বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বিজ্ঞানী, লেখক এবং শিক্ষাবিদ ড. কুদরাত-ই-খুদা। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চাকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। মুহম্মদ কুদরাত-ই-খুদা ১৯০০ সালের ১ ডিসেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার মাড়গ্রাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে তিনি ১৯২৫ সালে রসায়নে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে এমএসসি পাস করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি লাভ করেন। ১৯২৯ সালে রসায়নে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করেন। মুহম্মদ কুদরাত-ই-খুদা ১৯৩১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে রসায়নের প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ইসলামিয়া কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ফেলো এবং সিনেট সদস্য ছিলেন। ১৯৪৭ সালে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমানে বাংলাদেশ) চলে আসেন এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকায় বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ বা সায়েন্স ল্যাবরেটরিজ প্রতিষ্ঠা করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পরে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠনের প্রয়োজনীতা দেখা দেয়। সে জন্য কুদরাত-এ-খুদার নেতৃত্বে শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালের মে মাসে তিনি ৩৬ অধ্যায়বিশিষ্ট ৪৩০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। তার নাম অনুসারে পরবর্তীকালে রিপোর্টটির নাম রাখা হয় ‘ড. কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট’। কুদরাত-এ-খুদার গবেষণাক্ষেত্র ছিল জৈব রসায়ন। পরে তার গবেষণার বিষয়বস্তু বনৌষধি, গাছগাছড়ার গুণাগুণ, পাট লবণ, কাঠকয়লা, মৃত্তিকা ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ। কুদরাত-এ-খুদা ও তার সহকর্মীরা ১৮টি বৈজ্ঞানিক প্যাটেন্ট আবিষ্কার করেন। এর মধ্যে পাট ও পাটকাঠি থেকে রেয়ন, পাটকাঠি থেকে কাগজ এবং রস ও গুড় থেকে মন্ট ভিনেগার উল্লেখযোগ্য। তিনি বাংলা ভাষায় শতাধিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক গ্রন্থ ও প্রবন্ধ রচনা করেন। পাকিস্তান সরকার তাকে ‘তমঘা-ই-পাকিস্তান’ এবং ‘সিতারা-ই-ইমতিয়াজ’ খেতাব প্রদান করে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘একুশে পদক’ এবং ‘স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার’-এ ভূষিত করে। বিজ্ঞানে অবদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কুদরাত-এ-খুদাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। ১৯৭৭ সালের ৩ নভেম্বর এই মহান দেশপ্রেমিক বিজ্ঞানী মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা