ওয়ান ব্যাংকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি কাট্টলী টেক্সটাইল!

আতাউর রহমান: দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি কাট্টলী টেক্সটাইল লিমিটেডের ৫ কোটি ৪৭ টাকা পুনর্নির্ধারিত মেয়াদি ঋণের দায় সমন্বয়ে চিঠি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ওয়ান ব্যাংকের কাছে কোম্পানির ঋণের দায় সমন্বয়ে আইপিও তহবিল ব্যবহারের বিস্তারিত এবং আইপিও অর্থ উত্তোলনের সময় কোম্পানির ঋণের বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। এ চিঠি জারির তিন কার্যদিবসের মধ্যে তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে।

সম্প্রতি কাট্টলী টেক্সটাইলে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা পুনর্নির্ধারিত মেয়াদি ঋণের দায় সমন্বয়ের বিষয়ে বিএসইসির কাছে আবেদন জানিয়েছে ওয়ান ব্যাংক। আবেদনে কোম্পানিটি ব্যবসায় মুনাফা থাকার পরও ব্যাংকের দায় পরিশোধ না করে ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণখেলাপি হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে ওয়ান ব্যাংক। সেই সঙ্গে দীর্ঘদিন ঋণ পরিশোধ না করার কারণে কোম্পানির সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করতে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে ব্যাংকটি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কাট্টলী টেক্সটাইলকে ব্যাখ্যা ও কোম্পানির অবস্থানসহ সংশ্লিষ্ট তথ্য জমা দিতে বলেছে কমিশন।

কাট্টলী টেক্সটাইলকে দেয়া বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, ওয়ান ব্যাংকের দেয়া চিঠির বিষয়বস্তু উল্লেখ করে কোম্পানিটিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯-এর ধারা ১১ (২)-এর অধীন এ চিঠিটি জারির তিন কার্যদিবসের মধ্যে উল্লিখিত নথিসহ কোম্পানিটির অবস্থান ও ব্যাখ্যা জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উল্লিখিত নথি হচ্ছে, আইপিওর সময় ব্যাংকের দায়-দায়িত্বের বিস্তারিত তথ্য এবং তারিখ অনুযায়ী পরবর্তীকালে নেয়া ব্যবস্থাগুলোর তথ্য। আইপিও তহবিল ব্যবহারের তথ্যও রয়েছে নথিতে।

এদিকে বিএসইসির কাছে ওয়ান ব্যাংকের আবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের দেয়া তথ্য মতে কোম্পানির শেয়ার লেনদেন ২০১৮ সালের ১২ নভেম্বর শুরু হয়েছে। কাট্টলীর বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানির গত ২০২০-২০২১ হিসাববছরে ব্যবসা হয়েছে ৩৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকার। ট্যাক্স দেয়ার পর নিট মুনাফা ছিল ৬ কোটি ১ লাখ টাকা। কিন্তু কাট্টলী টেক্সটাইল ব্যাংকের কাছে কোনো টাকা জমা দিচ্ছে না এবং ব্যাংকের কোনো অতিরিক্ত দায় সমন্বয় করছে না। এতে মনে হচ্ছে, কোম্পানিটি ইচ্ছাকৃত খেলাপি হতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটি ইতোমধ্যে কোম্পানিকে সম্পূর্ণ অতিরিক্ত দায় সমন্বয় করার জন্য জানিয়েছে। সেই সঙ্গে ব্যাংকটি জানিয়েছে, কোম্পানির বকেয়া পুনরুদ্ধারের জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

ব্যাংকটি আরও জানিয়েছে, কাট্টলী টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এমদাদুল হক চৌধুরী এবং চেয়ারম্যান নাসরিন হক উত্তর কাট্টলী, পাহারতলী, চট্টগ্রামে কোম্পানির ১৪ ডেসিমেল জমির একটি অংশ বন্ধক রেখে ২ কোটি ৫ লাখ টাকা বেআইনিভাবে উত্তোলন করেছেন। এরপর কোম্পানির বন্ধকি জমির যে অংশটি দায়বদ্ধতার বিপরীতে জামানত হিসাবে রাখা হয়েছে; তা ওয়ান ব্যাংক অধিগ্রহণ করতে গেলে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সেই টাকার মধ্যে শুধু ১ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে। ব্যাংকের সঙ্গে কোম্পানিটি মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, বাকি অর্থ পরিশোধ করবে। কিন্তু কোম্পানিটি বাকি টাকা এখনও দেয়নি। তাই ব্যাংকের আমানতকারী ও কোম্পানির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য এটি একটি জাতীয় ইস্যু বলে জানিয়েছে ব্যাংক। এ বিষয়ে বিএসইসির হস্তক্ষেপ এবং কোম্পানির বকেয়া সামঞ্জস্য করার জন্য কাট্টলী টেক্সটাইলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে ব্যাংকটি।

এ বিষয়ে জানতে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এমদাদুল হক চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করে দেশের বাইরে আছেন এবং পরে কথা বলবেন জানিয়ে কল কেটে দেন। পরে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দেয়া হলে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তা দেখেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

এর আগে কাট্টলী টেক্সটাইল সমাপ্ত ২০২০-২১ হিসাববছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য গত বছরের নভেম্বরে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। চলতি বছরের ২৭ জুলাই ঘোষণাকৃত লভ্যাংশ বিতরণ সম্পন্ন করেছে বলে কোম্পানিটি ডিএসইকে জানিয়েছে। কিন্তু কোম্পানিটির ঘোষণাকৃত লভ্যাংশ এখনও অনেক বিনিয়োগকারী না পাওয়ায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন তারা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটির কাছে ব্যাখ্যা এবং সংশ্লিষ্ট নথি চেয়ে চিঠি পাঠায় কমিশন।

সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এখনও লভ্যাংশ পাননিÑএমন অভিযোগের ব্যাখ্যা সম্পর্কে বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ২২ আগস্ট অভিযোগকারীদের একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি ২০২০-২১ হিসাববছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কিন্তু এখনও অনেক সাধারণ বিনিয়োগকারী ঘোষণা করা লভ্যাংশ পাননি। তাই এ বিষয়ে কোম্পানিটিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্সের অধীন চিঠি ইস্যু করার তিন কার্যদিবসের মধ্যে চিঠিতে উত্থাপিত সমস্যা সম্পর্কিত উল্লিখিত সহায়ক কাগজপত্র বা নথিপত্রসহ কোম্পানির অবস্থান ব্যাখ্যা করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

চিঠিতে উল্লিখিত যে কাগজপত্র বা নথিপত্র তলব করা হয়েছে সেগুলো হলো তালিকাভুক্তির পর থেকে লভ্যাংশ কমপ্লায়েন্স রিপোর্টের কপি। কোম্পানি প্রদত্ত মোট লভ্যাংশ এবং অবশিষ্ট অর্থের বিস্তারিত তথ্য, সঙ্গে ব্যাংক স্টেটমেন্টের অনুলিপি। এছাড়া মোট লভ্যাংশ বিতরণের জন্য বিস্তারিত ব্যাংক ট্রান্সফারের অনুলিপি। পাশাপাশি এন্টারটেইনমেন্ট অনুযায়ী, গত ২ বছরের বিও হিসাবভিত্তিক লভ্যাংশ বিতরণ এবং অবণ্টিত লভ্যাংশের হিসাব। একই সঙ্গে অন্য কোনো প্রয়োজনীয় নথি জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০