প্রখ্যাত বাউল ও সুরসম্রাট বিদিত লাল দাসের দশম প্রয়াণ দিবস আজ। তিনি গত শতাব্দীর ষাটের দশকের একজন অন্যতম বেতার গায়ক। তিনি হাছন রাজা, রাধারমণ দত্ত ও গিয়াস উদ্দিনসহ অনেক লোকসংগীতশিল্পীর গানের সুর করেছেন। তার সুরকৃত গানগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ‘মরিলে কান্দিসনে আমার দায়’, ‘সাধের লাউ বানাইল মোরে বৈরাগী’ ও ‘আমি কেমন করে পত্র লিখি রে’। এ ছাড়া তিনি সিরাজউদ্দৌলা, দ্বীপান্তর, তপসী, প্রদীপশিখা, বিসর্জন ও সুরমার বাঁকে বাঁকে নাটকের সংগীত পরিচালনা করেন। বাউল বিদিত লাল দাস ১৯৩৮ সালের ১৫ জুন সিলেটের শেখঘাটে সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার দাদা বঙ্ক বিহারী দাস ছিলেন স্থানীয় জমিদার ও বাবা বিনোদ লাল দাস ছিলেন আসাম সংসদের একজন সংসদ সদস্য। মাত্র সাত বছর বয়সে ওস্তাদ প্রাণেশ দাসের কাছে তার সংগীতের হাতেখড়ি শুরু। পরে ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদের কাছে তিনি সংগীত শিক্ষা গ্রহণ করেন। বিদিত লাল সিলেটের বিলুপ্তপ্রায় লোকসংগীত সংগ্রহ ও প্রচারে নিজেকে নিয়োজিত করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি শিল্পীদের নিয়ে একটি সংগীত দল গঠন করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশনা করে অর্থ উপার্জন করেন। সেই অর্থ তিনি মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যার্থে ব্যয় করেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি নাটক ও নৃত্যনাট্যের সংগীত পরিচালনাও করেন। ১৯৭২ সালে তিনি একটি গানের দল গঠন করেন। লোকসংগীতকে জনপ্রিয় করতে সরকারি-বেসরকারিভাবে তিনি তার দল নিয়ে চীন, সুইডেন, নরওয়ে, ব্যাংকক, ডেনমার্ক, কুয়েত, ইংল্যান্ড ও ভারতে লোকসংগীত পরিবেশন করেন। ২০০৪ সালে তিনি নিজ বাড়ির সামনে প্রতিষ্ঠা করেন লোকসংগীতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘নীলম্ব লোকসংগীতালয়’। তিনি ঢাকাস্থ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে গুণীজন সংবর্ধনা, কলকাতায় ভারতীয় লোকসংবর্ধনা, সিলেট লোকসংগীত পরিষদ পুরস্কার, নজরুল একাডেমি পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার লাভ করেন। ২০১২ সালের ৮ অক্টোবর এই গুণী শিল্পী মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা