নিজস্ব প্রতিবেদক: কভিড-১৯ মহামারির জন্য এবারও আয়কর মেলা হচ্ছে না। কর অঞ্চলে মেলার পরিবেশে দেয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ করসেবা। সেজন্য আজ থেকে শুরু হচ্ছে করসেবা মাস, চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। মিনি করমেলায় উৎসবমুখর পরিবেশে করদাতারা রিটার্ন দাখিল, ই-টিআইএন গ্রহণসহ সব সেবা পাবেন। ৩০ নভেম্বর পালন করা হবে আয়কর দিবস। করসেবা মাস ও আয়কর দিবস উদ্যাপনে কর অঞ্চলগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে এনবিআর।
গতকাল কয়েকটি কর অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, মিনি করমেলায় যেসব সেবা দেয়া হবে, তা হলোÑ২০২২-২৩ করবর্ষের রিটার্ন গ্রহণ; প্রাপ্তিস্বীকারপত্র প্রদান; ই-পেমেন্ট (এ-চালান ও অন্যান্য); ই-রিটার্ন দাখিল-সংক্রান্ত পরামর্শ ও তথ্য প্রদান; ই-টিআইএন নিবন্ধন; আয়কর রিটার্ন ফর্ম, চালান, তথ্য সহায়িকা ও সিটিজেন চার্টার সরবরাহ; আয়কর-সম্পর্কিত পরামর্শ ও তথ্য প্রদান।
ঢাকার কয়েকটি কর অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, করসেবা দানে প্রতিটি কর অঞ্চলে আলাদা বুথ স্থাপন করা হয়েছে। বুথ আলাদা করে সাজানো হয়েছে। রিটার্ন গ্রহণ, ই-টিআইএন সেবা, ই-টিআইএন সেবাসহ বিভিন্ন সেবার জন্য আলাদা বুথ করা হয়েছে। বুথে করের টাকায় হওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প দিয়ে সাজানো হয়েছে। সেøাগান-সংবলিত পোস্টারে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও এনবিআর চেয়ারম্যানের ছবি শোভা যাচ্ছে। কোথায় কোন সেবা পাওয়া যাবে, তার দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোনো কোনো কর অঞ্চলে করদাতাদের আনন্দ দিতে সেলফি স্ট্যান্ড স্থাপন করা হয়েছে।
ঢাকা ও ঢাকার বাইরের একাধিক কর কমিশনার জানিয়েছেন, এনবিআরের নির্দেশনা অনুযায়ী আয়োজন করা হয়েছে। কোথাও কর অফিসের নিচে, আবার কোথাও অফিসের খোলা জায়গায় বুথ স্থাপন করা হয়েছে। কর দিবসের বিভিন্ন সেøাগান দিয়ে সাজানো হয়েছে। কোন বুথে কোন সেবা পাবেন, তার নির্দেশনা রাখা হয়েছে। কর কমিশনারের তত্ত্বাবধানে সার্বক্ষণিকমনিটরিং করা হবে, যাতে করদাতারা সর্বোচ্চ সেবা পেতে পারেন।
কমিশনাররা আরও জানিয়েছেন, সার্কেল অনুসারে বুথ স্থাপন করা হয়েছে। কোনো করদাতা ভুলে অন্য সার্কেলের বুথে রিটার্ন দাখিল করলেও সমস্যা হবে না। ই-টিআইএন সেবা দেয়া হবে। ই-রিটার্ন সেবা বুথ রাখা হয়েছে। কোনো করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করতে চাইলে এ বুথ থেকে সহযোগিতা করা হবে। মাসব্যাপী করসেবা মাস উপলক্ষে কর অঞ্চলে মিনি করমেলার মতোই সব আয়োজন করা হয়েছে। রিটার্ন-সংক্রান্ত সব ফরম বিনা খরচে দেয়া হচ্ছে। এ চালানে করদানে সেবা দেয়া হবে। সকাল ৮টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত সেবা দেয়া হবে। তবে করদাতা থাকলে সময়ের পরেও সেবা দেয়া হবে। করসেবা মাস উপলক্ষে কর অঞ্চলের ফেসবুক পেজসহ বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
এনবিআরের আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আয়কর রাজস্ব আহরণের প্রধান খাতই নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠারও কার্যকর মাধ্যম। আয়করের মাধ্যমে রাজস্বের বৃহত্তম অংশ আহরণের ক্ষেত্রে সব দেশ সচেতন প্রয়াস চালায়। কর আহরণ কার্যক্রম বিশ্বের সব দেশে একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। আয়কর সম্পর্কে ভীতি দূর, কর সচেতনতা বৃদ্ধি ও আরও নিবিড় করসেবা দেয়ার জন্য আয়কর বিভাগ ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো নভেম্বরকে করসেবা মাস ঘোষণা করে।
বাঙালি জাতির উৎসবমুখর চিরায়ত সামাজিক জীবনের সঙ্গে আয়কর আহরণের মতো জটিল বিষয়কে যুক্ত করা হলে করদাতারা উৎসবের আমেজে আয়কর দেয়ার সুযোগ পাবেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। রাজস্ব আহরণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়বে। তাই করসেবা মাসে প্রতিটি কর অঞ্চলে মেলার আদলে করসেবা দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিদ্যমান বৈশ্বিক মাহামারি পরিস্থিতিতে আয়কর মেলা আয়োজনের পরিবর্তে সব কর অঞ্চলে বিগত বছরের মতো মেলার পরিবেশে ১ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন গ্রহণের জন্য সেবা দেয়া হবে। কর সংস্কৃতি বিকাশ, কর সচেতনতা বৃদ্ধি, করদাতাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের লক্ষ্যে নভেম্বর মাসব্যাপী করসেবা দেয়ার কর্যক্রম নেয়া হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আজ সকাল ১০টায় এনবিআর সম্মেলন কক্ষে করসেবা মাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধন করবেন। করসেবা মাস উদ্যাপন উপলক্ষে রেডিও, টেলিভিশন, প্রিন্ট মিডিয়া ও অনলাইনভিত্তিক মিডিয়ায় প্রচার কার্যক্রমের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। আয়কর দিতে উৎসাহ ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে টেলিভিশনে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে, যাতে এনবিআরের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা অংশ নেবেন। এ মাস উপলক্ষে একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া আয়কর-সংক্রান্ত একটি থিম সং, জনসচেতনতামূলক নাটিকা ও সংশ্লিষ্ট একটি টিভি স্পট প্রস্তুতপূর্বক বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আয়কর বিষয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ পোস্টার ও উৎসাহব্যঞ্জক সেøাগান-সংবলিত স্টিকার, বেলুন, বর্ণিল ফেস্টুন ও ব্যানার বিভিন্ন কর অঞ্চলে স্থাপন করা হবে।
