজিজুল আলম মিন্টু বলেন, সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় যশোরসহ দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগে নতুন মাত্রা যোগ হবে। তবে এ অঞ্চলের সড়কগুলোকে সম্প্রসারণ হলে আরও ভালো হতো। তিনি বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৬ লেনের এ সেতু নির্মাণ হয়েছে। এখন এটি খুব দ্রুত সময়ে উদ্বোধন করবে বলে শুনছি। সঙ্গে সরকারের কাছে দাবি দ্রুত যেন সেতু-সংলগ্ন এ অঞ্চলের সব সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়।

পরিবহন শ্রমিক সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আজিজুল আলম মিঠু বলেন, কালনা সেতু উদ্বোধন হচ্ছে এমন খবর শুনে আমরা খুশি। তবে এর পাশাপাশি আমরা শঙ্কায় রয়েছি। এর বড় কারণ হচ্ছে যশোর থেকে সেতুর সংলগ্ন যে সড়ক রয়েছে তা এক লেনের সড়ক। সেতুটি উদ্বোধনের পরপরই যানবাহনের চাপ বেড়ে যাবে। ফলে এতে দুর্ঘটনার পাশাপাশি যানজটের কবলে পড়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগবে। তিনি বলেন, আমরা চাই সরকার এ অঞ্চলের মানুষের সুবিধার জন্য ভাঙা হয়ে যশোর পর্যন্ত ফোর লেনের সড়কে উন্নীত করা হোক। 

জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মধুমতী নদীর ওপর কালনা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর পশ্চিমপাড়ে নড়াইলের লোহাগড়ার কালনাঘাট এবং পূর্বপাড়ে কাশিয়ানীর শংকরপাশা। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে এখানেই নির্মাণ করা হয়েছে সেতুটি। নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) সেতু এটি। দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার। উভয় পাশে ছয় লেনের সংযোগ সড়ক সাড়ে ৪ কিলোমিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় ৯৬০ কোটি টাকা। এশিয়ান হাইওয়েতে থাকা সেতুটি সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিলেটের তামাবিল হয়ে ঢাকা, ভাঙ্গা, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, কলকাতা পর্যন্ত সরাসরি ভূমিকা রাখবে।

এ বিষয়ে যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, কালনা সেতু উদ্বোধনের পর এ অঞ্চলের সড়কগুলোতে বিশেষ করে কালনা ভায়া নড়াইল, যশোর সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়বে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। যে কারণে এসব সড়কের দুই লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে টেন্ডার কল করা হয়েছে। এর মধ্যে সড়কের নড়াইলের চাঁচড়া মোড় থেকে যশোর মনিহার মোড় পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নে ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে ঠিকাদারকে ওয়ার্কওয়ার্ডার বুঝে দেয়া হবে বলে তিনি জানান।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর সঙ্গে এ অঞ্চলের সড়ক উন্নয়নে ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত ১৩৬ কিলোমিটার সড়কের ৬ লেনে উন্নীত করার প্রস্তাব ইতোমধ্যে তৈরি করা হচ্ছে। পরে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০