প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে ৩৫ লাখ টাকার উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটরসহ সরকারি মূল্যবান নথিপত্র চুরি ও আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। এদিকে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরও কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তৎপর কিছু অসাধু কর্মকর্তা। এ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, কুড়িগ্রামে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুর রশিদের মেয়াদকালে অফিসের ক্যাশিয়ার আব্দুল আজিজ ও গাড়িচালক জহুরুল হকের যোগসাজশে অফিসের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর চুরি ও অফিসের মূল্যবান নথিপত্র গায়েব করা হয়।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ক্যাশিয়ার আব্দুল আজিজ, গাড়িচালক জহুরুল হক, স্টোর কিপার মমিনুল ইসলাম, সিকিউরিটি গার্ড ও আউটসোর্সিংয়ের কর্মচারী তৎকালীন আব্দুর রশিদ উপপরিচালকের মেয়াদ শেষের দিকে জেনারেটর চুরি করে আত্মসাৎ করেন এবং জেনারেটর সংশ্লিষ্ট সমস্ত কাগজপত্র সরিয়ে ফেলেন। পরিচালক আব্দুর রশিদ অবসর গ্রহণ করলে বিষয়টি একেবারে ধামাচাপা পড়ে। বিষয়টি নিয়ে জনমনে গুঞ্জন শুরু হলে কয়েকজন কৃষক পরবর্তী উপপরিচালক শামসুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং জেনারেটর চুরি ও আত্মসাতের ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। কিন্তু ঝামেলা এড়াতে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে পড়েন পরবর্তী উপপরিচালক শামসছুদ্দিন মিয়া এবং অতিরিক্ত উপপরিচালক খাজানুর রহমান।
অবসরপ্রাপ্ত উপপরিচালক আব্দুর রশিদ, উপপরিচালক শামছুদ্দিন, অতিরিক্ত উপপরিচালক খাজানুর রহমান ও সদর উপজেলার সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেন। সেখানে তিনি বলেন, জেনারেটর চুরি ও আত্মসাতের বিষয়টি কোনোভাবেই যেন অফিসের বাইরে না যায়। কিন্তু বিষয়টি শহরের টক অব দ্য টাউনে পরিণত হওয়ায় রেগে যান উপপরিচালক শামছুদ্দিন। তিনি কয়েকজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য অভিযোগ এনে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন এবং কয়েকজন কর্মচারীকে বদলি করার পাঁয়তারা করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক কর্মকর্তা বলেন, ২০২২ সালের জুন মাসের ৩-৪ তারিখের দিকে অফিসের সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে জেনারেটরটি ও দাপ্তরিক কাগজপত্র অফিস থেকে সরিয়ে ফেলা হয় এবং জেনারেটর রুমের সব আলামত ধ্বংস করে বাসস্থান হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন গাড়িচালক জহরুল ইসলাম।
অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন আব্দুল মোতালেব বলেন, জেনারেটরটি ১৯৮৯ সালে ৩৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে কেনা হয়েছিল।
অভিযোগের বিষয় নিয়ে উপ-পরিচালক শামছুদ্দিন মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, জেনারেটরটি ৩২ বছরের পুরোনো এবং আপদকালীন বিদ্যুতের চাহিদা ও সেচের কাজে ব্যবহার হতো। জেনারেটরটি ছিল উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন। পরবর্তীতে তেল খরচ ও মেইনটেনেন্স খরচ বেশি হওয়ায় জেনারেটরটি দীর্ঘ দিন ধরে পরিত্যক্ত ছিল।
উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল ইসলামের আমলে অফিসের গাড়িচালক জহুরুল ইসলাম মৌখিকভাবে নজরুল ইসলামকে জেনারেটর রুমে থাকার জন্য অনুমতি দেন। মঞ্জুরুল ইসলাম আনঅফিসিয়ালি গাড়িচালককে জেনারটর রুমে থাকার অনুমতি প্রদান করেন। পরবর্তীতে তিনি জেনারেটরটি সম্পর্কে খোঁজ খবর না রাখলে সেই সুযোগে চলতি বছরের জুন মাসে সরিয়ে ফেলা হয়।
এদিকে অফিসের জেনারেটর চুরির বিষয়টি যাতে পুরোপুরি ধামাচাপা দেয়া যায় সেজন্য উপপরিচালক শামছুদ্দিন ওই অফিসের ক্যাশিয়ারসহ জেলা ও উপজেলা অফিসের ১১ জন কর্মচারীকে বদলি করেন। নবাগত উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মহন্তের সঙ্গে কথা হলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।