আরিফ হোসেন, বরিশাল : বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ার আগে কোনো পোশাক কারখানা ছিল না। তবে পদ্মা সেতু চালুর পর বরিশালে পোশাক কারখানা স্থাপনে আগ্রহী হয়েছেন অনেক শিল্পমালিকরা। ইতোমধ্যে প্রথমবারের মতো পোশাক তৈরির কারখানা স্থাপন হয়েছে বিভাগীয় শহর বরিশালে। ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন গার্মেন্টটির অবকাঠামো তৈরির পর এখন চলছে মেশিন স্থাপনের কাজ। নেমর্যাক ডিজাইন গার্মেন্টস নামের পোশাক কারখানাটি চালু হলে, এটিই হবে বরিশালের প্রথম পোশাক তৈরি কারখানা। যেখানে প্রায় সহস্রাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
নগরীর বিসিক এলাকায় নির্মিতব্য নেমর্যাক ডিজাইন গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি বছরের মধ্যেই আমাদের উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। শুধু নেমর্যাক গার্মেন্টস নয়; পদ্মা সেতু চালুর পর সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় নগরীর বিসিক এলাকায় গড়ে উঠছে শীতবস্ত্রে ব্যবহƒত কমফোর্টার কারখানা। কারখানাটি উৎপাদনে গেলে বিদেশে কমফোর্টার রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে বিএনসি হোম টেক্সটাইল লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী খায়রুল হাসান বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর চীনা সহযোগীরা আমাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া এখানে বোতলজাত পানি পরিশোধনের কারখানাও হচ্ছে। আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের বাজারে ছাড়ার আগেই এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যায়ে রয়েছে মোহিনী মিনারেল ওয়াটার।
মোহিনী মিনারেল ওয়াটারের স্বত্বাধিকারী জামাল হোসেন বলেন, আমরা আগে যে জিনিস বরিশাল থেকে ঢাকায় আট ঘণ্টায়ও ডেলিভারি দিতে পারতাম না, এখন সেটি পাঠাতে তিন ঘণ্টা সময় লাগছে। এতে আমাদের জন্য অনেক সুবিধা হয়েছে। তাই আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
বরিশাল বিভাগ উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিক বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ধীরে ধীরে পাল্টাতে শুরু করেছে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের প্রেক্ষাপট। ইতোমধ্যে পিছিয়ে পড়া বরিশালের বিভিন্ন স্থানে শিল্পকারখানাসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনের লক্ষ্যে জমি ক্রয়সহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর অর্থনীতির পথ পাল্টে যাবে। কমে যাবে বেকারত্বের হার। পাশাপাশি ব্যবসার জন্য ভালো পরিবেশ সৃষ্টি হলে উদ্যোক্তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাত্র তিন মাসের মধ্যে বরিশাল থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত মহাসড়কের পাশ ধরে এবং বরিশাল, ঝালকাঠি ও পটুয়াখালীসহ বিভাগের ছয় জেলার বিসিক নগরীগুলোকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে জায়গা কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ছোট-বড় উদ্যোক্তারা। একই সঙ্গে বরিশাল, ঝালকাঠি ও পটুয়াখালী জেলার বিসিক নগরে নতুন নতুন শিল্পকারখানার অবকাঠামো নির্মাণ ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে।
বরিশাল বিসিকি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম খান বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধণের মাত্র তিন মাস যেতে না যেতেই পাল্টে যেতে শুরু করেছে বরিশালের অর্থনীতি। শিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছেন উদ্যোক্তারা।
অপরদিকে ভোলার গ্যাস বরিশালে আনা হলে বিসিক আরও সমৃদ্ধ হবে জানিয়ে বিসিক বরিশালের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জালিস মাহমুদ বলেন, সম্প্রতি বিসিকে ৭৪ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পে ৩৭ একর নিচু জমি ভরাট করে ১১০টি প্লট করা হচ্ছে। যার মধ্যে ৩০টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একই ভাবে ঝালকাঠি, পটুয়াখালীসহ আশপাশের জেলাগুলোর বিসিক নগরীর উন্নয়ন কার্যক্রমও এগিয়ে চলছে।
