নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারের ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেট থেকে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) স্থানান্তরে অপেক্ষমাণ ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ লক্ষ্যে বিএসইসি একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দেয়। তবে সাবেক পরিচালনা পর্ষদের সীমাহীন দুর্নীতি এবং তহবিল তছরুপের কারণে কোম্পানিটিকে কোনোভাবেই দাঁড় করানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষের সহযোগিতাসহ চারটি সুপারিশ বাস্তবায়ন জরুরি বলে মনে করে ইউনাইটেড এয়ারের পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ। সম্প্রতি বিএসইসির কাছে ইউনাইটেড এয়ারের পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
তথ্যমতে, বর্তমানে ইউনাইটেড এয়ারের কাছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) মোট ৩৫৫ কোটি ৩৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫১ টাকা বকেয়া রয়েছে। এ টাকা মওকুফের জন্য ২০২১ সালের অক্টোবরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীকে অনুরোধ জানিয়েছে বিএসইসি। একইসঙ্গে কোম্পানিটির এয়ার অপারেটর সার্টিফিকেট (এওসি) নবায়ন করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
এদিকে বেবিচকের মূল পাওনা বাদে সারচার্জসহ অন্যান্য সব পাওনা মওকুফ করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় বিএসইসি। তবে কোম্পানিটি বন্ধ হওয়ার কারণ, বন্ধ হওয়ার পেছনে কারা জড়িত ও জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে বিএসইসিকে চিঠি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে মন্ত্রণালয় বকেয়ার পুরো টাকা ইউনাইটেড এয়ারকে পরিশোধ করতে হবে বলেও জানিয়েছে। এদিকে বেবিচকও ইউনাইটেড এয়ারের বকেয়া টাকা মওকুফের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে কোম্পানিটির বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে চারটি সুপারিশ বাস্তবায়নে জোর দাবি জানিয়েছে কোম্পানিটির বর্তমান পর্ষদ।
ইউনাইটেড এয়ারের পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের সুপারিশগুলো হলো বেবিচক কর্তৃক সমুদয় বকেয়া মওকুফ করে এয়ারলাইনটি পুনর্জীবিত করার অনুমতি প্রদান। বিমানবন্দরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা বিভিন্ন অকেজো যন্ত্রাংশ, যানবাহন ইত্যাদি প্রাপ্য সর্বোচ্চ দামের বিনিময়ে বিক্রি করে, প্রাপ্ত অর্থ কোম্পানির পরিচালনা ব্যয় নির্বাহের অনুমতি প্রদান করা। কোম্পানির মালিকানাধীন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা উড়োজাহাজগুলো বিক্রির জন্য একটি টেন্ডার কমিটি গঠনপূর্বক তা সত্বর বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সর্বশেষ কোম্পানির রেজিস্টার্ড ও অস্থায়ী অফিসে রক্ষিত মূল্যবান ফাইল ও অন্যান্য অফিস সামগ্রী উদ্ধারে প্রয়োজনীয় আইনগত সহায়তা প্রদান।
এ সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে ইউনাইটেড এয়ারকে পুনর্জীবিত করে উড্ডয়ন করানো সম্ভব হবে বলে মনে করেন বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ।
অন্যদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়য়ের নির্দেশে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের আগের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। একইসঙ্গে কোম্পানিটির আর্থিক অসঙ্গতি খতিয়ে দেখতে ২০১২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষা করা হবে। কোম্পানিটির আগের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে তাহবিল তছরুপের অভিযোগ রয়েছে। তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া আগের পরিচালনা পর্ষদ কারসাজির উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে লোকসানি কোম্পানিতে পরিণত করেছে কিনা, তা খতিয়ে দেখবে কমিশন।
এছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের লিস্টিং রেগুলেশন লঙ্ঘনের কারণে কোম্পানিটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপটেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিএসইসির কাছে নির্দেশনা চেয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)।