এক সঙ্গে অনেক মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এমন রোগের সংখ্যা কম নয়। এর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক ২৫টি রোগের তালিকা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় টিইডি ম্যাগাজিন। আজ থাকছে ২৪তম প্রাণঘাতী রোগ গুটিবসন্ত বিষয়ে
গুটিবসন্ত
বিংশ শতাব্দীতে গুটিবসন্ত রোগের টিকা আবিষ্কার হয়। এরপর নির্মূল হয় ছোঁয়াচে রোগটি। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, এ রোগে আক্রান্ত হয়ে গত শতকে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিশ্বের প্রায় সব অঞ্চলে নানা সময় মহামারি আকার ধারণ করেছিল রোগটি। আশার কথা, গুটিবসন্ত এখন আর দেখা যায় না।
গুটিবসন্তের অভিশাপ থেকে মানব জাতিকে রক্ষা করেন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক ও রোগতত্ত্ববিদ ডোনাল্ড আইন্সলি হেন্ডারসন। তিনি ‘ডিএ হেন্ডারসন’ নামে পরিচিত।
গুটিবসন্ত নির্মূলের সঙ্গে নিউইয়র্ক ও ঢাকাÑএ দুই মহানগরীর দুটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। ১৯৪৭ সালে গুটিবসন্ত নির্মূল হয় নিউইয়র্ক থেকে। একই বছর একজন মেক্সিকান পর্যটকের মাধ্যমে আবারও মহামারি শুরু হয় নিউইয়র্কে। সে বছর ডিএ হেন্ডারসন গুটিবসন্ত দূর করার প্রতিজ্ঞা করেন। আক্রান্ত দেশগুলোর সবাইকে অংশ নিতে উৎসাহ দিতে থাকেন। কীভাবে রোগটি ছড়ায়, কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়, তা জানার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচার চালান। আক্রান্ত দেশগুলোয় ভ্রমণ করেন তিনি। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে একবার ঢাকায় আসেন। ঢাকার এক হাসপাতালে একজন রোগী তার দিকে হাত বাড়িয়ে দেন। মৃত্যুপথযাত্রী সেই রোগীর পুঁজ, গুটিভরা হাত ও বাঁচার আকুতিভরা চোখ তাকে মর্মাহত করে। জীবিতকালে প্রায়ই তিনি বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করেছেন। তার মনে গভীর ক্ষত হয়ে আছে বাংলাদেশের
অভিজ্ঞতা। প্রায়ই বলতেন, হাসপাতালভর্তি রোগী, ওষুধ নেই কোথাও, সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে আছেন রোগীরা, মাছি উড়ছে চারপাশে; কিন্তু কিছুই করতে পারিনি তখন। সে থেকে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। গুটিবসন্তের টিকা আবিষ্কারের পর ১২ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় রোগটি।
১৯৭৫ সালে গুটিবসন্তের ভ্যারিওলা মেজরের শেষ রোগী শনাক্ত করা হয় ভোলায়। ১৯৭৭ সালে ভ্যারিওলা মাইনরের শেষ রোগী পাওয়া যায় সোমালিয়ায়। তাদের সুস্থ করে তোলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মীরা। এর পরের তিন বছর কোনো রোগী না পাওয়ায় রোগটি নির্মূলের ঘোষণা দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
Add Comment